বন চালতা গাছের ভেষজ গুণাগুণ

এশিয়া মহাদেশের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল সমূহে এই গণের (genus) গাছগুলি জন্মে, তন্মধ্যে গোটা কুড়ি গাছ ভারতে পাওয়া যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, সিকিম, দাক্ষিণাত্যের কোথাও কোথাও এই গাছটি অযত্নসম্ভূত হয়েই জন্মে। যদিও চালতা গাছের পাতা একক পত্র আর বন চালতার পাতা যৌগিক পত্র, তথাপি উপপত্রগুলির এক-একটি দেখতে অনেকটা চালতা পাতারই মতো। তার উপর এটি অযত্নসম্ভূত এবং বনে-বাদাড়ে জন্মে। অতএব নাম হলো বন চালতা।

বন চালতা-এর পরিচয়:

বহু বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পশ্চিমবঙ্গ, হাওড়া, হুগলী, ২৪-পরগণার যত্র-তত্র এটিকে দেখা যায়। সাধারণতঃ ৫। ৬ ফুট উঁচু হয়। ৩–৫টি উপপত্র নিয়ে এক একটি পাতা। উপপত্রগুলি ১০-৩০ সে.মি. লম্বা, চওড়ায় ৩-৮ সে.মি., খসখসে, আয়তাকার এবং সূচাগ্র বিশিষ্ট। পাতার উপরিভাগ ঢেউ খেলানো, কিনারা খাঁজ-কাটা-কাটা। ফুল সবুজাভ সাদা অথবা খুব হালকা হলদে রঙের, পাঁচটি পাপড়ি বিশিষ্ট। ফল ছোট আকারের, প্রায় গোলাকার ও ৮ মি.মি. ব্যাসযুক্ত, কাঁচায় গাঢ় ধূসর বর্ণের, পাকলে কালো রঙের হয়ে যায়। ফলগুলি গুচ্ছাকারে থাকে, পাকলে খাওয়া যায়। ফলের ভেতর ৩-৬টি ছোট ছোট বীজ আছে। ইংরেজীতে এই ফলকে বেরী বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Leea crispa Linn., ফ্যামিলী Vitaceae.

ভেষজ ব্যবহার

পাতা ক্ষতনাশক ও বেদনা নিবারক। মূল গিনি কৃমি (guinea worm) সারাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও অন্যান্য ব্যবহার আছে-

১. ঘায়ে: কাটা ঘা পচে গেছে, সারছে না, প্রত্যেক দিনই পুঁজ জমছে, পরিষ্কার করলে দগদগে হয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে খেতে হবে এবং সেইসঙ্গে বন চালতার পাতার রস দিয়ে ঘি পাক করে লাগালে দু’চারদিনে ঘা শুকিয়ে যায়।

তৈরির নিয়ম: আন্দাজ ৫০ গ্রাম ঘি ছোট একটা কড়াতে নিয়ে হালকা আঁচে বা স্টোভে গরম করবেন। গরম করতে করতে উপরের ফেনাটা চলে গেলে কড়াটা নামিয়ে রাখুন এবং ঠাণ্ডা হতে দিন। এদিকে বন চালতার পাতার রস ২৫ গ্রাম ও ঠাণ্ডা জল ২৫ গ্রাম একসঙ্গে নিয়ে ঐ কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়া ঘিয়ে মিশিয়ে পুনরায় আঁচে বসান। জল ও রস নিঃশেষিত হয়ে কেবল ঘি যখন থাকবে, তখন কড়াই নামাতে হবে। মাঝে মাঝে হাতা দিয়ে দেখতে হবে কড়ার তলায় শক্ত মত সিটে পড়ছে কিনা, সিটেগুলি যখন নরম তুলতুল করবে, অথচ হাতে লেপটে যাবে না, তখনই বোঝা যাবে ঘি যথাযথ পাক হয়ে গেছে। এবার ঐ ঘি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে শিশিতে রাখুন। প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারবেন।

আরো পড়ুন:  কালা ডাঁটি ঢেকিয়া গ্রীষ্মমন্ডলী দেশের ভেষজ প্রজাতি

২. হাজায়: গ্রাম বাংলায় এর সমস্যায় প্রায় মেয়েদেরকে পড়তে হয়। তখন এই ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া কচি ডগা বেটে লাগালেও কাজ হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২০০-২০১।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!