আমলকি গাছ বা আমলকী (বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica) ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের সহবাসী, রোমশ বিহীন বা রোমশ পর্ণমোচী বৃক্ষ। এরা প্রায় ২০ মিটার উঁচু, বাকল ধূসর, মসৃণ শাখা তামাটে রোমশ। [১] এটি বাংলাদেশ ও ভারতে যথেষ্ট পাওয়া যায়। আমলকী হচ্ছে ত্রিফলার একটি। আমলকি সম্পর্কে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
আমলকি ঔষধি গুণ সম্পন্ন সহজলভ্য ফল
এখানে আমলকির বেশ কিছু ভেষজ গুনাগুণ আলোচনা করা হলো:
১. অম্লরোগ (Acidity): একে আয়ুর্বেদের ভাষায় বলা হয় অম্ল রোগ। এ রোগে সহযোগীরুপে আত্মপ্রকাশ করে পিত্তবিকৃতি। সে ক্ষেত্রে শুষ্ক আমলকী ৩ থেকে ৪ গ্রাম এক গ্লাস গরম জলে পূর্ব দিন রাত্রে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভাত খাওয়ার সময় সাধারণ জলের পরিবর্তে এই জল খেতে হয়। তবে এই আমলকী কোনো ধাতুপাত্রে ভিজানো উচিত নয়। এর দ্বারা সেই পিত্তবিকৃতি নষ্ট হয়; এটি বহু, পরীক্ষিত।
২. যাঁরা প্রস্রাব সংক্রান্ত কোনো রোগে আক্রান্ত (এমন কি ডায়াবেটিস diabetes পর্যন্ত) তাঁরা ৩ থেকে ৪ গ্রাম আমলকী কোনো না কোনো আকারে সেবন করবেন। কাঁচা রস করেই হোক আর মুখশুদ্ধি হিসেবেই হোক।
৩. বিসর্প জ্বর: কোনো প্রকার Sepsis- এর জ্বর; কিছুতেই ছাড়ছে না সে ক্ষেত্রে আমলকীর রসে অল্প ঘি মিশিয়ে খেতে হবে। এই পদ্ধতি বলা হয়েছে চরক সংহিতায়।
৪. হিক্কায়: আমলকীর রস আন্দাজ ১ চামচ অথবা শুকনো আমলকী ভিজানো জলে ১০ থেকে ২০ ফোঁটা মধু ও ২ থেকে ১ গ্রেণ পিপুলের গুড়া মিশিয়ে খাওয়ার কথা বলা আছে চরকীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে।
৫. বমন বা বমি: বমি বন্ধ হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে শকনো আমলকী (৩ থেকে ৪ গ্রাম) ১ কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টা দুই বাদে ছেঁকে নিয়ে সেই জলে শ্বেত চন্দন ঘষা (আধ চামচ আন্দাজ) ও একটু, চিনি মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেতে দিতে হয়।
৬. শ্বেতপ্রদর (Leucorrhoea): যে রোগটি আজকাল মেয়েদের মধ্যে কিশোর থেকেই প্রায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়, এ রোগে একটা (বীজ সমেত) অথবা ছোট হলে দুটো কাঁচা আমলকী রস করে একটু, চিনি বা মধু মিশিয়ে খেতে হবে। অথবা আমলকী চূর্ণ এক বা দেড় গ্রাম আন্দাজ মধু দিয়ে খেলেও কাজ হবে না তা নয়।
৭. পিত্তশলে (Biliary Colic): আমলকীর রসে (১বা দেড় চামচ) অল্প চিনি মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
৮. শীতপিত্ত: যাকে আমরা চলতি কথায় আমবাত বলি (যদিও প্রকৃত আমবাত পৃথক রোগ), এ ক্ষেত্রে আমলকীর সিকি ভাগ নিমপাতা মিশিয়ে (দুটোই গুড়ো) ১২ গ্রেণ (এক গ্রামের একটু, কম) মাত্রায় প্রাতে খালিপেটে খেতে হয়। কিছুদিন ব্যবহার করলে এ রোগ প্রশমিত হবেই।
৯. দৃষ্টি ক্ষীণতায়: অল্প বয়সে যাঁদের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে, যার জন্য কিছুদিন অন্তর চশমার শক্তি বাড়াতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা নিয়মিত বেশ কিছুদিন এই আমলকীর রস ২ থেকে ৩ চামচ এক চামচ মধু মিশিয়ে সকালের দিকে খেয়ে দেখুন। তবে পুরাতন অজীর্ণ দোষে প্রথম প্রথম কোনো কোনো ক্ষেত্রে অম্বল বা গলা ও বুকজ্বালা দেখা দেয় সে সব ক্ষেত্রে প্রথমে মাত্রা কম করে খেয়ে অভ্যাস করতে হয়।
১০. অনিদ্রায়: কাঁচা বা শুকনো আমলকী কাঁচা দুধে বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। এর সঙ্গে অনেকে শতমূলীর রস মিশিয়ে ব্যবহার করেন।
১১. আমলকী ও থানকুনি ( Centella asiatica) এক সঙ্গে বেটে চন্দনের মতো পেটে লাগালে আমজনিত কামড়ানি কমে যায়।
১২. তলপেটে বায়ু: এটা হলে আমলকী বেটে (চন্দনের মতো) নাভির নীচে প্রলেপ দিলে সুন্দর কাজ হয় এবং বায়ুর প্রশমন হয়। অনেক সময় দেখা যায়, যে সব ক্ষেত্রে প্রস্রাব আটকে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।
১৩. চোখ উঠলে: ছোট ২ টুকরো আমলকী গরম জলে ধুয়ে নিয়ে ৪ থেকে ৫ চামচ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে ছেঁকে নিয়ে ৩ থেকে ৪ ফোঁটা চোখে দিতে হবে। এইভাবে ২ থেকে ৩ দিন চোখে দিলে চোখ ওঠা সেরে যাবে।[২]
রাসায়নিক গঠন:
(a) Vitamin viz, ascorbic acid. (b) Aminoacid viz, glycine, (c) Tannin. (d) Polyphenolic compounds iz. corilagin, ellagic acid, terchebin, gallic acid, chebulic acid, chebulagic acid, chebulinic acid. (e) Fixed oil. (f) Lipids viz, phosphatides. (g) Essential oil.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৫-৪৭৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১২৭-১২৯।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।