হরিতকী গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ ও ভারতে। বাকল গাঢ় বাদামি। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। ঔষধি গুণে সম্পুন্ন হরিতকী ত্রিফলার মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia chebula ও পরিবার Combretaceae.
বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে:
১. অর্শরোগ: হরিতকীর চূর্ণ ৩ থেকে ৫ গ্রাম (কোষ্ঠকাঠিন্যের অবস্থাভেদে) মাত্রায় ঘোলের সঙ্গে একটু, সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে খেলে উপশম হয়ে থাকে।
২. মৃদু বিরেচক হিসেবে একটু, সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে এটি সবদাই ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ঘিয়ে ভাজা হরিতকী চূর্ণ করে বৈদ্যরা ব্যবহার করেন।
৩. জাঙ্গী হরিতকী ঘিয়ে ভেজে গুড়ো করে মৃদু, বিরেচক হিসাবে ব্যবহারে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। মাত্র দেড় গ্রাম থেকে ৩ গ্রাম।
৪. শোথে: হরীতকীর চূর্ণ গুলঞ্চের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যে কোনো প্রকার শোথে উপকার পাওয়া যায়।
৫. রক্তার্শে: আঁখ, কুশার বা ইক্ষুগুড়ের সঙ্গে হরিতকী চূর্ণ মিশিয়ে খেলে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়।
৬. পিত্তশূলে: অল্প গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে এই চূর্ণ খেতে হয়।
৭. চর্মরোগে: রক্ত বা পিত্ত বিকৃত হয়ে এই রোগ হলে ১ চা চামচ নিসিন্দা পাতার রসের সঙ্গে এই চূর্ণ (আন্দাজ ৩ গ্রাম) খেলে বিকৃতি নষ্ট হয়।
৮. পিত্ত পাথুরীতে: হরিতকী ও গোক্ষর চূর্ণ একসঙ্গে কুলখ কলাই ভিজানো জল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা বহুদিন থেকে চলে আসছে; তবে এটাও ঠিক দীর্ঘদিনের হলে দূরীভূত করা সম্ভব হয় না।
৯. স্বরভঙ্গে: মুথা (Cyperus rotundus) ও হরিতকী চূর্ণ মধুর সঙ্গে চেটে খেলে স্বর স্বাভাবিক হয়। অথবা যোয়ানের সঙ্গে খেলে একই কাজ হয়।
১০. আঙুল হারায় : হরীতকী লোহার পাত্রে জলসহ ঘষে অল্প গরম করে বারে বারে প্রলেপ দিলে ২ থেকে ৩ দিনেই উপশম হয়। শুধু তাই নয়, এটাতে হাজাও সারে।
১১. হাঁপানি: এর মোটা গুড়ো সিগারেটের পাইপে ভরে কিংবা বিড়ির মতো পাকিয়ে আগুন ধরিয়ে টানলে উপশম হয়।
১২. দেহের কোনো স্থানে পুড়ে বা ছড়ে গেলে হরিতকী শিলে ঘষে রেড়ির তৈলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে তাড়াতাড়ি আরোগ্য হয়।
১৩. হরীতকীর একটি টুকরো জলে ভিজিয়ে সেই জলে চোখ ধুলে চোখ উঠা ইত্যাদি সাধারণ চোখের রোগে উপকার হয়।
১৪. ঘা: যে কোনো প্রকার ঘায়ে হরিতকী পোড়ার ছাই মাখন মিশিয়ে লাগালে ঘা সেরে যায়।
নিষেধ:- গর্ভিণী, দুর্বল, ক্লান্ত ও রুক্ষ প্রকৃতির লোকের হরিতকী ব্যবহার উচিত নয়।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Tannins. (b) Polyphenolic compounds viz, chebulinic acid chebulagic acid, gallic acid, corilagin, number of unidentified phenolic constituents, (c) Anthraquinone dye stuff.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১ আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১২৩-১২৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।