জংলি কুল বাংলাদেশের বিপন্ন অপ্রচলিত ফল

অপ্রচলিত ফল

জংলি কুল

বৈজ্ঞানিক নাম: Ziziphus glabrata Heyne ex Roth, Noy. Pl. Sp.: 159 (1821). সমনাম: Ziziphus trinervia Roxb. (1824). ইংরেজি নাম: Jagged Jujube. স্থানীয় নাম: জঙলি-কুল। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Rosales পরিবার: Rhamnaceae গণ: Ziziphus প্রজাতির নাম: Ziziphus glabrata

ভূমিকা: জংলি কুল (বৈজ্ঞানিক নাম: Ziziphus glabrata, ইংরেজি: Indian Jujube) হচ্ছে রামনাসি পরিবারের জিজিফাস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি। এই প্রজাতিটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ হয়ে থাকে।

বর্ণনা: জংলি কুল বৃক্ষ সর্বোচ্চ ৮ মিটার উঁচু, শাখাহীন, শাখাপ্রশাখা মসৃণ। পত্র ১.৮-১০.৩ x ১.৩-৫.২ সেমি, একান্তর, বল্লমাকার বা ডিম্বাকার-আয়তাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মা, পাদদেশ গোলাকার, সূক্ষ্ম ভেঁতা দর, মসৃণ, চর্মবৎ, চকচকে, গাঢ় সবুজ, পাদদেশ ৩-শিরাল, পত্রবৃন্ত ৩-৯ মিমি লম্বা, উপপত্র সূত্রাকার, আশুপাতী।

জংলি কুলের পুষ্পমঞ্জরী কাক্ষিক গুচ্ছাকার, মঞ্জরীদন্ড ২-৩ মিমি লম্বা। পুষ্প আড়াআড়ি ৫-৬ মিমি, হলুদাভ-সবুজ, সামান্য অতিরোমশ, পুষ্পবৃন্ত ৪-৫ মিমি লম্বা। বৃতি খন্ড ২-৩ মিমি লম্বা, ভিতরে মসৃণ। পাপড়ি বিত্রিকোণাকার, সংবর্ত প্রান্তবিশিষ্ট, ১-২ মিমি লম্বা, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র বা গোলাকার।

পুংকেশর প্রায় ৩ মিমি লম্বা, পুংদন্ড চ্যাপ্টা। চাকতি অস্পষ্টভাবে ১০ খন্ডক, মসৃণ, রসালো। গর্ভাশয় ২-কোষী, মসৃণ, গর্ভদণ্ড ২, মধ্যভাগে যুক্ত, বাঁকা। ফল ডিম্বাকার, প্রস্থ ১০-১১ মিমি, ১-২ কোষী মিষ্টি জেলীসদৃশ আঁশবিশিষ্ট। বীজ কোমল, বাদামী। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: পাহাড়ের পাদদেশ বা পাহাড়ের ঢাল। বীজ দ্বারা এর বংশ বিস্তার লাভ করে।

বিস্তৃতি: ভারত এবং ভুটান। বাংলাদেশে এটি কক্সবাজার জেলা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে (Sinclair, 1955).

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ফল কোমলতা আনয়নকারী এবং বক্ষরোগের ঔষধ বহনকারী গুণের জন্য খুবই জনপ্রিয় । পরিপক্ক ফল টক কিন্তু শুষ্কটি বরং মিষ্টি। ফলের শাঁস মিষ্টি, সুগন্ধি, ময়দার ন্যায় এবং সাদা। জনগণ পাকা ফল খায়। সূর্যে শুকানো ফল সংরক্ষণ এবং ভিন্ন। মৌসুমে খাওয়া হয়। পাকা ফল ফুটিয়ে বা অল্প তাপে সিদ্ধ। করে বা উত্তাপে শক্ত করে জোয়ার বা ভাতের সাথেও খাওয়া হয়। পাতার ফুটানো ক্বাথ রক্ত শোধনে প্রয়োগ করা হয়। জননঘটিত রোগেও এটি ব্যবহৃত হয় (Bhandari and Bhansali, 1990),

আরো পড়ুন:  জংলি বরই দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলের একটি ফল

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জংলী কুল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এটির সংকটের কারণ দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি বিপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জংলী কুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ১৯৫৫ সালে Sinclair এর পর কোন সংগ্রহ পাওয়া যায়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের জন্য পুনঃচিহ্নিতকরণ এবং এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা উচিৎ।[১]

তথ্যসূত্র:

১.  এম. এ. হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০-১১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Yercaud-elango

Leave a Comment

error: Content is protected !!