ব্রাক্ষ্মী শাক বাংলাদের প্রচলিত ভেষজ প্রজাতি

ব্রাক্ষ্মী

বৈজ্ঞানিক নাম: Bacopa monnieri (L.) Pennell, Proc. Acad. Nat. Sci. Philadelphia 98: 94 (1946). সমনাম: Lysimachia monnieri L. (1756), Gratiola monnieri L. (1759), Herpestis monnieri Benth. (1835), Bacopa monnieria (L.) Wettst. (1891). ইংরেজি নাম : Dwarf Bacopa, Herb of Grace, Indian Pennywort. স্থানীয় নাম: ব্রাক্ষ্মী, ব্রাক্ষ্মী শাক, দুধকামিনি।

ভূমিকা: ব্রাক্ষ্মী শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Bacopa monnieri ) অযত্নে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি। এটি শাক হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশ, ভারতের অনেকে এর ভেষজ গুণ জানে বলেই এই প্রজাতি এখনও দেখা যায়।

ব্রাক্ষ্মী শাক-এর বিবরণ:

বর্ষজীবী, রোমহীন বীরুৎ। কান্ড লতালো, পর্ব থেকে মূল উৎপন্ন, প্রচুর শাখান্বিত। পত্র অবৃন্তক, ০.৮-২.০ X ০.৩-০.৬ সেমি, আয়তাকার-বল্লমাকার, গোড়া সরু, শীর্ষ স্থূলাগ্র গোলাকার, উপরিভাগ দাগযুক্ত, স্থূল, উভয় গাত্র রোমহীন। পুষ্প পত্র কক্ষে একল, বৃন্ত ১-২ সেমি লম্বা, রোমহীন, মঞ্জরীপত্রিকা ২টি, তুরপুনাকার, ৩ মিমি পর্যন্ত লম্বা। বৃত্যংশ ৫টি, গোড়া পর্যন্ত খন্ডিত, বাহিরেরটি প্রশস্ত ডিম্বাকার, ৬-৭ x ৩-৪ মিমি, শীর্ষ অর্ধসূক্ষ্মাগ্র, অভ্যন্তরীণটি রেখাকার-বল্লমাকার, প্রায় ৫.০ x১.৫ মিমি, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র। পাপড়ি সাদা, রক্ত-বেগুনি বা নীল, নল প্রশস্ত ঘন্টাকার, ৫৬ মিমি লম্বা, রোমহীন, উপরের ওষ্ঠ ২-খন্ডিত, খন্ডক আয়তাকার-চমসাকার, অর্ধসম, ৫-৮ x ৩-৪ মিমি, মধ্য খন্ড পার্শ্বীয়টি থেকে লম্বা।

পুংকেশর পাপড়ি নলের শীর্ষে অন্তর্ভূক্ত, বহির্মুখী, পুংদন্ড রোমহীন । গর্ভদন্ড রোমহীন, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার যা কেন্দ্রীয় অগভীর গর্তযুক্ত। ক্যাপসিউল সরু, ডিম্বাকার, প্রায় ৩.৫ x ২.০ মিমি, স্থায়ী বৃতি দ্বারা আবৃত, শীর্ষ অর্ধ দীর্ঘা, রোমহীন। বীজ হলুদাভ-বাদামী, ডিম্বাকার-আয়তাকার, ০.৫ মিমি লম্বা, এক প্রান্ত কর্তিতা, অনুদৈর্ঘ্য খাঁজযুক্ত।

আরো পড়ুন: ব্রাক্ষ্মী লতা গ্রাম বাংলার পরিচিত ও ভেষজ গুণে ভরা শাক

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৬৪ (Lewis et al., 1962).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

জলযুক্ত এলাকা, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, পুকুর পাড় এবং নিম্নভূমি। যে স্থানে রোদের আলো কম পড়ে সেখানে এই লতা প্রচুর জন্মে। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমি সবজির ক্ষেতে আগাছা হিসাবে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ মে-ডিসেম্বর মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা এবং কান্ডের শাখা কলম দ্বারা।

আরো পড়ুন:  ভুইনোরা দক্ষিণ এশিয়ার বনজ বিরুৎ

বিস্তৃতি: মহাদেশ এবং উপমহাদেশে ব্যাপক বিস্তৃত। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

উদ্ভিদটি পানির সাথে সিদ্ধ করে নির্যাস চর্মরোগ নির্মূলে ব্যবহার করা হয়। উদ্ভিদ মাথা ব্যথা, কাকড়াজনিত হুল ফোটানো, সাপের কামড়, রক্ত শূন্যতা, কুষ্ঠ রোগ এবং যকৃতের অসুস্থতায় ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্ভেদিক ভেষজ পদ্ধতিতে, উদ্ভিদ হাজার বছর যাবৎ স্মৃতিশক্তি বর্ধক এবং পুনরুজ্জীবিত কার্যকারিতায় ব্যবহৃত হয়। ইহা মানসিক তীক্ষ্মতা উন্নতি করে এবং শিথিলতার সাথে জড়িত যা শারীরতাত্তিক পদ্ধতিতে সহায়তা করে। ইহা হালকা বেদনা নাশক এবং উত্তেজনা রোধী গুণসম্পন্ন (Yusuf et al., 1994)।

ব্রাক্ষ্মী শাক-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

শ্রীলংকায় উদ্ভিদাংশ পানির সাথে সিদ্ধ করে বা Maranta rundinacea এর টিউবার মূলের সাথে সিদ্ধ করে এবং নি:সৃত নির্যাস রেচক ঔষধ (Dassanayake and Fosberg, 1981)। ভারতে এর পাতা ঘি এর সাথে ভাজি করে খাওয়া হয়।

ব্রাক্ষ্মী শাক-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ব্রাক্ষ্মী লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ব্রাক্ষ্মী লতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য আবাদ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১০ম, পৃষ্ঠা ২৩৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vengolis

1 thought on “ব্রাক্ষ্মী শাক বাংলাদের প্রচলিত ভেষজ প্রজাতি”

Leave a Comment

error: Content is protected !!