বর্ণনা: পুনর্নবা নিকটাগনিয়াসি পরিবারের বোয়েরহাভিয়া গণের বহুবর্ষজীবী লতানো বা আরোহী বীরুৎ।[১] এদের পাতা ও ডাঁটা লালচে, এমনকি ফলও লালচে হয়। ঘন শাখাযুক্ত লতানো গাছ, শিকড় মোটা, মূল শিকড় বেশ শক্ত। লতাটির প্রত্যেক শাখাসন্ধিতে জোড়া জোড়া ডিম্বাকৃতি পাতা হয়।[২]
এরা ঊর্ধ্বগ, ০.৪-২.০ মিটার লম্বা, অণুরোমশ থেকে মসৃণবৎ, ক্লাবআকৃতির বা বৃন্তক গ্রন্থি এবং গ্রন্থিল রোমবিশিষ্ট। পাতা সরল, প্রতিমুখ বা প্রায় প্রতিমুখ, পাদদেশ স্থুলাগ্র, হৃৎপিণ্ডাকার বা খাতাগ্র, অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ বা স্থূলাগ্র, নিম্নপৃষ্ঠ অধিকাংশক্ষেত্রে সাদা, কখনও লাল বর্ণের কিনারাবিশিষ্ট গ্রন্থি বিদ্যমান, পত্রবৃন্ত ১.০-৩.৫ সেমি লম্বা।[১]
এদের পুষ্প ৫-১০টি পুষ্পবিশিষ্ট ছত্রমঞ্জরীবৎ গুচ্ছে, পুষ্পবৃন্ত ০.৩-২.০ মিমি লম্বা, পুষ্পপুট ঘন্টাকার, ৩-৪ মিমি লম্বা, মাঝখানে একটি স্পষ্ট সংকুচন বর্তমান, সাদা, লাল, গোলাপী বা বেগুনি বর্ণের। পুংকেশর ২-৩টি, বহির্গামী। গর্ভাশয় তির্যক, বৃন্তক, গর্ভমুণ্ড ছত্রাকার। এদের ফল ক্ষুদ্র, ৫টি উত্তোলিত শিরাবিশিষ্ট, গ্রন্থিল। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে এপ্রিল থেকে আগষ্ট মাসে। ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল: পুনর্ণভা উন্মুক্ত শুষ্ক ভূমি, পশুচারণভূমি, রেলপথের পাশে, রাস্তার ধারে, পতিত জমি, গৌণ অরণ্য পাথুরে এবং বালিকাময় ভূমিতে ভালো জন্মে।[১] তবে এটা ঠিক বর্ষাভুর মতো এর পাতা পুরু নয় এবং গোলও নয়। পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের প্রতিবেদনে দেখা যায় এই রক্ত পুনর্ণবার প্রধানত ৩টি Var, অর্থাৎ Variety আছে, আসলে এগুলি দেখতে প্রায় একই রকম। তবে সর্বভারতীয় ভেষজ কমিটির সিদ্ধান্ত হলো পুনর্ণবার ক্ষেত্রে লাল ফুলের গাছটিই ব্যবহার করা উচিত।[২]
চাষ পদ্ধতি: এদের বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং শাখা কলমের সাহায্যে। এই পুনর্ণবার গাছ সারা বছরই দেখা যায়। এটি ফলপাকন্ত গাছ নয় অর্থাৎ বীজ হলেই মরে যায় না। অনেক সময় লতাগুলি শুকিয়ে গেলেও মূল শুকিয়ে যায় না, গাছের গোড়ার উপরাংশ থেকে পুনরায় নতুন লতা গজিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।[২] বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং পতিত জমিতে নিজে থেকেই সচরাচর ঠাণ্ডা স্থানে ও গোবরের পচা সারের গাদায় এরা জন্মে থাকে।[৩]
বিস্তৃতি: এশিয়ার গ্রীষ্ম এবং অর্ধ গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল, আফ্রিকা, অ্যামেরিকা এবং অষ্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের সর্বত্র ইহা জন্মায়।
পুনর্ণভার অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
পুনর্নবা উদ্ভিদ তিক্ত স্বাদবিশিষ্ট, পাকস্থলীর বায়ুনাশক, অন্ত্র শিথিলকারী এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দূরকারী, কাশির মাধ্যমে ফুসফুসের শ্লেষা নির্গতকারী এবং বমন কারক। শিকড় এবং পাতা শোথ রোগে এবং উপত্বকীয় কলার শোথ রোগে কার্যকরী মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইহা মৃগীরোগ এবং জীবাণু ঘটিত আমাশয়েও ব্যবহৃত হয়। পাতা এবং শিকড় জন্ডিস, রক্তাল্পতায়, ঔদরিক শোথরোগে, চক্ষু প্রজ্জ্বলনে, গনোরিয়ায়, এবং রক্ত পরিস্কারক হিসেবেও উপকারী, এবং কার্যকরী ফোলা প্রতিরোধী গুণাবলী সম্পন্ন। উদ্ভিদ চূর্ণ ঔদরিক টিউমার এবং ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়। ইহা মৃগীরোগে, আমাশয়ে এবং যন্ত্রণাদায়ী বৃক্ক-গত রোগেও উপকারী (Ghani, 2003). পুনর্ণভার ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
ব্যবহার্য অংশ: ভেষজ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয় সমগ্র উদ্ভিদ, বিশেষত মূল।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: কাঁচা মাংশের সাথে রক্ত খাওয়ার ফলে সৃষ্ট পেটের ব্যাথা দূর করতেও ইহার পাতা কার্যকরী। পাপুয়া নিউগিনিতে ইহার শিকড়ের টুকরা কাঁচা খাওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কখনও কখনও ইহার পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে (আগস্ট ২০১০) পুনর্ণভা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র সংকেটর কারণ নেই এবং এটি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় আশংকা মুক্ত (lc)। এটি বাংলাদেশে সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এবং শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২১১।
৩. শেখ সাদী; উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ২৫২।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।