পরিচিতি: ফুটি বা বাঙ্গি বা বাঙ্গী বা বাঙি, হচ্ছে শসা পরিবারের কিউকামিস গণের একটি লতা জাতীয় সপুষ্পক ফলের প্রজাতি। এরা বর্ষজীবী লতা, জমিতে লতিয়ে লতিয়েই বৃদ্ধি পায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis melo Linn, পরিবার Cucurbitaceae, উড়িষ্যা অঞ্চল বিশেষে এটিকে কাঁকুড়ি বলে বাংলায় এর আরেক জাতের ফুটি চাষ হয় একে গোমুক বা গুমুক বলে। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis utilissimus যা মূলত একই প্রজাতি। এটি বর্ষায় চাষ হয়; কাঁচা খেতে তিতো, পাকলে ফুটির মতোই খেতে হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Cucumis melo L. সমনাম: Cucumis acidus Jacq, Cucumis agrestis (Naudin) Greb. nom. Inval, Cucumis alba Nakai, Cucumis ambiguus Fenzl ex Hook.f. nom. Inval, Cucumis arenarius Schumach. & Thonn, Cucumis aromaticus Royle, Cucumis bardanus Fenzl ex Naudin nom. Inval, Cucumis bisexualis A.M.Lu & G.C.Wang, Cucumis callosus (Rottler) Cogn, Cucumis campechianus Kunth, Cucumis cantalupensis Haberle ex M.Roem. nom. Illeg, Cucumis cantalupo Rchb সহ অনেকগুলো। সাধারণ নাম: Muskmelon. বাংলা নাম: ফুটি, বাঙ্গি, বাঙ্গী, বাঙি। অন্যান্য নাম: (হিন্দি: कचरी Kachri); জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস; জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Eudicots; অবিন্যাসিত: Rosids; বর্গ: Cucurbitales; পরিবার: Cucurbitaceae; গণ: Cucumis; প্রজাতি: Cucumis melo L.
বিবরণ: ফুটির পাতা গোলাকার কোণযুক্ত, গাছ উভয়লিঙ্গ বিশিষ্ট অর্থাৎ একই গাছে স্ত্রী ও পুং দুই প্রকারের ফুলই হয়, বাংলার বহুস্থানে এর চাষ তো হয়ই, তাছাড়া ভারতের অনেক প্রদেশে বেলে (বালি সংযুক্ত) মাটিতে এবং মজা নদ-নদীর চরে চাষ হয়ে থাকে। বাংলায় কাঁচা ফলকে কাঁকুড় ও পাকলে ফুটি বলে। মাঘের শেষে ক্ষেতে বীজ পুতে দেওয়া হয়, যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় ‘মাদা দেওয়া’, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চারা বেরোয়; সেই গাছে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই ফল হতে সুরু করে। ফলের গায়ে ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত শিরা থাকে। এ ফল অল্পস্বল্প বলে বারোমাসই পাওয়া যায়, কারণ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ঋতুর তারতম্যে থাকায় কখনও এ প্রদেশে কখনও ও প্রদেশে চাষ হয়ে থাকে। লক্ষনৌ ও জৌনপুর অঞ্চলে যেটি পাওয়া যায় তাকে আমরা বলি খরবুজা; এর সংস্কৃত নাম চিভিট। এরা প্রজাতিতে এক হলেও মাটি, পানি ও বায়ুর পার্থক্যে তার গন্ধ ও স্বাদের পার্থক্য ঘটে। এই ফল পাকলে গায়ের রং হলুদ হয় ও আপনা আপনি ফেটে যায়।
বিশেষভাবে বাংলায় একে ফুটি বলে। তাই গ্রাম্য লোককথা ফুটি ফাটা চৌচির। তবে এ ফলের মৌসুম হলো বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে। কচি কাঁকুড় কাঁচাও খাওয়া যায় আবার তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়; তবে কাঁচা ফল কোনো কোনোটা তিক্ত স্বাদেরও হয়, সেগুলি অখাদ্য। এই পরিবারের গাছের প্রায় সব ফলের, বিশেষত তরকারি হিসেবে যেগুলির ব্যবহার হয়, তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে তিক্ত স্বাদের ফলও জন্মে, এসব ফল পাকলেও তিতা স্বাদ থাকে।
বাঙ্গি বা ফুটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যযোগ্য ফাইবার বা আঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ রয়েছে কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।
আরো পড়ুন ফুটি বা কাঁকুড়ের ছয়টি ভেষজ গুণ
এই কাঁকুড় আমাদের শরীরে রসবহ ও মূত্রবহ স্রোতে কাজ করে সত্যি, কিন্তু যেখানে সান্নিপাতিক ক্ষেত্র হয়, যেমন বায়ু ও পিত্ত দুটি ধাতুই কুপিত এবং একসঙ্গে জোট বেঁধেছে, সেখানে এটাতে বিশেষ উপকার দর্শায় না।[১]
বিস্তৃতি: ভারতের সব প্রদেশেই কমবেশি জন্মে। বাংলাদেশে মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশালে এই ফলের চাষ হয়।
চাষ পদ্ধতি: বালু মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। ফল পেকে যাওয়ার পড়ে বীজ লাগানোর উপযোগী হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে বীজ লাগানো হয়। বিশেষ যত্নের প্রয়োজন নেই এই গাছের। এটি গ্রীষ্মকালের ফল। বর্তমানে এই ফল বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়।
ব্যবহৃত অংশ: ঔধার্থে ব্যবহার হয় বীজ, মূল, পাতা। এছাড়া এই ফল লাউয়ের মতো চিংড়ি দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। কাচা ফল পানসে বলে লবণ মরিচ দিয়ে মেখে খাওয়া যায়। পাকা ফল দিয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়।[২]
ফুটির রাসায়নিক উপাদান: (a) Fatty acids, protein. (b) Vitamin-A, Vitamin-B, Vitamin-B, Vitamin-C. (c) Sitosterol cetyl alcohol.
তথ্যসূত্র:
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৩৮।
২. মৃত্যুঞ্জয় রায়; বাংলার বিচিত্র ফল, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃষ্ঠা, ১৪৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।