স্বর্ণলতা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এক ঔষধি ও আগ্রাসি লতা

লতার প্রজাতি

স্বর্ণলতা

বাংলা নাম: স্বর্ণলতা, আলোক লতা, জারবুটি বৈজ্ঞানিক নাম: Cuscuta reflexa, সমনাম: ইংরেজি নাম: giant dodder, আদিবাসি নাম:
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants অবিন্যাসিত: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Asterids বর্গ: Solanales পরিবার: Convolvulaceae গণ: Cuscuta প্রজাতি: Cuscuta reflexa

পরিচিতি: স্বর্ণলতা বা আলোকলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুল, বরই, বাবলা ইত্যাদি কাঁটাবহুল গাছে জন্মাতে দেখা যায়। রসালো কাণ্ড পত্রবিহীন, সোনার মত রং, আকর্ষণীয় চেহারা। কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ কান্ড মূল সব। লতা হতেই বংশ বিস্তার করে। সোনালী রং এর চিকন লতার মত বলে এইরূপ নামকরণ। ঔষধি গুণ আছে। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় দাতা গাছের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে এজন্য এটিকে আগ্রাসী হিসেবেও অনেকে বিবেচনা করে থাকেন।  

ঔষধি গুণ: আলোকলতা বা স্বর্ণলতার অনেক গুণ। স্বর্ণলতা শুধু অপকারীই নয়– এর আছে ভেষজ গুণ। এই উদ্ভিদের রস ক্ষত উপশমে কার্যকরী। এছাড়া এটি বলকারক, কফ নাশক, পিত্ত নাশক ও পেটের পীড়া নিরাময় করে। স্বর্ণলতার বীজ ও লতা পিত্তজনিত রোগে, দূষিত ক্ষতে, ক্রিমির জন্যে ও খোস-পাঁচড়ায় ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসনাশক।

মোটা লতা পিত্তজনিত রোগে, সরু লতা দূষিত ক্ষতে, বীজ ক্রিমি ও পেটের বায়ুনাশে খাওয়ানো হয়। এছাড়া পাণ্ডুরোগ, পক্ষাঘাত, মাংসপেশির ব্যথা, যকৃত ও প্লীহার রোগে এর বহুল ব্যবহার আছে।(এটি কোনো প্রেসক্রিপশন নয়)

বিষাক্ত অংশ: পুরো উদ্ভিদ

বিষক্রিয়ার ধরন: প্রজনন ক্ষমতারোধি, বমন সৃজক, গর্ভপাতক।

বিবিধ: স্বর্ণলতার বীজ থেকেই গাছ হয় বেশির ভাগ যদিও লতার টুকরো অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়লেও হবে। গাছ একটু বড় হলে লতাটা আশে পাশের গাছকে সেন্স করে বুঝে দেখে কোন গাছটি তার জীবনোপযোগী, সেই গাছের দিকেই লতাটা বেঁকে যায়। অন্য গাছকে আশ্রয় করার পরে ভূমিজ কাণ্ড শেকড় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে বলে তা বাতিল হয়ে যায়। জন্মাবার দুতিন সপ্তাহের মধ্যে কোনো আশ্রয়ী উদ্ভিদ না পেলে মরে যায় এই লতা।

আরো পড়ুন:  গোয়ালে লতা উদ্ভিদের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

স্বর্ণলতাও পরজীবী, কিন্তু একে বলা হয় ঘোর-পরজীবী বা ‘হলোপ্যারাসাইট’ (Holoparasite)। স্বর্নলতার দেহে কোনো সালোকসংশ্লেষণ হয় না, তাই জৈব খাদ্য শর্করা, জল ও খনিজ সবই একে সংগ্রহ করে নিতে হয় পোষক গাছ থেকে। কিছুদূর পর পর এর বিশেষ শিকড় ‘হস্টোরিয়াম’ পোষক-গাছের শরীরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। বীজ থেকে স্বর্নলতার জন্ম হয় মাটিতে। শিশু গাছ এসময় কাণ্ড ঘুরিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে আশপাশের কোন্‌ গাছ পোষক হিসাবে অধিক নির্ভরযোগ্য। নির্বাচন করে সেই গাছ বেয়ে উঠে পড়ে লতা, তারপর চোষকমূল বিস্তার করতে থাকে, পুরাতন মূল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে স্বর্ণলতা মাটিতেই জন্মেছিল। তবে পোষক গাছের সন্ধান না পেলে স্বর্ণলতার চারার মৃত্যু হয়। 

প্রজাতিসমূহ: সারা পৃথিবীতে Cuscuta গণে ১০০-১৭০ টি প্রজাতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রয়েছে চারটি প্রজাতি। বিপ্রদাস বড়ুয়া গাছপালা তরুলতা গ্রন্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে লিখেছেন। এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের ফুলের উপত্যকা জাতীয় উদ্যানের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য একটি হুমকি। ভারতে এটি ‘অমর বেল’ এবং নেপালে ‘আকাশ বেলি’ নামে পরিচিত।

সাহিত্যে: প্রাচীন নানা কাব্য এবং জাতকে এর উল্লেখ আছে। জাতকে তার নাম আকাশবল্লী। জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘সেখানে মানুষ কেউ যায় নাকো দেখা যায় বাঘিনীর ডোরা/ বেতের বনের ফাঁকে জারুলগাছের তলে রৌদ্র পোহায়/ রূপসী মৃগীর মুখ দেখা যায়,- শাদা ভাঁট পুষ্পের তোড়া/ আলোকলতার পাশে গন্ধ ঢালে দ্রোণ ফুল বাসকের গায়।’

তথ্যসূত্র: মোকারম হোসেন, “আলোকলতার ফুল” দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১১, পৃষ্ঠা-২৪।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vijayanrajapuram

Leave a Comment

error: Content is protected !!