হস্তীপদ বা গাজিয়া পার্বতঞ্চলে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

হস্তীপদ বা গাজিয়া

বৈজ্ঞানিক নাম: Elephantopus scaber L., Sp. Pl.: 814 (1753). সমনাম: Elephantopus scaber L. var. typicus Koster (1935). ইংরেজি নাম : জানা নেই। স্থানীয় নাম: হস্তীপদ, গজিয়া।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Asterids. বর্গ: Asterales. পরিবার: Asteraceae. গণ: Elephantopus প্রজাতির নাম: Elephantopus scaber.

ভূমিকা: হস্তীপদ বা গাজিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Elephantopus scaber) এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে পার্বত্যঞ্চলে জন্মে।

হস্তীপদ বা গাজিয়া-এর বর্ণনা:

বর্ষজীবী বীরুৎ, মূলাকার কাণ্ড লতান, গ্রন্থিকীয়, অনূর্ধ্ব ৫২ সেমি লম্বা, কাণ্ড দ্ব্যগ্রশাখা বিন্যাসিত, প্রস্থচ্ছেদ গোলাকার, সর্বাংশে ঘনভাবে সন্নিবেশিত সাদাটে কণ্টকরোমী। মূলজ পত্র অনূর্ধ্ব ২৮ x ৭ সেমি, বিডিম্বাকার -বল্লমাকার থেকে আয়তাকার, অর্ধবৃন্তক, শীর্ষ স্থূলাগ্র বা সূক্ষ্মাগ্র, উপরে হালকাভাবে রোমযুক্ত বা বিরলক্ষেত্রে রোমশূণ্য, অঙ্কীয় পৃষ্ঠে সুস্পষ্ট শিরার উপরে রোমাবৃত, প্রান্ত। সভঙ্গ, হালকাভাবে ক্রকচ বা অর্ধ-ক্রকচ, কাণ্ডজ পত্র সচরাচর খবর, মাঝে মধ্যে বৃহৎ, অনূর্ধ্ব ১৩ x ৪ সেমি, অবৃন্তক, ডিম্বাকার-আয়তাকার, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্ধঅখন্ড, মাঝে মধ্যে গোড়া সভঙ্গ বা ক্রকচ, অর্ধ-কাণ্ডবেষ্ট।

পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, বহু সংখ্যক, ২-৬ পুষ্পবিশিষ্ট, পত্ৰতুল্য মঞ্জরীপত্র ১.৫-২.০ X ১.০-১.৩ সেমি, গ্লোমেরুলস এর ব্যাস ১.৫-২.০ সেমি ও ০.৭-১.০ সেমি দীর্ঘ, মঞ্জরী পত্রাবরণ বল্লমাকার-আয়তাকার, অধিকতর অন্তর্বর্তী মঞ্জরীপত্র ৯.০-৯.৫ মিমি লম্বা, বহির্দেশীয় গুলি ৫-৭ মিমি লম্বা । পুষ্প গোলাপি-লাল। দলমণ্ডল অনূর্ধ্ব ৬ মিমি লম্বা। ফল সিপসেলা, বি-বল্লমাকার, রোমশ, ১০ – সভঙ্গ, অনূর্ধ্ব ৩.৫ মিমি লম্বা, বৃতিরোম ৪-৬ টি কুচযুক্ত, ৫ মিমি লম্বা ।

ক্রোমাসোমসংখ্যা: ২n = ২২ (Fedorov, 1969)।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

বেলে ও শক্ত মাটি, মুক্ত স্থান, রাস্তার ধারে বালুময় টিলা, বনাঞ্চলের আংশিক অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান, ঢালু। স্থান এবং ঝাপে। ফুল ও ফল ধারণ সময় নভেম্বর থেকে মার্চ মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও মূলাকার কাণ্ড দ্বারা।

আরো পড়ুন:  শিয়ালমুঠা বাংলাদেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

হস্তীপদ বা গাজিয়া-এর বিস্তৃতি:

গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশসমূহে সর্বজনীনভাবে জন্মে। বাংলাদেশে এটি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা,  নোয়াখালি, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা হতে নথিভূক্ত হয়েছে ।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক:

উদ্ভিদটি কোষ্ঠবর্ধক এবং হৃৎপিণ্ডের বলকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সর্প দংশনে ব্যবহৃত হয়। মূল ও পত্রের কৃাথ মূত্র কৃচ্ছতা, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং শোথ রোগে বা পাকস্থলির বেদনায় প্রদান করা হয়। মূল হতে প্রস্তুতকৃত উপাদান বমি থামাতে, দুর্বলতা জনিত জ্বরের ক্ষেত্রে এবং গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে দাঁতের বেদনায় ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদটি মূত্রবর্ধক, জ্বরনাশক এবং ক্ষতে ব্যবহৃত হয়। এটি কৃাথ বা পুলটিশ হিসেবে নরমকারক হিসেবে বিবেচিত হয়।

উদ্ভিদটি ঘর্মকারক ও টিউমার বা স্ফীতাবস্থা নিরাময়ক হিসেবে বিবেচিত। উষ্ণ দ্রবণ হজম ক্রিয়ার গোলযোগ, সবিরাম জ্বর, ক্ষুধামন্দা এবং মাসিক রক্তপ্রবাহ সংক্রান্ত সমস্যায় প্রদান করা হয়। নারিকেল তেলে সিদ্ধকৃত পাতা ক্ষত এবং ক্রাউর ঘা এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। সম্পূর্ণ বিটপ এর অ্যালকোহলিক নির্যাসে জীবাণুনাশক গুণাবলী দেখা যায়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) হস্তীপদ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশংকামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে হস্তীপদ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ষ্ঠ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩২৬ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg

Leave a Comment

error: Content is protected !!