ভূমিকা: গিলা লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Entada scandens) ফেবাসি পরিবারের এন্টাডা গণের একটি কাষ্ঠল গুল্ম।
বিবরণ: গিলা লতা কাষ্ঠল গুল্ম (shrub) আরোহী লতা জাতীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ, উচ্চতায় প্রায় ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত হয়। এরা সুন্দরী, বাইন, গেওয়া, পশুর, আমুর ইত্যাদি আশ্রয়ী গাছের কান্ড আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠে। গিলা লতা গাছ ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায় এবং ধীরে ধীরে বাড়ে। এদের লতানো কাণ্ড মোটা কাষ্ঠল নলাকার, বাকল মসৃণ ও গাঢ় বাদামি থেকে কালচে বর্ণের। কাণ্ড ও ডালপালার বাকলে অসংখ্য বায়ুরন্ধ্র বা লেন্টিসেল (lenticels) রয়েছে। গিলা লতার পাতা যৌগিক এবং পত্রফলক ২-৬টি পত্রকযুক্ত। পত্রকগুলো আয়তাকার, লম্বায় ৩-৫ সেন্টিমিটার, কিনারা মসৃণ এবং আগা সূচালো। মার্চ-জুন পর্যন্ত ৫-২০ সেন্টমিটার লম্বা স্পাইক ধরনের পুষ্পবিন্যাসে নীচ থেকে উপরের দিকে ছোট আকারের শীমের ফুলের মতো সাদা বর্ণের ফুল ফোটে। গিলা লতায় জুন-জুলাই মাসে ফল ধরে। ফল পড জাতীয় শীমের মতো, লম্বায় ৬০-৯০ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ৭-৯ সেন্টিমিটার,আবরণ মসৃণ ও বেশ শক্ত ধরনের। পরিপক্ক ফল হালকা বাদামি বর্ণের। প্রতিটি ফলে ১০-১৫টি করে বীজ থাকে এবং বীজগুলো চ্যাপ্টা গোলাকার শক্ত ও গাঢ় লালচে বর্ণের।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, নেপাল,মায়ানমার, শ্রীলংকা,ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, ক্যামেরুন, গ্যাবন, আইভরি কোষ্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, সেনেগাল, সিরিয়া লিওন, টগো, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান: গিলা লতা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে প্যারাবন পর্যন্ত সব এলাকাতে পাওয়া যায়। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে লাগানো গিলা লতার কিছু গাছ রয়েছে।
প্রজনন ও বংশ বিস্তার: সাধারণত বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বীজ থেকে গিলা লতার চারা জন্মায় ও বংশ বিস্তার হয়। পরিপক্ক ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে পানিতে ভাসতে থাকে এবং ফলের বীজগুলো নদী ও খালের তীর বেষ্টিত কাদা মাটিতে আবদ্ধ হয়ে প্রাকৃতিকভাবে চারা ও গাছ জন্মায়। এ ছাড়া নার্সারিতে পলিব্যাগে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা হয়।
গুরুত্ব ও ব্যবহার: গিলা লতার গাছের বিভিন্ন অংশে ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। বীজের শাঁস জ্বর, ক্ষত ও চর্মরোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া গাছের অন্যান্য অংশ জন্ডিস, দাঁতের ব্যাথা, আলচার ও মাংসপেশীর সমস্যা নিরাময় করে। এছাড়াও গিলা লতার বীজ, বর- কনের বিয়ের গোসলের সময় ব্যবহৃত হয়। গিলা বীজ দিয়ে পাঞ্জাবী ইস্ত্রি করার পর এক ধরনের ডিজাইন করা হতো। অতীতে গিলা করা পাঞ্জাবী ছিল আভিজাত্যপূর্ণ ব্যাপার।
সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ: ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ৫৭ নম্বর সেকশনে লাগানো গিলা লতার কিছু গাছ সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া, আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় ২০১৩ সালে কিছু গিলা লতার চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।