আলকুশি বা বিলাইখামচি অযত্নে বেড়ে ওঠা এক ধরণের লতা; যেটা অন্য গাছকে জড়িয়ে বৃদ্ধি পায়। অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে এই লতা। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এই লতা জন্মে থাকে। ঔষধ হিসাবে আলকুশি লতার মূল ও বীজ ব্যবহার করা হয়। নিম্নে এই লতাটির লোকায়তিক ঔষধি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।
আলকুশি বা বিলাই খামচি একটি বর্ষজীবী ঔষধি লতা
১. দর্শনে ক্ষরণ: অল্প বয়সে কুঅভ্যাসজনিত শুক্রক্ষয় হয়, যার পরিণতিতে শুক্রতারল্য হয়, সেক্ষেত্রে আলকুশি বীজ ৪ থেকে ৫টি প্রতিদিন আধা কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খোসা ছাড়িয়ে, শিলে বেঁটে ২ থেকে ৩ চা চামচ ঘিয়ে অল্প ভেজে ঐটা একটু চিনি বা মিছরির গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে হবে; তারপর একটু দুধ খেতে পারলে ভাল হয়। উপরিউক্ত পদ্ধতিতে এই বীজ ব্যবহার করলে শুক্রের গাঢ়ত্ব ফিরে আসবে।
২. রক্তপিত্ত: এক্ষেত্রে ২০ গ্রাম আন্দাজ আলকুশীর বীজ অগের দিন রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন তার খোসা ছাড়িয়ে, একটু থেঁতো করে ৫ থেকে ৬ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ ৩ কাপ থাকতে নামিয়ে রেখে দিতে হবে এবং জলটা থিতিয়ে গেলে, উপর থেকে জলটা ঢেলে নিয়ে সমস্ত দিনে ৩ থেকে ৪ বারে ঐ জলটা খেতে দিলে ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। আরও ভাল হয় যদি এর সঙ্গে আলকুশী গাছের কচি পাতা শাকের মতো রান্না করে ৮ থেকে ১০ গ্রামের মতো খাওয়ার সুবিধা হয়।
৩. অববাহুক রোগ: উপরে কোনো জিনিস আছে যা একটি উচু জায়গায়, অন্যকে ডাকতে হচ্ছে পেড়ে দিতে ; হাত কিছুটা কোনো রকমে উঠলো বটে, কিন্তু বহু কষ্টে; এই সমস্যা ডান বা বাঁ যে কোনো হাতেই হতে পারে। এটা প্রৌঢ়কালেই বেশি হতে দেখা যায়। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের নীচে এ রোগটা তেমন হাতে হয় না। এক্ষেত্রে আলকুশী গাছের মূল জল দিয়ে বেঁটে, আন্দাজ এক চা চামচ রস করে, পর পর কয়েকদিন খেলে ওটা কমতে থাকে; বেশ কিছুদিন খেলেই ওটা সেরে যায়। যদিও জানি এই লতাগাছটি গ্রামাঞ্চলে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও, তবে লোকে এ গাছ বাড়ির নিকটে রাখতে চায় না, তাই বর্তমানে এটি দূষ্প্রাপ্য বা দূর্লভ হয়ে ওঠে এই ধরনের বনৌষধি ।
৪. ভগ্নধ্বজে: যৌবনের উন্মাদনায় অতিরিক্ত সঙ্গ করলে পরিণামে কি শারীরিক কি মানসিক সবই ম্রিয়মাণ হয়। এক্ষেত্রে এই আলকুশী বীজকে রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খোসা ছাড়িয়ে, ঐ ছাড়ানো বীজগুলোকে সমান পরিমাণ দুধে-জলে মিশিয়ে সিদ্ধ করে, ঐ বীজ শিলে পিষে, তাকে ঘিয়ে ভেজে, চিনি মিশিয়ে হালুয়ার মতো করে রাখতে হবে, একসঙ্গে বেশি করার দরকার নেই, ৪ থেকে ৫ দিনের মতো একসঙ্গে করাই ভালো।
ঔষধার্থে মাত্রা হলো ৫ গ্রাম করে সকালে ও বিকালে দু’বেলা খাওয়া, আর এইটি খাওয়ার পর একটু দুধ ১ কাপ পরিমাণ খাওয়া দরকার। এক সপ্তাহের পর থেকে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বুঝতে পারবেন। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে।
৫. মাংসপেশীগত বাতে: এই রোগ সাধারণত শিশু বা বালকদের বেশি দেখা যায়। এদের চেহারা হবে থসাথসে, এরা ছুটতে পারে না, দেহের ভারসাম্য রেখে চলার ক্ষমতা কম; পায়ে হলে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যেতে দেখা যায়। আর পেশীগুলি ঢিলঢিল করে, বর্তমান পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যাকে বলে থাকেন এট্রোপি অফ দি মাসল (Atrophy of the muscle); এদের ক্ষেত্রে আলকুশী বীজের গুঁড়ো আধ গ্রাম করে গরম দুধে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। এর দ্বারা ঐ পেশীগত বাত নিরাময় হবে। এদের ক্ষেত্রে নিষেধ হলো যে কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার; এদের পক্ষে তিক্ত রসের খাদ্যই বেশি উপকারী আর কোনো প্রকার মালিশ বা সেক দেওয়ার দরকার নেই, এই প্রক্রিয়াতেই উপকার হবে।
৬. মাসিক ঋতুর কৃচ্ছ্রতায়: সাধারণত দু’টা কারণে এই রোগ হতে দেখ যায় যাঁরা মেদস্বিনী, আর যাঁদের রক্তাল্পতা এসেছে; আরও একটা কারণে দেখ যায় যাঁদের হরমোনে অসাম্য রয়েছে। এদের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত কারণ দুটির জন আলকুশীর বীজ চূর্ণ আধ গ্রাম মাত্রায় খেলে ওটার রেহাই যে একেবারে হবে তা নয় প্রথমোক্তটির জন্য তাঁর মেদকে কমাতে হবে, আর দ্বিতীয়টির জন্য তাঁর রক্তকণিক যেসব ঔষধে বৃদ্ধি হয় সেটার ব্যবস্থাও করতে হবে; সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা যুগপৎ না হলে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হবে না আর তৃতীয় ক্ষেত্র আরও কঠিন। এক্ষেত্রে আরও গভীরে চিকিৎসা করতে হবে।
৭. ক্ষীণ শুক্র: কথায় আছে, জাতও যায়, পেটও ভরে না। মনের অবস্থাটি যেন সেই রকম যেন চাতকপাখির ফটিক জলের কামনার মতো। যাক এই অবস্থাটায় নিজেকে অসহায় বোধ করতে হয়। মন চায় কিন্তু ক্ষমতার অভাব বাস্তবে। এই ক্ষেত্রটিতে এই আলীকুশীর বীজ চূর্ণ মৃদু আগুনে ঘিয়ে অল্প ভেজে রেখে দিতে হবে ১ চা চামচ মাত্রায় নিয়ে সকালে ও বিকালে এক কাপ দুধের সঙ্গে অল্প চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা মাসখানেকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকার যে হয়েছে তা বাস্তবে উপলব্ধি করা যাবে।
রাসায়নিক গঠন
(a) Alkaloids, viz., mucunine, nicotine, mucunadine, prurieninine. (b) Reddish viscous oil. (c) C-3:4-dihydroxyphenylalanine.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,২২২-২২৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।