ভূমিকা: ঘি করলা বা ধারকরোলা বা ভাতকরলা বা ভাদ করলা বা ভাদ কইল্লা হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের মমরডিকা গণের একটি বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ।
বিবরণ: ঘি করলার মূল কন্দাল । কান্ড সরু, খাঁজযুক্ত, রোমশ বিহীন। আকর্ষ সূত্রাকার সরল। পত্র ডিম্বাকার-তাম্বুলাকার, ঝিল্লিযুক্ত, ৫-১২ x ৩-৮ সেমি, মসৃণ, অখন্ড বা বিভিন্নভাবে খন্ডিত, তরঙ্গিত বা সামান্য দন্তুর, বৃন্ত সরু, গ্রন্থিযুক্ত। উদ্ভিদ ভিন্নবাসী।
পুংপুষ্প: একল, মঞ্জরীদন্ড সরু, ৪-১৪ সেমি লম্বা, সহপত্রী, মঞ্জরীপত্র ফলকাকার, ঝিল্লিযুক্ত, গোলাকৃতি বৃত্তাকার, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ, বৃতি ঘন রোমশ, খন্ড ভল্লাকার, ৮-৯ x ৪-৫ মিমি, ১ শিরাল, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, দলমন্ডল হলুদ, খন্ড দীর্ঘায়ত, ২.০-৩.৫ x ১.৫-২.৫ সেমি, শীর্ষ স্থূলাগ্র, পুংকেশর ৩টি, পরাগধানী প্রকোষ্ঠ একত্রে ভাজকৃত।
স্ত্রীপুষ্প: মঞ্জরীদন্ড ১.৫-৩.০ সেমি লম্বা, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরূপ, গর্ভাশয় ডিম্বাকৃতি-দীর্ঘায়ত, ৮ x ৩ মিমি, মূলীয় অংশ সরু, গর্ভদন্ড সরু, গর্ভমুন্ড ৩টি। ফল। ডিম্বাকার, ৩-৫ x ২-৩ সেমি, কন্টকযুক্ত। বীজ ফ্যাকাশে হলুদ, প্রশস্ত ডিম্বাকার, ৬-৭ x ৫-৬ মিমি, খাঁজা, সামান্য ভাজকৃত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে থেকে অক্টোবর মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮ (Richharia and Ghosh, 1953).
চাষাবাদ ও আবাসস্থল: গুল্মাঞ্চল, গৃহউদ্যান এবং অরণ্যে জন্মে। বীজে বংশ বিস্তার ঘটে।
বিস্তৃতি: চীন, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকা জেলায় জন্মে।
ঘি করলার অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
ঘি করলার ফল সবজিরূপে খাওয়া হয়। আঠালো কন্দাল মূল রক্ত ক্ষরনশীল অর্শ রোগে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাশি নিরাময় ও জ্বরে অস্থিরতা দূর করতেও মূল উপকারী। অন্যান্য জাতিতাত্বিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, ভারতে কন্দাল মূল তেতুলের সাথে মিশ্রিত করে তৈরী কৃাথ পেশি ব্যথা দূর করতে প্রয়োগ করা হয়। সাভারাস আদিবাসীরা মাথার খুশকী দূর করতে কন্দাল মূলের লেই চুলে ব্যবহার করে। কয়া ও বল্মিকী আদিবাসী সম্প্রদায় পাতার রস পোড়া ঘায়ে প্রয়াগ করে।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ঘিকরলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ঘিকরলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩২৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।