নীলমনিলতা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের জন্মানো শোভাবর্ধনকারী আরোহী লতা

ভূমিকা:  নীলমনিলতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Petrea volubilis ইংরেজি : Purple Wearth, Queen’s Wreath) এটি ভারবেনাস পরিবারের পেটরেয়াগণের আরোহী গুল্ম। বাড়িতে বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।

বৈজ্ঞানিক নাম: Petrea volubilis L., Sp. Pl. 1: 626 (1753). ইংরেজি নাম: Purple Wearth, Queen’s Wreath, Sandpaper Vine. স্থানীয় নাম: নীলমনিলতা। জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Tracheophyta. অবিন্যাসিত: Edicots. অবিন্যাসিত: Asterids. বর্গ: Lamiales. পরিবার: Verbenaceae. গণ: Petrea.প্রজাতি: Petrea volubilis.     

বর্ণনা:

আরোহী গুল্ম, ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু, রোমশ। পত্র প্রতিমুখ, দৈর্ঘ্য ৫-২০ ও প্রস্থ ২.৫-১০.০ সেমি, উপবৃত্তাকার, ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার থেকে আয়তাকার, উপপত্রহীন, বৃন্তক, দৃঢ় ঝিল্লিময়, অখন্ডিত বা প্রান্ত তরঙ্গায়িত, শীর্ষ সাধারণত সূক্ষ্মাগ্র বা খাটো দীর্ঘা, গোড়া কীলকাকার, উপরিতল ফিকে সবুজ, নিম্নতল উজ্জ্বল সবুজ, স্পর্শ করলে খুবই অমসৃণ, পত্রবৃন্ত ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ঘন বা হালকা রোমশ।

পুষ্পবিন্যাস ঝুলন্ত শীর্ষক রেসিম, ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, অনেক-পুস্পক। পুষ্প নীল বা ফিকে বেগুনি, বৃন্তক, পুষ্পবৃন্ত প্রায় ৭-৮ মিমি লম্বা, হালকা রোমশ। বৃতি যুক্ত বৃত্যংশক, পাপড়িলগ্ন, ফিকে রক্ত-বেগুনি বা নীলাভ, নলাকার, নল খুবই খাটো, ২-৩ মিমি লম্বা, ফুলের বৃতি ৬ মিমি পর্যন্ত লম্বা, বেলনাকার, বাহিরে ঘন রোমশ, ৫খন্ডিত, খন্ডক ১.২-১.৮ x ০.৪-০.৬ সেমি, আয়তাকার, স্থূলা, গ্রীবা বৃতিসদৃশ উপবৃদ্ধিযুক্ত শল্কপত্র বিশিষ্ট যা ৫টি ঝিল্লিময়, ত্রিকোণাকার সূক্ষ্মাগ্র খন্ডকযুক্ত।

দলমন্ডল থালিকা-আকৃতির, গাঢ় নীল বা রক্ত-বেগুনি, নল ধুতুরাকার, নিম্নাংশ রোমহীন এবং উপরের অংশের বাহিরে রোমশ, ৫-খন্ডিত, খন্ডক প্রশস্ত উপবৃত্তাকার, গোড়ার অভ্যন্তরে পুংকেশর সন্নিবেশে ঘন দীর্ঘ রোমাবৃত, পুংদন্ড সূত্রাকার, রোমহীন, পরাগধানী আয়তাকার, বন্ধ্যা পুংকেশর লুপ্ত। গর্ভাশয় আয়তাকার-বিডিম্বাকার, রোমহীন, গভর্দন্ড সূত্রাকার, গর্ভমুণ্ড পুনরায় অক্টোবরে দ্বিতীয়বার হয়। সাধারণত বাংলাদেশে ফল হয় না।

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ১৪, ৩৪ (Kumar and Subramaniam, 1986).

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

এর বংশ বিস্তার হয় শাখা কলম, গুটি কলম বা সাকার দ্বারা।  পূর্ণ সূর্যালোকযুক্ত উর্বর মৃত্তিকায় ভাল জন্মে, বিশেষত বাগানে।

বিস্তৃতি:

উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকার স্বদেশী, সমগ্র উপমহাদেশে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে প্রবর্তিত এবং আবাদী। বাংলাদেশে প্রবর্তিত এবং বিভিন্ন বাগানে আবাদী।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

নীলমনিলতা একটি সুপরিচিত শোভাবর্ধক আরোহী লতা, বারান্দা, খিলান, পারগোলা এবং দেয়ালের উপর জন্মায়। ইহা দেখতে লম্বা ঝুলন্ত স্পাইকে অসংখ্য পুষ্প উৎপন্ন করে যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  নীলমনিলতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নীলমনিলতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।   

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৬-৪৭৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের তেরোটি জনপ্রিয় আবাদি দৃষ্টিনন্দন আলংকারিক বর্ষার সুগন্ধি ফুল

Leave a Comment

error: Content is protected !!