পরিচিতি: কমলা ঢাক লতা বা সোনাঝুরি লতা হচ্ছে বিগ্নোনিয়াসি পরিবারের Pyrostegia গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি। এটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও বলিভিয়া। কিন্তু বর্তমানে বাগানের প্রজাতি হিসেবে সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত।
কমলা ঢাক লতা-এর বিবরণ:
কমলা ঢাক লতা ক্রান্তীয়, বহুবর্ষজীবী, নমনীয় কিন্তু কাষ্ঠল, চিরসবুজ, ঝুলন্ত শাখাবহুল লম্বা লতা। খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। না ছেঁটে দিলে আকর্ষের সাহায্যে অনায়াসে ২৫-৩০ মি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এদের পাতা এক পক্ষল যৌগিক, অভিমুখি এবং হালকা থেকে গাঢ় সবুজ রঙের। প্রতি পাতা ২-৩ টি পত্রক যুক্ত। কখন কখন মাঝের পত্রকটি শীর্ষ ভাগে তিন অংশে বিভক্ত আকর্ষে পরিণত হয়। পত্রকগুলি ডিম্বাকার, মসৃণ এবং ৪-৭ সেমি লম্বা।
কমলা ঢাক লতার উজ্জ্বল লালচে কমলা রঙের ফুল অনেক দূর থেকেই আমাদের নজর কাড়ে। প্রস্ফুটনকাল শীত-বসন্ত হলেও আমাদের দেশে শীতের প্রারম্ভেই ফুল ফোটে এবং এ শোভা দীর্ঘস্থায়ী। লতার ঝাড় তখন সোনালী ফুলে ভরে যায়। বসন্তে ফুটলেও তা বিক্ষিপ্ত। শাখার শীর্ষে একসাথে মঞ্জরিতে প্রায় ১৫-২০ টি ফুল গুচ্ছাকারে ঝুলতে থাকে। ফুলগুলো নলাকার, প্রায় ৭.৫ সেমি লম্বা। মুক্ত প্রান্ত ৫ লতিতে বিভক্ত এবং বাঁকা। গর্ভদন্ড লম্বা, কমলা রঙের ৪ টি পুংকেশরের ২ টি লম্বা ও ২ টি আকারে খাটো। ফুল গন্ধহীন। ফল নলাকার প্রায় ৩০ সেমি লম্বা। ফলগুলি অনেক পক্ষল বীজে পরিপূর্ণ থাকে। বংশবৃদ্ধি দাবাকলমে।
অন্যান্য বর্ণনা:
এই গাছ আগে এক সময় ইংলিশ এবং ফ্রেঞ্চ ল্যান্ডস্কেপিং-এর কাজে বেশ ব্যবহার করা হত, এখন যা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। চিরসবুজ এই গাছের পাতা ঝরে না বলে এর নিচে দিয়ে ফটফটে রাস্তা থাকে, সুইমিংপুলের পাশেও লাগানো যায়। আর সেখানে গাদা গাদা হামিং বার্ড এসে এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা করে। এর ফুলের টিউবগুলি প্রায় ২-৩ ইঞ্চি লম্বা, তাই হামিং বার্ড ছাড়া পরাগায়নের উপায় কঠিন। কিছু কিছু ভ্রমর লম্বা টিউব আকৃতির ফুলে ঢুকতে পারে না বলে মধুভাণ্ডের গোড়ায় ছিদ্র করে মধু খায় যাকে আমরা বলি নেকটার রবারি। এটা ঘটে থাকে লম্বা হৈমন্তি ফুলে। তবে এই কমলা ঢাক লতার ফুলে নেক্টার রবারি হয় কি না তা এখনো জানি না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে এই লতা ভর্তি। দেয়ালে, বেড়ায়, বাগানের দরজায় এটা খুব ব্যবহার হয়। বয়স বাড়লে এই লতা “লিয়ানা” বা কাষ্ঠল লতা হয়ে পড়ে। ঠিক মতো ছাঁট কাট করে না রাখলে এর বিস্তার কোনো গাছকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারতে পারে, যেমনটা দেখা যায় স্বর্ণলতার খপ্পরে বড়ই গাছ।
ব্রাজিলের “শেমান” বা বর্ষাবনের কবিরাজরা একে ব্যবহার করেছে ‘ভিটিলাইগো’ বা শ্বেতী রোগের মহৌষধ হিশেবে। শুনেছি মাইকেল জ্যাকসন এটা ব্যবহারের জন্যে চেষ্টা করেছিলেন, তবে এতো বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল তার ব্যাধি যে তা নিয়ন্ত্রণ না করে তিনি বরং শাদা হওয়াটাই বেছে নিয়েছিলেন। আমাদের অমিতাভ বচন তার হাত নিয়ে ঝামেলায় পড়তেন, ‘কুলি’ ছবিতে নাকি সেটা দেখাও গিয়েছে। এই গাছ তার জন্যে কী করতে পারে তা হয়তো তিনি ভাবার অবকাশও পাচ্ছেন না। হাল আমলে এই গাছের এক ব্যবহার রমরমা হয়েছে। এটা ব্যবহার করে নাকি মেনোপজ সিন্ড্রোম বন্ধ করা যায়। আমার ধারণা, এতে তেমন কোনো ফাটোকেমিক্যাল নেই যা খুব এফেক্টিভলি কাজ করতে পারে। হয়তো এর প্রচার কিছুটা ম্যালামাইনের মত।
বিবিধ:
Pyrostegia venusta ল্যাটিন নামটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় pyr = flame, stegia = covering আর venusta-র অর্থ charming যে কারণে এর সমধিক পরিচিতি “ফ্লেমিং ভাইন” বা অগ্নিলতা হিশেবে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।