আকনাদি, আকন্দি, আকন্দি লতা, দই পাতা, নিমুকা, মাকান্দি, বেম্মকপাট (বৈজ্ঞানিক নাম: Stephania japonica) একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। সংস্কৃত নাম: রাজাপাতা ইংরেজি নাম: Snake Vine, Tape Vine এই লতানো গাছ অন্য কোন বড় গাছ বা বেড়ার ধারে থেকে তাকেই আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। এটি ভেষজ লতা, বিভিন্ন রোগের ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন অসুখে ব্যবহার:
মচকে যাওয়া অথবা হাড় ফাটায়: শরীরের কোনো অঙ্গে আঘাত লেগে ফুলে গেলে অথবা মচকে গেলে, এমনকি আঘাত বেশি হবার ফলে হাড়ে চোট লেগে চিড় ধরলে আকনাদি গাছের টাটকা মূল এবং পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে আঘাত লাগার স্থানে প্রলেপ দিয়ে ফালি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলে ফুলা অবশ্যই কমে যাবে এবং যন্ত্রণাও থাকবে না। যন্ত্রণা ও ফুলা কমাতে আমরা যে হলুদবাটা চূর্ণ মিশিয়ে প্রলেপ দিয়ে থাকি আকনাদির প্রলেপ তার থেকেও বেশি কাজ দেয়। প্রথম দিন প্রলেপ দেয়ার পর তিনদিন বাঁধা অবস্থায় থাকবে। এরপর বাঁধন খুলে নতুনভাবে প্রলেপ লাগিয়ে আবার বেঁধে দিতে হবে।
যদি দেখা যায়, আঘাত লেগে হাড় ফেটে গেছে অথবা চিড় ধরেছে (এটা বোঝা যাবে (X-Ray) করলে, অথবা বোঝার সহজ পদ্ধতি হলো আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে আকনাদির মূল ও পাতার প্রলেপ দিলেও তিনদিনে ফুলা এবং যন্ত্রণা কমবে না, এরকম অবস্থায় প্রলেপ দেয়ার পর ফালি কাপড় দিয়ে বাঁধতে হবে, আর সেটা একটু চেপে অর্থাৎ জোর দিয়ে বাঁধা দরকার।
পরিবার পরিকল্পনা: ঋতুস্রাব শুরু হলে অর্থাৎ প্রথম দিন থেকেই আকনাদির কচি এবং টাটকা ৭ থেকে ৮টি পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে তাতে আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে শরবত করে খেতে হবে। রোজ সকালে খালিপেটে একবার করে খাওয়া, প্রয়োজন। যেদিন থেকে ঋতুস্রাব শুরু হবে, নিয়ম করে ঐ পাঁচদিন খেয়ে যেতে হবে। এ পরিবার অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে থাকবে অর্থাৎ গর্ভসঞ্চার হবে না।
আরো পড়ুন: আকনাদি বা দই পাতা গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে জন্মানো ভেষজ লতা
উল্লেখ্য, বর্তমানে পরিবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে এ্যালোপ্যাথিক যে সমস্ত বিক্রি হচ্ছে, তা খেলে অথবা বাহ্যিক প্রয়োগ করলে তাতে কিছু ক্ষেত্রে নানা উপ-অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু আকনাদি পাতার রসে সে রকম কোনো অসুবিধার নাই।
শ্বেতপ্রদরে: প্রথম ঋতুস্রাব শুরু হলে সাধারণভাবে এ রোগটি দেখা দিতে পারে। প্রথম থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বহু খারাপ রোগে আক্রান্ত হবার আশংখা থাকে। আকনাদি গাছের পাঁচটি টাটকা কচি পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে সবটা আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে তাতে দেড় চামচ মিসরীর গুড়া অথবা চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেতে হবে।
প্রস্রাবে তলানি: এ রোগটি বিভিন্ন কারণেও হতে পারে। কাচের গ্লাসে প্রস্রাব ধরে রাখলে কিছুক্ষণ বাদে দেখা যায় গ্লাসের তলাতে খড় গোলার মতো সাদা রং-এর তলানি পড়েছে। আকনাদি গাছের কচি ডাল ও পাতার রস দশ মিলিলিটার সামান্য ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে দিনে দুবার করে খেতে হবে। প্রথমবার সকালে এবং দ্বিতীয়বার বিকেলে আরও একবার খাওয়া দরকার। দিন দশেক খেলে উপকার অবশ্যই পাওয়া যাবে।
কলেরায়: আকনাদি গাছের টাটকা মূল পাঁচ গ্রাম সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার সবটা গরুর দুধের পাতা টাটকা টক দই এর সাথে মিশিয়ে রোগীকে একবার খাওয়ালেই পাতলা পায়খানা বন্ধ হবে। বমির বেগও কমে যাবে। তবে রোগীর প্রস্রাব যাতে হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখা দরকার। সে কারণে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে দেড় চামচ খাবার লবণ, এক চামচ চিনি এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সেটা বারে বারে তিন-চার চামচ করে রোগীকে খাওয়াতে হবে।
প্রথমবার ওষুধ খাওয়াবার পর যদি পায়খানা কমলেও অল্প পরিমাণে হয়, তাহলে তিন ঘণ্টা বাদে আরও একবার আকনাদির মূল বাটা একই পরিমাণ টক দই-এর সাথে খাওয়াতে হবে।
বুকের দুধ শোধনে: মায়ের বুকের দুধ দূষিত হলে সে ক্ষেত্রে শিশু সন্তান নানা অসুখে ভুগতে থাকে। শিশুর পেট ফাঁপে, পেটে যন্ত্রণা হয়, পাতলা পায়খানা করে। আকনাদি গাছের কচি টাটকা লতা এবং কচি পাতা, আর সম্ভব হলে কিছুটা পরিমাণে। মূল সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস দশ মিলিলিটার এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে। খাওয়ালে নিশ্চয়ই উপকার হবে। তবে সকালে, বিকালে মোট দু’বার খাওয়ানো দরকার। মোট দশ বার দিন নিয়ম করে খেলে ভালো হয়।
পাতলা পায়খানায়: আকনাদির চারটি টাকা এবং কচি পাতা মহিষের দুধের তৈরি টক-দই-এর ঘোলের সাথে মিশিয়ে খেলে পাতলা পায়খানা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ১১৪-১১৬।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krish Dulal
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।