পরিচিতি: নীল লতা, নীলবনলতা, নীলাতা বা নালাতাকে (বৈজ্ঞানিক নাম: Thunbergia grandiflora) একটি সপুষ্পক লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এদেরকে থাই ভাষায় রাং জুয়েট নামে ডাকা হয়। এদের আদি নিবাস ভারত, চীন, ইন্দোচীন, নেপাল, বাংলাদেশ; বিশেষভাবে আসাম, সিলেট ও চট্টগ্রামে। এটি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে এখন প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। এ গাছ বাংলাদেশের শেরপুরের গজনি পাহাড় মধুপুরের শালবনেও প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। তবে অব্যাহতভাবে প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস হতে থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে এই লতাগুলো। বাংলাদেশ ভারতের চিরসবুজ বনের গাছপালা এদের প্রিয় আবাস। তবে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি। দেখা যায় আসামে। এরা শক্ত লতার গাছ। এর একটি সাদা ভ্যারাইটি (alba) আছে।
এরা শক্ত ও কাঁটাময় লতা। ৮ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা প্রতিমুখ, সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত আড়াই থেকে ৪ সেমি লম্বা ও কর্কশ, গোড়া তাম্বুলাকার, উভয়পৃষ্ঠ অমসৃণ, করতলাকারে ৫ থেকে ৭টি শিরাল, বোঁটা মোড়ানো ধরনের, আগা চোখা, বোঁটা ১০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কিনারে আছে বেশ কয়েকটি লতি। সারা বছরই ফুল ফোটে, তবে গ্রীষ্মকালে বেশি ফোটে। ফুলগুলো লম্বা ঝুলন্ত ডাঁটায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। দেখতে অনেকটা ঘণ্টার মতো, দলনল সামান্য বাঁকা, হালকা নীল রঙের অসমান পাপড়ির সংখ্যা ৫টি। মিষ্টি গন্ধযুক্ত নীল লতার ফুলে প্রচুর মধু রয়েছে।
এদের পুংকেশর ৪টি, অর্ধসমান, গলদেশের ভেতরের দিক বাঁকানো, পরাগধানী ৫ থেকে ৯ সেমি লম্বা ও দীর্ঘায়িত। ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফল বেশ শক্তপোক্ত ধরনের, ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলের আগা চোখা। বংশবৃদ্ধি বীজ ও কাটিংয়ে অর্থাৎ বীজ থেকে বংশ বিস্তার ঘটে এবং কলমেও চাষ করা যায়।
ব্যবহার: নীল লতার শিকড়ের রস সর্পদংশনে উপকারী। তাছাড়া পাতার রস পাকস্থলির জটিল রোগে ব্যবহৃত হয়। মালয়েশিয়ায় এ গাছের পাতার ক্বাথ পেটের অসুখে কাজে লাগে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এ গাছের পাতা নানা কাজে ব্যবহার করে। বাগানের বেড়ায় এ ফুলের ঝুলন্ত সমারোহ সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এই প্রজাতিটি অস্ট্রেলিয়ার একটি গুরুতর পরিবেশগত আগাছা হয়ে গেছে এবং সেখানকার জলাভূমি ও ভেজা এলাকায় অন্য গাছপালার সাথে জন্মায়। এটা সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার সিডনির উত্তরে দেখা যায় এবং সেখানে এটি অনেক বছর ধরে চাষ করা হয়।
তথ্যসূত্র:
১. মোকারম হোসেন, দৈনিক সমকাল, ২১ অক্টোবর ২০১৪, পৃষ্ঠা ২০, ১৫।
২. দ্বিজেন শর্মা, ফুলগুলি যেন কথা, বাংলা একাডেমি, ঢাকা ডিসেম্বর, ২০০৩, পৃষ্ঠা-৭৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।