কুঁচ লতা-র সাতটি ভেষজ গুণ ও প্রয়োগ পদ্ধতির বর্নণা

কুঁচ লতা-এর বাংলাদেশ জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারী ১৯৯২-তে কেবল দুটি ওষুধের উপাদান হিসাবে ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। যেমন- গুঞ্জা ভদ্ররস (উরুস্তম্ভাধিকার) এবং ত্রিবৃত্যাদি মহাগদ (বিষাধিকার)। প্রথমোক্ত ওষুধটি উরুস্তম্ভ প্রশমক এবং শেষোক্তটি সর্পবিষ বা স্থাবর বিষ প্রশমক।

কুঁচ লতা-এর ঔষধি ব্যবহার:  

দুইরকম গুঞ্জাই বা কুঁচ লতা আছে তা হচ্ছে যথাক্রমে তিক্তরস এবং উষ্ণবীর্য। বীজ বমনকারক, শিকড় শুলনাশক এবং বিষাক্ত, পাতা বশীকরণ। তবে শ্বেত গুঞ্জাই বা কুঁচ উৎকৃষ্ট। এ ছাড়াও বেশকিছু লক্ষণে কুচের একক ব্যবহারে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া গিয়েছে যেমন-

১. শিরোরোগ: দুই কানের পাশ দিয়ে যে শিরা দু’টি বরাবর নেমে গিয়ে বুক পর্যন্ত পৌঁছেছে তাতে যন্ত্রণা হয়। বায়ুপ্রধান হলে এ শিরোরোগ সারাদিন টিপটিপ করে এবং সকাল ও সন্ধ্যায় বাড়ে। মুখের একধারে অথবা গোটা মুখে কালো ছোপ পড়বে অথচ লাল হয়ে থাকবে। কুঁচফলের নস্যি নিলে এ শিরোরোগ সেরে যায়।

২. বমি: অনভ্যস্ত বা গুরুপাক খাবার, যেমন কোনো তেল বা ঘি খাওয়ার পর যদি বমি-বমি ভাব হয়, তখন কুঁচের মুল ৩ থেকে ৪ গ্রাম বেটে ঈষদুষ্ণ ১ কাপ পানিতে মিশিয়ে খেলে বমি হয়ে শান্তি পাওয়া যায়।

৩. পেটে শূলবেদনা: বায়ু, পিত্ত বা শ্লেষ্ম, যেজন্যই হোক পেটে শূলবেদনা হলে কুঁচের পাতা থেঁতলে তার রস ১০ থেকে ১২ ফোঁটা আধকাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শুলব্যথাটা চলে যায়। কুঁচের পাতা বেটে পেটে প্রলেপ দিলেও ব্যথা কমে।

৪. মাথায় টাক: বংশগত টাক না হয়ে কোনো রোগ ভোগা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ মাথায় টাক পড়লে সাদা কুঁচ বেটে মাথায় প্রলেপ দিলে উপকার হয়।

৫. ফুস্কুড়ি: ছোট ছোট ফসকুড়ির সঙ্গে চুলকানি, যা সহজে সারানো যায় না, এমন ক্ষেত্রে কুঁচ ফল বাটা তিল তেলে পাক দিয়ে সে তেল লাগালে চুলকানি সেরে যায়।।

আরো পড়ুন:  নেপালি গাইনুরা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ

৬. গর্ভপাত: গর্ভপাত ঘটাতে বীজচুর্ণ ব্যবহার করা হয়। সায়েটিকা, অন্ধপ্রদেশের জড়তা দূর করা এবং পক্ষাঘাতে বীজের গুঁড়া ব্যবহার করা হয়।

৭. শ্লেষ্মাজনিত সমস্যায়: শ্লেষ্ম বা বাত-শ্লেষ্ময় বা ধুলা, ধোয়া, রোদ, অজীর্ণদোষে শিরঃপীড়া হলে সাদা কুঁচফল চূর্ণ করে হেঁকে নস্যি নিলে মাথার ভার কমে যায়, বায়ু সরল হয়ে যায়। নস্যি সকালে ব্যবহার করা উচিত এবং যেহেতু কুঁচচুর্ণ। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীকে (mucous membrane) খুবই উত্তেজিত করে, সেহেতু পরিমাণে অধিক নেয়া ঠিক নয়।

কুঁচ কোন কোন কাজে লাগে তা নিয়ে যেমন ব্যাপক গবেষণা হয়েছে, এ গাছের। শিকড়, বীজ, পাতায় কী রাসায়নিক দ্রব্য আছে তাও দেখা হয়েছে । চণিত শিকড়ে আছে প্রেকল, এবরল, গ্লাইসিরিজিন এবং দুটি এলকালয়ড, যথা : এব্রাসিন এবং প্রিকাসিন। কুঁচ পাতার স্বাদ মিষ্টি। এতে আছে গ্লাইসিরিজিন, স্যাটুরেটেড অ্যালকোহল, পিনিটল। বীজের প্রধান বিষাক্ত উপাদান হলো এব্রিন। এ ছাড়া বীজে আরও আছে এলকালয়ড-এব্রিন, হাইপাফোরিন, কোলিন, ট্রাইগোনেলিন, প্রিকাটোরিন ।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার),  দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ৩১-৩৩।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Len Worthington

Leave a Comment

error: Content is protected !!