পুঁই শাকের নানাবিধ ব্যবহার ও ঔষধি গুণ

পুঁই শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Basella alba) বাসেলাসি পরিবারের বাসেলা গণের বহু শাখা প্রশাখা যুক্ত, সরস লতা জাতীয় শাক। এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ। বাঙালির খাদ্য তালিকায় একটি জনপ্রিয় শাক পুঁই। প্রবাদে আছে-শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই। পুঁইশাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

পুঁই পৃথিবীর বাণিজ্যিক সুস্বাদু শাক

এখানে পুঁইয়ের ঔষধি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

১. পুঁই শাক দিয়ে বার্লি রান্না করে একটু, দই মিশিয়ে খেলে, বেশি মদ খাওয়াতে যে সব দোষ জন্মে, সে সব দোষ সারাতে এই পুঁই আহার এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

২.  অর্শ রোগীর অতিরিক্ত রক্তস্রাব দেখা দিলে এই শাক, কুল ও ঘোল একসঙ্গে সিদ্ধ করে খাওয়ার উপদেশ। এ দুটি চরক সংহিতায় লেখা আছে।

৩. এও শোনা যায় এটার রসের সঙ্গে ছাগল দুধ মিশিয়ে ৫ থেকে ৭ দিন খাওয়ালে হুপিং কাশির প্রকোপ কমে যায়। অপকারের সম্ভাবনা যখন নেই।

৪. কোনো কোনো দেশের গ্রাম্য-চিকিৎসকরা গায়ে শীতপিও (যাকে আমরা চলতি কথায় আমবাত বলি, ডাক্তারী নাম urticaria) বের হলে এর চুলকানো নিবারণের জন্য গা মাখতে দিয়ে থাকেন। এটা Indian Medicinal Plants’ বইতে লেখা আছে।

৫. পুঁই ডাটা টুকরো টুকরো করে কেটে শুকিয়ে নিয়ে পুড়িয়ে (অন্তর্ধুম) তার ছাইগুলির সঙ্গে একটু, নারকেল তেল মিশিয়ে খোসে ও কাউর ঘায়ে মাখলে অচিরে ওগুলি শুকিয়ে যায়।

৬.  প্রাচীন কবিরাজবৃন্দ আর একপ্রকারে পুইশাকের আশ্চর্য শক্তির প্রত্যক্ষ ফল দেখেছেন পুঁইপাতা আধসের। খাঁটি সরিষার তৈল আধপোয়া। পাতার রসটি তেলে জ্বাল দিয়ে (জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে শিশিতে ভরে রাখতেন। ঐ তৈল দিয়ে নালী ঘা ও পচা ঘা সারাতেন।

৭.  কোনো কোনো প্রানের গ্রাম্য বৈদ্য রপতায় পাকা পুঁইবীজের বেগুনি রঙের রস খেতে বসেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ফলও হয় চমৎকার।

আরো পড়ুন:  শতমূলী বা শতবরী বাংলাদেশের বর্ষজীবী ঔষধি বীরুৎ

গত ১৯৩৩ সালে ফিলিপাইন ও জার্মানীতে এই পুইশাকের খাদ্যপ্রাণ সম্পর্কে গবেষণা করে পেয়েছেন ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’। ১৯৪০-এ এদেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে তার মধ্যে পেয়েছেন প্রটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রণ।

এছাড়া বিভিন্ন আয়ুরবের্দিক চিকিৎসকের পরামর্শ-

চরক-১.  অতিসারে উপোদিকা: পুঁইশাক দই ও ডালিমের রসের সাথে সিদ্ধ করে যত্নসহ খেটে হবে। ইহা প্রবাহিকায় প্রযোজ্য। (চরক চিকিৎসা—১০ অঃ)

সুশ্রুত- ২.  শ্লীপদে (গোদে): পুইশাকের রস উপকারী। রস খেতে হয় আর গরম করে প্রলেপ দিতে হয়।

বঙ্গসেন- ৩. বালকের সর্দিতে: পুঁইপাতার রস ব্যবহার্য। একটু, গরম করে।

৪. গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠবদ্ধতায়: পুইশাকের পাতার রস বিশেষ উপকারী। অবশ্য পঞ্চম ও ষষ্ঠ মাসের পর।

৫. পুইশাকের রস সিগ্ধকর, মূত্রকর এবং গণোরিয়ায় ও লিঙ্গপ্রদাহে উপকারী।

৬. পায়োরিয়ায়: পুঁইপাতা ও ডাঁটা পুড়িয়ে ছাই করে তাই দিয়ে দাঁত মাজলে বহুদিনের পায়োরিয়ায় চমৎকার ফল পাওয়া যায়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Vitamin viz, vitamin-A, vitamin-B. (b) Protein (different types), (c) Inorganic element viz., calcium, iron. (d) fixed oil (different types).

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৭-১৮।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro

Leave a Comment

error: Content is protected !!