সয়াবিনের (বোটানিক্যাল নাম Glycine max (L.)) বীজ থেকে নানা প্রকার খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়। সয়াবীনের দুধ এবং তা থেকে দই, ছানা প্রস্তুত এখন সর্বজনবিদিত। এছাড়া এটির সাহায্যে রুটি, কেক, বিস্কুট, ওমলেট, পোলাও, পায়েস, নানা প্রকার মিষ্টান্ন দ্রব্য প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত হয়।
সয়াবিন-এর উপকারিতা
১. রক্তহীনতায় : নানা কারণে শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। এমন অনেক রোগ আছে, তাতে আক্রান্ত হলে কিংবা কিছু কিছু ঔষধের অপব্যবহারে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। অবশ্য রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অগ্নিবল বিবেচনা করে সয়াবীনের দুধ বা দই প্রত্যহ দু’বেলা খেলে কিছুদিনের মধ্যে উপকারটা বুঝা যাবে। দুধ বা দই যাই নিন না কেন, সকালের দিকে কাপ খানিক ও বৈকালের দিকে কাপ খানিক খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে যাঁদের পেটের গোলমাল আছে, তাঁরা দুধটা না খেয়ে দই খেলে ভাল ।
২. মস্তিষ্ক দৌর্বল্যে : এ অবস্থার সৃষ্টি যেমন নানা রোগভোগের পর হতে পারে, তেমনি অপুষ্টির জন্যও হয়ে থাকে। যেজন্যই হোক না কেন, সকালের দিকে এক কাপ এবং বৈকালের দিকে এক কাপ ক’রে গরম করা সয়াবীনের দুধ প্রত্যহ কিছুদিন খেতে হবে।
৩. প্রসবান্তিক দুর্বলতায় : প্রসবের পর স্বাভাবিক কারণেই দুর্বলতা এসে থাকে। সেইসঙ্গে চামড়ায় কমনীয়তার অভাব এবং চুল পড়ার প্রবণতা বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই সময় প্রত্যহ সয়াবীনের দুধ অথবা দই, যেটা খেতে ভাল লাগবে, সকালে দিকে এক কাপ এবং বৈকালের দিকে এক কাপ খাওয়া যেতে পারে। আবার সকালের দুধটা খেয়ে, বৈকালে দুধের ছানা তৈরী করেও খেলে চলবে। ২/৩ মাস লাগাতার ব্যবহারে আবার পুরনো দিনের সৌন্দর্য ও উন্মাদনা ফিরে পাবেন।
৪. অপুষ্টিতে: এটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই অধিক দেখা দেয়। গরু বা মহিষের দুধ না পাওয়া গেলেও বিকল্প হিসেবে সয়াবীনের দুধও অতি উত্তম। হুজম ক্ষমতা বিবেচনা করে দুধ অথবা দই-এর মাত্রা ঠিক করতে হবে। হজম ক্ষমতা কম থাকলে আধ কাপ ক’রে দই দু’বেলা কিছু আহারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমের দিকে কিছুদিন খাওয়ানোর পর দুধ খেতে দেওয়া উচিত। মাঝে মাঝে ছানা তৈরি ক’রে তাতে উপযুক্ত মাত্রায় চিনি মিশিয়ে খাওয়ালেও চলবে ।
৫. যৌবনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে : কে না চায় যৌবনকে দীর্ঘস্থায়ী ক’রে সেটিকে মনের মত উপভোগ করতে ? এটা তো প্রতিটি হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা। তবে উপভোগ করার অর্থ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে । এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে সকালের দিকে এক কাপ ক’রে সয়াবীনের দুধ খেতে পারলে সব দিকটাই রক্ষা পায় । তবে যৌবন ঢলে পড়ছে পড়ছে হলে প্রত্যহ খেয়ে যাওয়া উচিত। এর দ্বারা কি নারী আর কি পুরুষ উভয়েই দীর্ঘ ও সুস্থ-সবল জীবন উপভোগ করতে পারবেন ।
৬. কোষ্ঠবদ্ধতায় : এটা কারুর ক্ষেত্রে সাময়িক, আবার কারুর ক্ষেত্রে অভ্যাসগত । এর হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে রাত্রে সয়াবীনের আটা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। এক ভাগ সয়াবীনের আটা আর ৪ ভাগ গমের আটা একসঙ্গে মিশিয়ে রুটি তৈরি ক’রে খেতে হবে । যাঁদের রুটি সহ্য হয় না, তাঁরা রাত্রের আহারের সঙ্গে এর দুধ বা দই খাবেন । সাময়িক কোষ্ঠবদ্ধতা হলে কয়েকদিনে চলে যায়, দীর্ঘদিনের এবং অভ্যাসগত হলে নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় । অবশ্য মাঝে মাঝে বন্ধ করলেও ক্ষতি নেই।
৭. মধুমেহ ও বহুমূত্র রোগে : খাদ্য হিসেবে সয়াবীনের দুধ, দই, আটার রুটি পরম উপাদেয় খাদ্য। এতে মিষ্টত্ব কম থাকায় কোন ক্ষতি করতে পারে না। সেজন্য এসব রোগীদের পথ্য হিসেবে অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে এটিকেও গ্রহণ করা উচিত ।
৮. সৌন্দর্য বর্ধনে : সুষম ব্যবস্থা ঠিক থাকলে শরীরের সৌন্দর্য ভালভাবেই বজায় থাকতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তা কি সম্ভব ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না। সমগ্র শরীরের মূল মূল যন্ত্রাংশকে ঠিক রেখে দেহে লাবণ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সয়াবীনের জুড়ি নেই । তাই সয়াবীনের দুধ অথবা দই ব্যবহার করা উচিত ।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৪৪-৪৫।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: rawpixel
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।