ঝিঙে বা ধুন্দল শরীর সুস্থ রাখে ও এর আছে নানা ভেষজ গুণ

বর্ষার সবজি ঝিঙে ধুধুল বা ধুন্দল। আয়ুর্বেদ মতে, ঝিঙে শীতল, মধুর, কফ ও বায়ু সৃষ্টি করে, পিত্ত নাশ করে এবং খিদে বাড়িয়ে তোলে। শ্বাসের কষ্ট অথাৎ হাঁপানি, জ্বর, কাশি ও কৃমির উপশম করে। মলের অবরোধ দূর করে, পেট পরিষ্কার করে দেয়।

সুস্থ থাকতে ঝিঙে বা ধুন্দলের ব্যবহার:

পাথরি দূর করতে: ঝিঙে লতার শিকড় গরুর দুধে বা ঠাণ্ডা জলে ঘষে সকালবেলা পর পর তিন দিনে খেলে পাথরি দূর হয়।

ঝিঙে কফকারক : ঝিঙে কফকারক এবং বাত ব্যাধি বৃদ্ধি করে। অনেকে বলেন বর্ষাকালে বেশি ঝিঙে খাওয়া ভাল নয়। এতে বায়ুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ঝিঙে হজম হয় দেরিতে এবং শরীরে আম সৃষ্টি করে। বর্ষাকালে রোগীদের পক্ষে ঝিঙে খাওয়া ভাল নয়। বর্ষাকালের এই সূলভ তরকারি শুধু সুস্থ ব্যক্তিরাই খেতে পারেন! সহজে হজম করবার জন্যে ঝিঙের তরকারি তেল দিয়ে রান্না করতে হবে এবং রসুন ফোড়ন বা রসুন বাটা দিতে হবে বাতের প্রতিষেধক হিসেবে।

ঝিঙে বা ধুন্দলের গুণ:

১. ঝিঙে দু রকমের তেতে ও মিষ্টি। তেতো ঝিঙে কৃমি ও শ্লেষ্মা নাশ করে। শূল, গুল্ম (বায়ু গোলক) ও অর্শ রোগের পক্ষে উপকারী।

২. ঝিঙের লতা স্বাদে তিক্ত কফ, অর্শ, শোথ, পান্ডু বা জনডিস, বমি, ক্ষয় রোগে (টিবি) হেঁচকি, কৃমি ও জরে উপকারী।

৩. তেতো ঝিঙেতে আছে জোলাপের গুণ অর্থাৎ তেতো ঝিঙে বিরেচক- পেট পরিষ্কার করায়, কখন করে। এছাড়াও মূত্র নিঃসারণ করায়।

৪. শুকননা ঝিঙের গুঁড়া নস্যের মতো করে নাকে দিলে মাথা ব্যথা সারে।

৫. অনেক চিকিৎসকের মতে পিলের অসুখে ও জ্বয়ে ঝিঙে ওষুধের মতো কাজ করে।

৮. উদরী (পেটে জল ভরে যাওয়া) রোগেও উপকার দেয়।

হাকিমি  ইউনানি মতে :

১. ঝিঙে জোলাপের কাজ করে, পিস্তের প্রকোপ করে এবং প্রমেহ (যৌনরোগ) সারিয়ে তোলে।

আরো পড়ুন:  মিষ্টি কুমড়া-এর ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

২. যাদের শরীয় রুক্ষ তাদের বেশি উপকার দেয়।

৩. ঝিঙের লতা ও পাতা কফ নাশক, শোথ, জনডিস, লিভারের অসুখ, ম্যালেরিয়া উপশম করে।

৪. কুষ্ঠ ও অর্শ রোগে উপকারী।

৫. তেতো ঝিঙে বেটে শরীরের ফোলা অংশে প্রলেপ লাগালে ফোলা কমে। বিশেষতঃ পাকা তেতো ঝিঙের প্রলেপ বেশি উপকার দেয় ।

৬. তেতো ঝিঙে রস নালী ঘায়ে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়।

৭. তেতো ঝিঙের বীজ বমি করায়।

আয়ুর্বেদ মতে, ধুন্দল স্নিগ্ধ, বলকারক, রুচি বৃদ্ধি করে, বায়ু নাশ করে, রক্তপিত্ত অথাৎ নাক, মুখ থেকে রক্তপড়া ও বমি কমায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, জ্বর, শোথ, কাশিতে শ্বাস রোগ ও কৃমি রোগে উপকারী।

বড় আকারের মিষ্টি স্বাদযুক্ত ধুন্দল মধুর, শীতল, বাতল (বাত বৃদ্ধি হয়) কফ কারক (কফ বৃদ্ধি করে), অগ্নিদীপক (খিদে বাড়ায়)। হাঁপানি, কাশি, জ্বর ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

তথ্যসূত্রঃ

১.সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা, ১১৪-১১৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!