ডেভিড হিউম ছিলেন ইংরেজ ভাববাদী দার্শনিক

ডেভিড হিউম (ইংরেজী: David Hume; ৭ মে ১৭১১ – ২৫ আগস্ট ১৭৬৬ খৃ.) ছিলেন ইংরেজ ভাববাদী দার্শনিক যিনি মনোবিজ্ঞানী এবং ঐতিহাসিক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। আরো পড়ুন জ্ঞানের সমস্যার যে ব্যাখ্যা হিউম উপস্থাপিত করেন তা পরবর্তীতে ভাববাদী দর্শনকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেন। ‘জ্ঞানের মূল হচ্ছে ভাব’- এ তত্ত্ব দুটি ধারার সৃষ্টি করে। জন লক বলেছেন, ভাবের মূল হচ্ছে অভিজ্ঞতা। বার্কলে বলেছেন, ভাবের মূল হচ্ছে মন। ভাব মনকে অতিক্রম করে বস্তু বা অভিজ্ঞতায় আদৌ পৌছতে পারে না। এ তর্কে হিউম যোগদান করে বললেন, এই বিরোধিতায় জ্ঞানের মূল সমস্যার কোনোরূপ মীমাংসা আদৌ সম্ভব নয়।

বস্তু আছে কি নেই’ এরূপ প্রশ্নের সমাধান ভাবের তত্ত্ব দ্বারা কোনোরূপে সম্ভব নয়। হিউমের মতে আসলে মানুষ বস্তুর জ্ঞান আদৌ লাভ করতে পারে না। তার অর্থ এই নয় যে, বস্তু নেই-একথা মানুষ জানতে পেরেছে। বস্তু আছে বা নেই জ্ঞান দ্বারা মানুষ এর কোনো উত্তরই দিতে পারে না। বস্তুর সঠিক জ্ঞান বলতেও কিছু নেই। সঠিকজ্ঞান কেবলমাত্র অঙ্কশাস্ত্রেই সম্ভব। কারণ, অঙ্কের কারবার বস্তু নিয়ে নয়, সংখ্যা নিয়ে, সূত্র নিয়ে। সংখ্যা বা সূত্র কোনো বস্তু নয়।

জ্ঞানের মূল কাজ বস্তুর অস্তিত্ব নির্ণয় করা নয়। জ্ঞানের কাজ হচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপনের সহায়ক মাধ্যম হওয়া। ভাবের প্রবাহ বা ধারা নিয়ে আমাদের সাধারণ জ্ঞান তৈরি হয়। কিন্তু ভাবের মূল কি, তা মানুষের অজ্ঞেয়। বস্তু আছে কি নেই  – দুটোই আমাদের অবিশ্বাসের ব্যাপার, প্রমাণের বিষয় নয়। আমরা বিশ্বাস করি, ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে। কোনো ঘটনাকে কোনো ঘটনার কারণ কিংবা ফল হিসেবে আমরা চিহ্নিত করি। কিন্তু ঘটনার মধ্যে কারণ কিংবা ফল আছে বলে প্রমাণ করা চলে না।

মানুষের মধ্যে যে সময় বোধ আছে, তা থেকে মানুষ ঘটনাসমূহকে কালের বুকে পূর্বাপর হিসেবে কল্পনা করতে পারে; কিন্তু তার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বার করে তার ভিত্তিতে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী সে করতে পারে না। মানুষ অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কেবল আশা করতে পারে যে, অতীতে যা ঘটেছে ভবিষ্যতেও তা ঘটবে। কিন্তু অনিবার্য পুনরাবৃত্তির নিয়ম সে আবিষ্কার করতে পারে না।

আরো পড়ুন:  সিসেরো ছিলেন প্রাচীন রোমের বাগ্মী, দার্শনিক এবং রাজনীতিক

ডেভিড হিউম অবশ্য মানুষের ভাবের রাজ্যকে অরাজক বলতে চান নি। মানুষ অভিজ্ঞতার মধ্যে অনেক ভাবকে শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে সংঘটিত হতে দেখে। কিন্তু কার্যকারণের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস এক কথা, আর তার অস্তিত্ব প্রমাণ আর এক কথা। মোট কথা, জ্ঞানের সমস্যার বিশ্লেষণে হিউম দেখাতে চেয়েছেন যে, মানুষের পক্ষে জ্ঞান অর্থাৎ বস্তুর লাভ সম্ভব নয়। এই জন্য হিউমকে অজ্ঞেয়বাদী বলে অভিহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২০১-২০২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!