হেরাক্লিটাস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক

হেরাক্লিটাস (ইংরেজি: Heraclitus; ৫৩৫-৪৭৫ খ্রি. পূ.) ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক। বিরামহীন পরিবর্তনের ব্যাখ্যাতা হিসাবে তাঁর বিশেষ পরিচয়। এক নদীতে কেউ দুবার অবগাহন করতে পারে না, এ উক্তি বিখ্যাত হেরাক্লিটাসের বলেই পরিচিত।

হেরাক্লিটাস মনে করতেন, বিশ্বের মূল বস্তু হচ্ছে আগুন। আগুন প্রবাহ ও পরিবর্তনের উত্তম দৃষ্টান্ত। সমগ্র বিশ্ব এবং তার অভ্যন্তরের বিশেষ বিশেষ বস্তু, কিংবা আত্মা সবকিছুর উৎপত্তি ঘটেছে আগুন থেকে। বিশ্বের সৃষ্টি অলৌকিক কোনো দেবতা দ্বারা ঘটে নি। আগুনের আকারে বিশ্ব বা বস্তু সব সময়েই ছিল এবং সব সময়েই থাকবে। এই অস্তিত্বের মূলে আছে বিশ্বের নিজস্ব ‘লগোস’ বা বিধান।

হেরাক্লিটাস বিশ্বের প্রবাহকে মনে করতেন চক্রবৎ। এক চক্র বা এক কাল সমাপ্ত হলে বিশ্বের বস্তুপুঞ্জ আগুনে রূপান্তরিত হয়ে আর এক পরিক্রমা শুরু করে। নিয়ত পরিবর্তমান বস্তুপুঞ্জ নিজ নিজ অস্তিত্ব থেকে তার বিপরীতে পরিবর্তিত হতে থাকে। গরম ঠাণ্ডায় এবং ঠাণ্ডা গরমে রূপান্তরিত হয়। বস্তুর বিপরীতে পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সংঘর্ষ। বিপরীতের সংঘর্ষেই বস্তুর পরিবর্তন ও প্রবাহ। এই নিয়ত পরিবর্তন ও প্রবাহের ফলে জগতের কোনো কিছুই অপর কিছু থেকে বিযুক্ত নয়। সব কিছুর সঙ্গে সব কিছু যুক্ত। কাজেই সব কিছুই আপেক্ষিক।

জ্ঞানের প্রশ্নেও হেরাক্লিটাস ছিলেন বস্তুবাদী। তাঁর মতে ইন্দ্রিয় হচ্ছে জ্ঞানের মূল। ইন্দ্রিয়ানুভূতি এবং যুক্তি বা বুদ্ধি দ্বারা মানুষ সব রহস্যকেই ভেদ করতে পারে। মানুষের কাছে অজ্ঞেয় অলৌকিক কোনো জগৎ নেই। ‘প্রকৃতি’ সম্পর্কে হেরাক্লিটাসের বিখ্যাত রচনাংশ থেকে গবেষকগণ তাঁর দর্শন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর সমসাময়িক প্রায় সব দার্শনিকের চিন্তাধারার বিরোধী ছিল হেরাক্লিটাসের চিন্তাধারা।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৯৩-১৯৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!