কার্ল জাসপার্স (ইংরেজি: Karl Jaspers; ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৩ – ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ খিৃ.) ছিলেন জার্মান অস্তিত্ববাদী দর্শনের একজন প্রবক্তা। কার্ল জাসপার্স তাঁর দার্শনিক চিন্তা প্রধানত মনোবিকলনবিদ হিসাবে শুরু করেন। দার্শনিক সমস্যাসমূহের সমাধানে তিনি তাঁর মনোবিকলনবাদী চিন্তা দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হন।
জাসপার্সের মতে ব্যক্তির মনোবিকলন কেবলমাত্র মানসিক বিপর্যস্ততার প্রকাশ নয়; মানসিক বিপর্যস্ততা ব্যক্তিত্বের উৎস সন্ধানের প্রকাশ। ব্যক্তির এই আত্মানুসন্ধানই হচ্ছে দর্শনের মূল। জাসপার্স মনে করেন ব্যক্তির আসল সত্তা হচ্ছে সাইফার বা প্রকাশমান সংকেত। দর্শনের মূল কাজ হচ্ছে এই সংকেতের তাৎপর্য উদ্ধার করে চলা। জ্ঞান বলতে অর্জিত স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো তথ্য বা তত্ত্ব নয়। সংকেতের তাৎপর্য উদ্ধার করার প্রকৃয়াই হচ্ছে জ্ঞান। তা ছাড়া যুক্তির মধ্যেই জ্ঞান সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বে অযৌক্তি সত্তা অনেক আছে। অযৌক্তিক মানেই অসত্য নয়। দর্শনের অপর কাজ হচ্ছে এই অযৌক্তিক সত্যকে উপলব্ধি করতে ব্যক্তিকে সাহায্য করা।
জাসপার্সের অস্তিত্ববাদের প্রধান প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘বর্ডারলাইন সিচুয়েশন’ বা প্রান্তিক পরিস্থিতি বা বলা চলে ‘প্রান্তিক সংকট’ এর তত্ত্বে। ব্যক্তি তার অস্তিত্ত্বের সঠিক তাৎপর্য কেবল মাত্র কোনো গভীর সংকট মুহুর্তে উপলব্ধি করতে পারে। অসুস্থতা, মৃত্যু, অনুশোচনার ব্যতীত কোনো অপরাধবোধ-এ রকম সংকটকালেই ব্যক্তির রহস্যময় অস্তিত্বের সংকেত সঠিকভাবে উন্মোচিত হয়ে যায়। এমন মুহুর্তে ব্যক্তি তার প্রাত্যহিক লেনদেন, টানাপড়েন কিংবা সত্যের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বেড়াজাল থেকে পরিপূর্ণ এক মুক্ত অবস্থায় উপনীত হতে সক্ষম হয়। আর এমন মুহুর্তেই সে তার মূল অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়; সমস্ত সৃষ্টি ও শক্তির মূল যে বিধাতা তার অভিজ্ঞতায় ব্যক্তি এমনি মুহুর্তে গভীরভাবে অভিষিক্ত হয়।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৪৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।