নিভে গেল মনীষার কীবা সে প্রদীপ,
কীবা সে হৃদয় হায় থামালো স্পন্দন।[১]
নতুন পঞ্জিকা অনুসারে ১৮৯৫ সালের ৫ আগস্ট (২৪ জুলাই) লন্ডনে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের মৃত্যু হয়েছে। স্বীয় বন্ধু কার্ল মার্কসের (১৮৮৩) মৃত্যুর পর এঙ্গেলসই ছিলেন গোটা সভ্য দুনিয়ার আধুনিক প্রলেতারিয়েতের সবচেয়ে বিখ্যাত মনীষী ও গুরু। কার্ল মার্কসের সঙ্গে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের পরিচয়ের পর থেকে দুই বন্ধুর জীবনকর্ম হয়ে উঠে তাঁদের সাধারণ আদর্শ। আরো পড়ুন তাই প্রলেতারিয়েতের জন্য ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস কী করেছেন সেটা বোঝার জন্য আধুনিক শ্রমিক আন্দোলনের বিকাশে মার্কসের মতবাদ ও ক্রিয়াকলাপের তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করা দরকার। মার্কস ও এঙ্গেলস সর্বপ্রথম দেখান যে, শ্রমিক শ্রেণী ও তার দাবি দাওয়া হলো বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আবশ্যিক সৃষ্টি। এ ব্যবস্থা ও তার বুর্জোয়ারা অনিবার্যভাবেই প্রলেতারিয়েতকে সৃষ্টি ও সংগঠিত করে; তাঁরা দেখান যে মানবজাতি বর্তমানে যে দুর্দশায় নিপীড়িত তা থেকে তার পরিত্রাণ ঘটায় বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তির শুভ প্রচেষ্টা নয়, সংগঠিত প্রলেতারিয়েতের শ্রেণিসংগ্রাম। মার্কস ও এঙ্গেলস তাঁদের বৈজ্ঞানিক রচনায় প্রথম ব্যাখ্যা করেন যে সমাজতন্ত্র স্বপ্নদ্রষ্টার কল্পনা নয়, বর্তমান সমাজের উৎপাদন শক্তিগুলির বিকাশের চরম লক্ষ্য ও অপরিহার্য পরিণাম। এ যাবতকাল সমস্ত লিখিত ইতিহাস হল শ্রেণী-সংগ্রামের ইতিহাস, কতগুলি সামাজিক শ্রেণির উপর অন্য কতকগুলি শ্রেণীর প্রভুত্ব ও বিজয়ের পালাবদলের ইতিহাস, এবং তা চলতে থাকবে যতদিন না লোপ পাচ্ছে শ্রেণিসংগ্রাম ও শ্রেণি প্রভুত্বের ভিত্তি, অর্থাৎ ব্যক্তিগত মালিকানা ও বিশৃঙ্খল সামাজিক উৎপাদন। প্রলেতারিয়েতের স্বার্থের দাবি হল এই সব ভিত্তির বিলোপ, তাই সংগঠিত শ্রমিকদের সচেতন শ্রেণী সংগ্রাম চালিত হওয়া চাই এদের বিরুদ্ধে। আর প্রতিটি শ্রেণি সংগ্রামই হল রাজনৈতিক সংগ্রাম।
মার্কস ও এঙ্গেলসের এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমানে আত্মমুক্তি সংগ্রামী সমস্ত প্রলেতারিয়েত আয়ত্ত করেছে, কিন্তু ৪০-এর দশকে যখন দুই বন্ধু তৎকালের সমাজতান্ত্রিক সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলেন তখন এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেবারেই অভিনব। গুণী ও গুণহীন, সৎ ও অসৎ এমন বহু লোক তখন ছিলেন যাঁরা রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামে, রাজা, পুলিশ ও যাজকদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আচ্ছন্ন হয়ে বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের স্বার্থবিরোধ দেখতেন না। শ্রমিকেরা স্বাধীন শক্তি হিসাবে অবতীর্ণ হবে এ ভাবনাটাকেই তারা আমলে নিতেন না। অন্যদিকে ছিল বহু স্বপ্নদর্শী (কখনও কখনও আবার প্রতিভাবান), তাঁরা ভাবতেন সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থার অন্যায্যতা বিষয়ে সরকার ও শাসক শ্রেণীর প্রত্যয় জাগালেই পৃথিবীতে শান্তি ও সার্বজনীন কল্যাণ প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। বিনা সংগ্রামে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখতেন তাঁরা। শেষত, তদানিন্তন সমাজতন্ত্রীদের প্রায় সবাই এবং সাধারণভাবে শ্রমিক শ্রেণীর বন্ধুরা প্রলেতারিয়েতকে ভাবতেন একটা দুষ্টক্ষত হিসাবে এবং শিল্প বৃদ্ধির সঙ্গে সে দুষ্টক্ষত কীভাবে বাড়ছে দেখে আতঙ্ক হত তাদের। সেই জন্যেই তাঁরা সকলে ভাবতেন কীভাবে শিল্প ও প্রলেতারিয়েতের বৃদ্ধি রোধ করা যায়, থামানো যায় ‘ইতিহাসের চাকা’। প্রলেতারিয়েতের বৃদ্ধিতে এই সাধারণ ভীতির বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস তাঁদের সমস্ত ভরসাই রাখলেন প্রলেতারিয়েতের অবিরাম বৃদ্ধির উপর। যত বেশি হবে প্রলেতারিয়েত, বিপ্লবী শ্রেণী হিসাবে ততই বাড়বে তার শক্তি, ততই নিকটতর ও সম্ভবপর হয়ে উঠবে সমাজতন্ত্র। শ্রমিক শ্রেণীর জন্যে মার্কস ও এঙ্গেলসের যা অবদান সেটা অল্প কথায় এইভাবে বলা যায়: শ্রমিক শ্রেণীকে তাঁরা আত্মজ্ঞান ও আত্মচেতনার শিক্ষা দেন এবং স্বপ্নদর্শনের স্থানে স্থাপন করেন বিজ্ঞান।
এই জন্য এঙ্গেলসের নাম ও জীবনের কথা প্রতিটি শ্রমিকের জানতে হবে। সেইজন্যেই আমাদের সমস্ত প্রকাশনার মতো এই যে রচনাটির উদ্দেশ্য হল সকল দেশের শ্রমিকদের মধ্যে শ্রেণীগত আত্মচেতনা জাগিয়ে তোলা, তাকে আধুনিক প্রলেতারিয়েতের দুই মহাগুরুর অন্যতম ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের জীবন ও ক্রিয়াকলাপের একটি খসড়া আমাদের দেওয়া উচিত।
প্রুশিয় রাজ্যের রাইন প্রদেশের বার্মেন শহরে ১৮২০ সালে এঙ্গেলস জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কারখানা মালিক। ১৮৩৮ সালে সাংসারিক কারণে এঙ্গেলস উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ শেষ না করেই ব্রেমনের একটি সাওদাগরী হৌসে কর্মচারী হিসাবে ঢুকতে বাধ্য হন। বাণিজ্যের কাজের মধ্যেও নিজের বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক শিক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে এঙ্গেলসের বাধা হয় না। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি স্বৈরাচার ও আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতা ঘৃণা করতে শুরু করেন। দর্শনের চর্চা মারফত তিনি আরও অগ্রসর হন। সে সময় জার্মান দর্শনের ক্ষেত্রে ছিল হেগেলীয় মতবাদের প্রাধান্য এবং এঙ্গেলস তার অনুগামী হয়ে উঠেন। হেগেল স্বয়ং স্বৈরাচারী প্রুশিয় সরকারের পক্ষপাতি ছিলেন, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রূপে তিনি তার সেবায় রত ছিলেন, তাহলেও হেগেলের শিক্ষা ছিল বিপ্লবী। মানবিক যুক্তি ও মানবিক অধিকারের উপর হেগেলের বিশ্বাস এবং বিশ্বের পরিবর্তন ও বিকাশের চিরন্তন প্রক্রিয়া চলছে এই মর্মে তাঁর যে দর্শনের মূল প্রতিপাদ্যের ফলে বার্লিন দার্শনিকের যে সব শিষ্যরা চলতি অবস্থা মেনে নিতে চাইছিলেন না তাঁরা এই চিন্তায় উপনীত হন যে, চলতি অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, চলতি অন্যায় ও প্রভুত্বকারী অমঙ্গলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল নিহিত রয়েছে চিরন্তন বিকাশের সার্বজনীন নিয়মে। সবই যদি বিকশিত হয়ে উঠতে থাকে, যদি একটা প্রতিষ্ঠানের স্থান নেয় অন্য প্রতিষ্ঠান, তবে প্রুশিয় রাজা বা রুশ জারের স্বৈরাচারই বা কেন চিরকাল চলবে, কেন চলবে বিপুল অধিকাংশের ঘাড় ভেঙে নগণ্য অল্পসংখ্যকের ধনবৃদ্ধি, জনগণের উপর বুর্জোয়া প্রভুত্ব ? হেগেলে দর্শনে বলা হয়েছিল আত্মার ও ভাবের বিকাশের কথা, এটা ভাববাদী তত্ত্ব। আত্মার বিকাশ থেকে এ দর্শন পৌঁছাত প্রকৃতি, মানুষ ও জনগণের সমাজ সম্পর্কের বিকাশে। বিকাশের চিরন্তন প্রক্রিয়া বিষয়ে হেগেলের ভাবনা অব্যাহত রেখে[২] মার্কস ও এঙ্গেলস আগে থেকেই ধরে নেওয়া ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গি বর্জন করেন; জীবনের দিকে ফিরে তাঁরা দেখলেন যে আত্মার ও ভাবের বিকাশ দিয়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা তো হয়ই না বরং উল্টো প্রকৃতি দিয়ে, পদার্থ দিয়ে ব্যাখ্য করা উচিত আত্মার …. হেগেল ও অন্যান্য হেগেলপন্থীদের বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস ছিলেন বস্তুবাদী। বিশ্ব ও মানব সমাজের উপর বস্তুবাদী দৃষ্টিপাত করে তাঁরা দেখলেন যে প্রকৃতির সমস্ত ঘটনার পেছনে যেমন আছে বস্তুগত কারণ, মানব সমাজের বিকাশও তেমনি বস্তুগত, উৎপাদন শক্তির বিকাশের শর্তাধীনে। মানব চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদনে লোকে পরস্পরের সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করে তা নির্ভর করে উৎপাদন শক্তি বিকাশের উপর। আর এই পরস্পর সম্পর্ক দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায় সামাজিক জীবনের সমস্ত ঘটনার, মানবিক প্রচেষ্টা, ভাবনা ধারণা ও আইনের। উৎপাদন শক্তির বিকাশ থেকে সৃষ্ট হয় ব্যক্তি মালিকানার উপর স্থাপিত সামাজিক সম্পর্ক, কিন্তু আবার দেখি যে উৎপাদন শক্তি বিকাশেই ফের অধিকাংশের সম্পত্তি লোপ পায় আর তা কেন্দ্রীভূত হয় নগণ্য সংখ্যাল্পের হাতে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার যা ভিত্তি সেই মালিকানাই লুপ্ত হয় তাতে, তার বিকাশ হয় সেই লক্ষ্যের দিকে যা গ্রহণ করেছে সমাজতন্ত্রীরা। সমাজতন্ত্রীদের শুধু এই টুকুই বুঝতে হবে কোন সামাজিক শক্তি বর্তমান সমাজে তার স্বকীয় অবস্থানের কারণেই সমাজতন্ত্র স্থাপনে আগ্রহী, এবং আপন স্বার্থ ও ঐতিহাসিক কর্তব্যের চেতনা সে শক্তিকে দিতে হবে। এ শক্তি হল প্রলেতারিয়েত। এ শক্তির সঙ্গে এঙ্গেলসের পরিচয় হয় ইংল্যান্ডে, ইংরেজ শিল্পের কেন্দ্র ম্যাঞ্চেস্টারে, ১৮৪২ সালে তিনি এখানে এসে একটি সাওদাগরী হৌসে কর্মচারী হিসাবে ঢোকেন, তাঁর বাবা ছিলেন হৌসটির অন্যতম অংশীদার। এঙ্গেলস এখানে কেবল কারখানার অফিসে বসে থাকেননি, শ্রমিকরা যেখানে গাদাগাদি করে থাকতো সেই সব নোংরা বস্তির মধ্যে ঘুরে বেড়ান তিনি, নিজের চোখে তাদের নিঃস্বতা ও দারিদ্র্য দেখেন। শুধু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে তৃপ্ত না হয়ে তিনি ইংরেজ শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা সম্পর্কে তখন পর্যন্ত যা কিছু প্রকাশিত হয়ে উঠেছিল সব পাঠ করেন, আওতাধীন সমস্ত সরকারি দলিল তিনি খুঁটিয়ে অধ্যায়ন করেন। এই অধ্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের ফল হল ১৮৪৫ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা’। এঙ্গেলসের আগে অনেকেই প্রলেতারিয়েতের ক্লেশ বর্ণনা করে তাদের সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছেন। এঙ্গেলসই প্রথম বলেন যে প্রলেতারিয়েত শুধু একটি ক্লেশভোগী শ্রেণী নয়; যে লজ্জাকর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে সে রয়েছে, সেই অবস্থাটাই তাকে অপ্রতিরোধ্যরূপে সামনে ঠেলে দিচ্ছে ও নিজেদের চরম মুক্তির জন্য সংগ্রামে বাধ্য করছে। আর সংগ্রামী প্রলেতারিয়েত নিজেই সাহায্য করবে নিজেকে। শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক আন্দোলন অনিবার্যভাবেই শ্রমিকদের এই চেতনায় উপনীত করাবে যে সমাজতন্ত্র ছাড়া তাদের গত্যন্তর নেই। অন্যদিক থেকে, সমাজতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা হয়ে উঠবে শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক সংগ্রামের লক্ষ্য। ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা সম্পর্কে এঙ্গেলসের বইখানির এই হল মূল কথা, চিন্তাশীল ও সংগ্রামী প্রলেতারিয়েত এই ভাবনা আজ আত্মস্থ করে নিলেও সে সময় এটা ছিল একেবারে নতুন। এবং ভাবনা পেশ করা হয়েছিল যে বইখানায় সেটির রচনাশৈলী মুগ্ধ করার মতো, ইংরেজ প্রলেতারিয়েতের দুর্দশার অতি প্রামাণ্য ও রোমহর্ষক চিত্রে তা পরিপূর্ণ। এই বই হল পঁজিবাদ ও বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর অভিযোগপত্র। এর প্রভাব হয় অতি বিপুল। আধুনিক প্রলতারিয়েতেই অবস্থার সেরা ছবি হিসাবে সর্বত্রই এঙ্গেলসের বইটির উল্লেখ শুরু হয়। এবং বাস্তবিকই, শ্রমিক শ্রেণীর দুর্দশার এমন জ্বলজ্বলে ও সত্য বর্ণনা ১৮৪৫ সালের আগে বা পরে আর দেখা যায়নি।
এঙ্গেলস সোশ্যালিস্ট হয়ে ওঠেন কেবল ইংল্যান্ডেই। ম্যাঞ্চেস্টারে তিনি তদানীন্তন ইংরেজ শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ইংরেজ সমাজতন্ত্রী প্রকাশনাগুলিতে লিখতে শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে জার্মানিতে ফেরার পথে প্যারিসে মার্কসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ পরিচয় হয়, চিঠিপত্রের যোগাযোগ আগেই ঘটেছিল। মার্কসও প্যারিসে ফরাসী সমাজতন্ত্রী ও ফরাসি জীবনের প্রভাবে সমাজতন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন। দুই বন্ধু এখানে একত্রে লেখেন ‘পবিত্র পরিবার অথবা সমালোচনামূলক সমালোচনীয় সমালোচনা’। বইটি প্রকাশিত হয় ‘ইংল্যান্ডে শ্র্রমিক শ্রেণীর অবস্থা’র এক বছর আগে, এবং তার বেশির ভাগটাই মার্কসের লেখা; বিপ্লবী বস্তুবাদী সমাজতন্ত্রের প্রধান যে সব কথা আগে বলেছি, তারই বুনিয়াদ পেশ করা হয় এই বইয়ে। দার্শনিক বাউয়ের ভ্রাতারা ও তাঁদের অনুগামীদের ব্যঙ্গ নাম হলো ‘পবিত্র পরিবার’। এই ভদ্রলোকেরা এমন সমালোচনা প্রচার করতেন, যা সবকিছু বাস্তবতার উর্ধ্বে, পার্টি ও রাজনীতির উর্ধ্বে, সমস্ত ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপ তা বর্জন করে পরিপার্শ্বের জগত ও তার ঘটনাবলী নিয়ে কেবল ‘সমালোচনামূলক’ ভাবনায় ব্যাপৃত । শ্রীমান বাউয়ের সমালোচনায় অসমর্থ জনগণ হিসাবে প্রলেতারিয়েতের প্রতি নাক উঁচু ভাব করতেন। এই কান্ডজ্ঞানহীন ও ক্ষতিকর ধারার বিরুদ্ধে মার্কস ও এঙ্গেলস দৃঢ়চিত্তে দাঁড়ান। শাসক শ্রেণী ও রাষ্ট্র কর্তৃক দলিত শ্রমিক, এই বাস্তব একটি মানবিক ব্যক্তিসত্তার নামে তাঁরা শুধু ভাবনা নয়, উন্নত সমাজ গঠনের জন্যে সংগ্রামের দাবি করেন। সেরূপ সংগ্রাম চালাতে সমর্থ ও তাতে স্বার্থসম্পন্ন যে শক্তি, সেটা তাঁরা অবশ্যই দেখেন প্রলেতারিয়েতের মধ্যেই। ‘পবিত্র পরিবারের’ আগেই মার্কস ও রুগের ‘জার্মান ফরাসি পত্রিকায়’ এঙ্গেলসের ‘অর্থশাস্ত্র বিষয়ে সমালোচামূলক নিবন্ধ’[৩] ছাপা হয়, এতে সমাজতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল ঘটনাগুলিকে দেখা হয় ব্যক্তি মালিকানার প্রভুত্বের অনিবার্য পরিণাম হিসাবে। মার্কসের রচনায় যে বিজ্ঞানে পুরো একটা বিপ্লব ঘটে যায় সেই অর্থশাস্ত্রের চর্চা করার জন্যে মার্কস যে সিদ্ধান্ত নেন, তার পেছনে এঙ্গেলসের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনাটা নিঃসন্দেহে সাহায্য করেছে।
১৮৪৫ সাল থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত সময়টা এঙ্গেলস ব্রাসেলস ও প্যারিসে কাটান, এবং তাঁর বৈজ্ঞানিক চর্চার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাসেলস ও প্যারিসের জার্মান শ্রমিকদের মধ্যে ব্যবহারিক কাজকে মিলিয়ে নেন। এইখানে গুপ্ত জার্মান সমিতি ‘কমিউনিস্ট লীগের’ সঙ্গে মার্কস ও এঙ্গেলসের যোগাযোগ হয়, এ সব তাঁদের উপর ভার দেয় তাঁদের রচিত সমাজতন্ত্রের মূলনীতি উপস্থিত করার জন্যে। এইভাবেই জন্ম নেয় ১৮৪৮ সালে ছাপা মার্কস ও এঙ্গেলসের সুবিখ্যাত ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’। ছোট এই পুস্তিকাখানি বহু বৃহৎ গ্রন্থের মূল্য ধরে; সভ্য জগতের সমস্ত সংগঠিত ও সংগ্রামী প্রলেতারিয়েত আজও তার প্রেরণায় সজীব ও সচল।
১৮৪৮ সালের যে বিপ্লব প্রথমে ফ্রান্সে শুরু হয়ে পরে পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশেও বিস্তৃত হয়, তাতে মার্কস ও এঙ্গেলস দেশে ফেরেন। সেখানে, প্রুশিয়ার রাইন অঞ্চলে তাঁরা কলোন থেকে প্রকাশিত গণতান্ত্রিক ‘নতুন রাইনিশ গেজেটের’ প্রধান হয়ে উঠেন। রাইনিশ প্রুশিয়ার সমস্ত বিপ্লবী গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠেন দুই বন্ধু। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কবল থেকে জনগণের স্বার্থ ও স্বাধীনতা রক্ষা করে যান শেষ মাত্রা পর্যন্ত। সবাই জানেন, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জয়লাভ করে। ‘নতুন রাইনিশ গেজেট’ নিষিদ্ধ হয়, মার্কস দেশান্তরী জীবনযাত্রার সময় প্রুশিয় নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন, তাঁকে নির্বাসিত করা হয়, আর এঙ্গেলস সশস্ত্র গণবিদ্রোহে অংশ নেন, তিনটি সংঘর্ষে লড়াই করেন স্বাধীনতার জন্য, এবং বিদ্রোহীদের পরাজয়ের পর সুইজারল্যান্ড হয়ে লন্ডনে পালায়ন করেন।
মার্কসও সেখানে বসতি পাতেন। এঙ্গেলস অচিরেই ফের কেনানির কাজ নেন, এবং পরে ৪০-এর দশকে ম্যাঞ্চেস্টারে বাস করেন আর মার্কস থাকেন লন্ডনে, এতে তাঁদের একটা জীবন্ত মানবিক যোগাযোগ বাধা হয় না; প্রায় দৈনিক চিঠির আদান-প্রদান চলত তাঁদের। এই সব পত্রালাপে তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণার বিনিময় করেন এবং একযোগে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যান। ১৮৭০ সালে এঙ্গেলস লন্ডনে ফেরেন, এবং ১৮৮৩ সালে মার্কসের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের কর্মভারাক্রান্ত মানসিক জীবন চালিয়ে যান। এর ফল হলো মার্কসের দিক থেকে ‘পুঁজি’, আমাদের যুগের মহত্তম অর্থশ্রাস্ত্র্রীয় রচনা, আর এঙ্গেলসের দিক থেকে ছোট-বড়ো একসারি বই। পুঁজিবাদী অর্থনীতির জটিল ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করেন মার্কস। আর অতি সহজ ভাষায়, প্রায়ই বিতর্কমূলক রচনায় সাধারণ বৈজ্ঞানিক সমস্যা এবং অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে ইতিহাসের বস্তুবাদী বোধ ও মার্কসের অর্থনৈতিক তত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখেন এঙ্গেলস। এঙ্গেলসের এই সব রচনার মধ্যে উল্লেখ করবো: দ্যুরিঙের বিরুদ্ধে বিতর্কমূলক রচনা (এখানে দর্শন, প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের বড়ো বড়ো প্রশ্ন আলোচিত হয়েছে)[৪] ‘পরিবার ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’, ‘ল্যুদভিগ ফয়েরবাখ’ রুশ সরকারের বৈদেশিক নীতির উপর প্রবন্ধ, বাসস্থান সমস্যা নিয়ে চমৎকার প্রবন্ধাবলী, এবং পরিশেষে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ সম্পর্কে ছোটো হলেও দুটি অতি মূল্যবান নিবন্ধ। মার্কস মারা যান, ‘পুঁজি’ বিষয়ে তার সম্পূর্ণ রচনা গুছিয়ে যেতে পারেননি। খসড়া হিসাবে তা অবশ্যই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুর মৃত্যুর পর ‘পুঁজির’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড গুছিয়ে তোলা ও প্রকাশনের গুরুভার শ্রমে আত্মনিয়োগ করলেন এঙ্গেলস। ১৮৮৫ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় এবং ১৮৯৪ সালে তৃতীয় খন্ড (চতুর্থ খন্ড গুছিয়ে যেতে পারেন নি তিনি)। এই দুই খন্ড নিয়ে খাটতে হয়েছে অনেক। অস্ট্রীয় সোশ্যাল-ডেমোক্রাট আদলের সঠিকভাবেই বলেছেন যে, ‘পুঁজির’ দ্বিতীয় খন্ড ও তৃতীয় খন্ড প্রকাশ করে এঙ্গেলস তাঁর প্রতিভাবান বন্ধুর যে মহনীয় স্মৃতিস্তম্ভ গড়েছেন তাতে তাঁর অনিচ্ছাসত্ত্বেও অক্ষরে অক্ষরে নিজের নামটাই খোদিত হয়ে গেছে। সত্যিই এই পুঁজির এই দুই খন্ড হলো মার্কস ও এঙ্গেলস এই দুই জনের রচনা। পুরাকথায় বন্ধুত্বের অনেক মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্তের কাহিনী শোনা যায়। ইউরোপীয় প্রলেতারিয়েত এই কথা বলতে পারে যে, তাদের বিজ্ঞান গড়ে দিয়ে গেছেন এমন দুই মনীষী ও যোদ্ধা যাঁদের পরস্পর সম্পর্ক মানবিক বন্ধুত্বের সর্বাধিক মর্মস্পর্শী সমস্ত প্রাচীন কাহিনীকেও ছাড়িয়ে যায়। এঙ্গেলস সর্বদাই, এবং সাধারণত অতি সঙ্গতভাবেই নিজেকে রেখেছেন মার্কসের পেছনে। তাঁর এক পুরনো বন্ধুর কাছে তিনি লেখেন, ‘মার্কস থাকলে আমি দোহারের কাজ করেছি’।[৫] জীবিত মার্কসের প্রতি ভালবাসায় এবং মৃতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায় তার সীমা ছিল না। রুক্ষ যোদ্ধা ও কঠোর এই মনীষীর ছিল এক গভীর স্নেহশীল হৃদয়।
১৮৪৮-১৮৪৯ সালের আন্দোলনের পর মার্কস ও এঙ্গেলস নির্বাসনকালে কেবল বিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপৃত থাকেন নি। ১৮৬৪ সালে মার্কস স্থাপন করেন ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমিতি’ এবং পুরো দশ বছর ধরে তার নেতৃত্ব করেন। এ সমিতির কাজকর্মে এঙ্গেলসও সজীব অংশ নেন। শ্রমিক আন্দোলনের বিকাশ এই ‘আন্তর্জাতিক সমিতির’ কার্যকলাপের তাৎপর্য বিপুল, মার্কসের ভাবনা অনুসারে সমস্ত দেশের প্রলেতারিয়েতকে সম্মিলিত করেছে তা। কিন্তু ৭০-এর দশকে ‘আন্তর্জাতিক সমিতি’ বন্ধ হয়ে গেলেও মার্কস ও এঙ্গেলসের ঐক্য বিধায়ক ভূমিকা থামেনি। বরং বলা যেতে পারে শ্রমিক আন্দোলনের আত্মিক নায়ক হিসাবে তাঁদের তাৎপর্য অবিরাম বেড়ে গেছে, কারণ এই আন্দোলনই বেড়ে উঠেছে অবিচ্ছিন্নভাবে। মার্কসের মৃত্যুর পর এঙ্গেলস একাই ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রীদের উপদেষ্টা ও নেতার কাজ চালিয়ে যান। তাঁর কাছে পরামর্শ ও নির্দেশ যেমন চাইতেন জার্মান সমাজতন্ত্রীরা, সরকারি দমন সত্ত্বেও এঁদের শক্তি দ্রুত ও অবিচ্ছিন্নভাবে বেড়ে উঠে, -তেমনি চাইতেন পিছিয়ে থাকা দেশের প্রতিনিধিরা- যেমন স্পেনীয়, রুমানীয়, রুশীয়রা ভেবে চিন্তে মেপে মেপে যাঁদের পা ফেলতে হচ্ছিল। বৃদ্ধ এঙ্গেলসের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে এঁরা সকলেই আহরণ করেছেন।
মার্কস ও এঙ্গেলস দুজনেই রুশ ভাষা জানতেন, রুশী বই পড়তেন, রাশিয়া নিয়ে তাঁদের জীবন্ত আগ্রহ ছিল, রুশ বিপ্লবী আন্দোলনকে তাঁরা দরদ দিয়ে অনুসরণ করেছেন ও রুশ বিপ্লবীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। এরা দুজনেই গণতন্ত্রী থেকে সমাজতন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন, রাজনৈতিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঘৃণার গণতান্ত্রিক বোধ এঁদের মধ্যে ছিল প্রবল। এই প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক অনুভূতি এবং তৎসহ রাজনৈতিক স্বৈরাচারের সঙ্গে অর্থনৈতিক পীড়নের সম্পর্ক বিষয়ে গভীর তাত্ত্বিকবোধ ও সমৃদ্ধ জীবনাভিজ্ঞতার ফলে মার্কস ও এঙ্গেলস হয়ে উঠেন বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যাপারেই অসাধারণ সজাগ। সেই কারনেই পরাক্রান্ত জার সরকারের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় রুশ বিপ্লবীদের বীরোচিত সংগ্রাম অভিজ্ঞ এই বিপ্লবীদের হৃদয়ে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল সাড়া জাগায়। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন- রুশ সমাজতন্ত্রীদের এই অতি প্রত্যক্ষ ও জরুরি কর্তব্য থেকে সরে আসার হীন চেষ্টাটা তাঁদের চোখে স্বভাবতই সন্দেহজনক ঠেকেছিল এবং এমনকি সমাজিক বিপ্লবের মহাদর্শের প্রতি সরাসরি বেইমানি বলে তাঁরা গণ্য করেছিলেন। ‘প্রলেতারিয়েতের মুক্তি হওয়া চাই তাদের নিজেদের কাজ’[৬] – অবিরাম এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন মার্কস ও এঙ্গেলস। আর নিজেদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে সংগ্রাম করতে হলে কিছুটা রাজনৈতিক অধিকার প্রলেতারিয়েতকে জয় করতে হবে। তাছাড়া, মার্কস ও এঙ্গেলস পরিষ্কার দেখেছিলেন যে, পশ্চিম ইউরোপীয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষেও রাশিয়ায় রাজনৈতিক বিপ্লবের তাৎপর্য বিপুল। স্বৈরতন্ত্রী রাশিয়া চিরকালই ছিল ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়ার দুর্গ প্রাকার। ফ্রান্স ও জার্মনির মধ্যে দীর্ঘকালের মতো বিরোধ বপণ করে ১৮৭০ সালের যুদ্ধ রাশিয়াকে যে অসাধারণ অনুকূল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যে স্থাপন করেছিল তাতে অবশ্যই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হিসাবে স্বৈরতান্ত্রিক রাশিয়ার তাৎপর্যটাই বেড়েছে। পোলীশ, ফিনিশ, জার্মান, আর্মেনিয়ান ও অন্যান্য ছোট ছোট জাতিদের যার পীড়ন করার দরকার নেই, দরকার নেই অবিরাম ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানিকে লাগানোর, তেমন এক স্বাধীন রাশিয়া থাকলেই কেবল বর্তমান ইউরোপ তার সামরিক চাপ থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে, ইউরোপের সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল উপাদানগুলি দুর্বল হয়ে যাবে, এবং ইউরোপীয় শ্রমিক শ্রেণীর শক্তি বেড়ে উঠবে। তাই এঙ্গেলস পশ্চিমে শ্রমিক আন্দোলনের সাফল্যের জন্যেই রাশিয়ায় রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন সাগ্রহে। তাঁর মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে হারালো রুশ বিপ্লবীরা।
প্রলেতারিয়েতের মহাযোদ্ধা ও শিক্ষাগুরু ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের স্মৃতি অক্ষয় হোক ![৭]
তথ্যসূত্র ও টীকা
১. ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস প্রবন্ধের শীর্ষ উক্তিটি দেয়া হয়েছে রুশ কবি নিকোলাই আলেক্সেয়েভিচ নেক্রাসভের দব্রলিউবভ স্মরণে কবিতা থেকে।
২. মার্কস ও এঙ্গেলস একাধিকবার দেখিয়েছেন যে তাঁদের মানসিক বিকাশ বহু দিক থেকে মহান জার্মান দার্শনিকদের, বিশেষ করে হেগেলের নিকট ঋণী। এঙ্গেলস বলেছেন, ‘জার্মান দর্শন ছাড়া বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রও সম্ভব হতো না’। এঙ্গেলস এই কথা বলেছেন জার্মানির কৃষক যুদ্ধ গ্রন্থের মুখবন্ধে।
৩. ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের লেখা অর্থশাস্ত্র সমালোচনা প্রসঙ্গে খসড়ার কথা বলা হচ্ছে।
৪. এঙ্গেলসের লেখা অ্যাান্টি দ্যুরিং বইয়ের কথা বলা হচ্ছে। দ্যুরিংয়ের বিজ্ঞান ও বিপ্লব বই এবং অন্যান্য লেখার জবাবে এঙ্গেলস এটি লেখেন। দুঃখের বিষয় ১৮৯৫ সালে রুশ ভাষায় এই বইটির অনুবাদ খুব অল্পই হয়েছে একথা লেনিন ফুটনোটে উল্লেখ করেছিলেন। এঙ্গেলসের কল্পলৌকিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বইটি রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৮৯২ সালে। এটি মূলত অ্যান্টি-দ্যুরিং বইয়ের তিনটি অধ্যায়।
৫. ই ফ বেক্কের-এর কাছে ১৮৮৪ সালের ১৫ অক্টোবরের লেখা ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের চিঠির কথা বলা হচ্ছে।
৬. কার্ল মার্কস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমিতির সাধারণ নিয়মাবলী, ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস, কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারের ১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা।
৭. ভি. আই. লেনিন এঙ্গেলস বিষয়ে এই লেখাটি লিখেছিলেন ১৮৯৫ সালের শরতকালে। লেনিন রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডের ১-১৪ পৃষ্ঠায় এটি সংকলিত আছে। এখানে সংগৃহীত বাংলা অনুবাদটি প্রগতি প্রকাশন থেকে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত মার্কস এঙ্গেলস মার্কসবাদ গ্রন্থের ৪১-৫০ পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে।
ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন (এপ্রিল ২২, ১৮৭০ – জানুয়ারি ২১, ১৯২৪) ছিলেন লেনিনবাদের প্রতিষ্ঠাতা, একজন মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ। লেনিন ১৯১৭ সালে সংঘটিত মহান অক্টোবর বিপ্লবে বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান।