মার্টিন হাইডেগার (ইংরেজি: Martin Heidegger; ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮৮৯ – ২৬ মে ১৯৭৬ খ্রি.) জার্মান অস্তিত্ববাদী দার্শনিক। তিনি ফ্যাসিবাদের পোষকতা করে ১৯৩৩ সালে ফ্রাইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের পরে উক্ত পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়। অস্তিত্ববাদী চিন্তাধারায় হাইডেগার কিয়ের্কেগার্ডের অনুসারী। তবে কিয়ের্কেগার্ড যেখানে অন্ধবিশ্বাসের হাতে আত্মসমর্পণকে ব্যক্তির জন্য একমাত্র গ্রহণীয় পথ বলে চিহ্নিত করেছেন, সেখানে হাইডেগার নাস্তিকতার মনোভাব পোষণ করেন।
তার প্রবর্তিত দার্শনিকতত্ত্ব ও ধারণাগুলো শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্যসহ, রাজনৈতিক তত্ত্ব, সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ব, মনঃসমীক্ষা বিদ্যাকে প্রভাবিত করেছে। হাইডেগারের দর্শনের মূল হচ্ছে মুহুর্তবাদ-এর তত্ত্ব। উদ্বেগ, আশঙ্কা, ভীতি এগুলি হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের সহজাত স্মারক। এগুলির মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় মানুষের নিজস্ব অস্তিত্ব। নিজের অস্তিত্ব উপলব্ধির জন্য মানুষের প্রয়োজন হচ্ছে বাস্তব জগতের সমস্ত লক্ষ্য ও আদর্শের চিন্তা পরিত্যাগ করে জীবনের ভঙ্গুরতা, মৃত্যু, অনিত্যতা – এই মূল সত্যের মুখোমুখি হওয়া। জাগতিক দায়-দায়িত্ব, কামনা, স্বপ্ন অস্তিত্বের এই মৌলিক সত্য উপলব্ধি ব্যাহত করে।
তিনি মনে করতেন যে, আমরা বাস্তব জীবনে যেসকল বস্তু বা জিনিসের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকি; সেগুলোকে শুধু বাহ্যিকভাবে আমরা যা দেখি, কিন্তু ভেতরে তার চেয়েও বেশি কিছু থাকতে হবে। মার্টিন হাইডেগার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েই মাত্র মানুষ নিজের অস্তিত্বের মুহুর্তকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে। বিজ্ঞানের বিরোধিতা এবং জীবন সম্পর্কে গভীর হতাশা হচ্ছে হাইডেগারের অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৯২-১৯৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।