মার্টিন লুথার ইউরোপের সংস্কারবাদী আন্দোলনের নেতা

মার্টিন লুথার (ইংরেজি: Martin Luther; ১০ নভেম্বর ১৪৮৩ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৫৪৬ খ্রি.) ছিলেন পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের ইউরোপের সমাজ ও খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারবাদী আন্দোলনের নেতা এবং খ্রিস্টধর্মের প্রটেস্ট্যাট সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। লুথার ধর্মগ্রন্থ বাইবেলকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন। জার্মান ভাষার গঠনে লুথারের এই অনুবাদ কর্মের অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্র্রীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে যাজক শ্রেণীর যে বিরোধ চলে আসছিল লুথার তাতে প্রগতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্মজাযকদের হস্তক্ষেপ এর অধিকারকে হ্রাস করতে সাহায্য করেন। মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে কেবল গীর্জা এবং খ্রিষ্টধর্মই একমাত্র সংযোগসূত্র এবং যাজকরাই মাত্র মানুষের স্বর্গে গমনের ছাড়পত্র মঞ্জুর করতে পারেন, একথা লুথার বিশ্বাস করতেন না। লুথার বলতেন মানুষের মুক্তি ধর্মীয় আচরণের মধ্যে নিহিত নয়। মানুষের মুক্তি বিশ্বাসের ঐকান্তিকতায়।

পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে সামন্তবাদ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির সঙ্গে পুঁজিবাদের যে বিরোধ চলছিল, তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় লুথারের ধর্মীয় ধারণা ও আন্দোলনে। এ বিরোধে লুথার অগ্রসর চিন্তার পরিচয় দেন এবং গোঁড়ামির বিরোধিতা করেন।

তবে লুথারের সামাজিক সংস্কার আন্দোলন এবং চিন্তাধারা দূর্বলতামুক্ত ছিল না। সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি আপোসের মনোভাব দেখিয়েছেন। উঠতি শহরগুলির সংস্কার আন্দোলনে তিনি শহরবাসীর স্বার্থের বিরোধিতা করেন। রাষ্ট্রীয় বিধানের মূল কি? রাষ্ট্র না মানুষের প্রকৃতি? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যথেচ্ছাচার রোধ করার জন্য আইনকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ঊর্ধ্বে স্থাপনের যে প্রয়োজনীয় আন্দোলন তখন জার্মানিতে চলছিল তাতে লুথার রক্ষণশীল মত অনুসরণ করেন। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে যে বিরাট কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তাতেও মার্টিন লুথার শাসক শ্রেণীর পক্ষ অবলম্বন করেন।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৭১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!