মো. আবদুল ওদুদ বাংলাদেশের একজন প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ

মো. আবদুল ওদুদ (জন্ম ১৭ আগস্ট ১৯৬৫) বাংলাদেশের একজন প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। মূলত বাংলা ভাষায় দর্শন, সমাজদর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে তিনি অনেকগুলো পুস্তক রচনা করেছেন। তাঁর চিন্তা মূলত দর্শন, ইতিহাসের দর্শন এবং মানুষের চিন্তাধারার দর্শন নিয়ে আলোচিত হয়েছে। তিনি বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকগুলো পুস্তক রচনা করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগতকে প্রসারিত করতে সাহায্য করছেন।

দার্শনিক জন রোলস প্রভাবিত এই মানুষটি মানবিকবাদ, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা সংক্রান্ত মতবাদ দ্বারা বহুল আলোড়িত। এছাড়াও সামাজিক সাম্য সংক্রান্ত উদারতাবাদী চিন্তা তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা  

আবদুল ওদুদ ১৯৬৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার দামোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ প্রকৃতি, গন্দর নদী এবং কৃষিজ ভূমি তাঁর শৈশবের চিন্তাকে প্রভাবিত করেছে।

তিনি ১৯৭০ সালে বীরগড় প্রাথমিক বিদ্যলয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি রণহাট্টা চৌরঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক, রাণীশনকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে এসএসসি এবং পীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, ঠাকুরগাঁও থেকে ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞানে এইচএসসি পাস করেন। তিনি দর্শন শাস্ত্রে জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল ওদুদ

আবদুল ওদুদের পিতার নাম মো. সাবের আলী এবং মাতার নাম শাহেরা খাতুন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাঁর স্ত্রী ড. আলেয়া পারভীন একজন স্বনামধন্য লেখক। তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় সন্তান রেশাদ আহমেদ মুগ্ধ এবং ছোট সন্তান রাইয়ান আহমেদ স্নিগ্ধ । তাঁর ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট হচ্ছেন প্রাবন্ধিক লেখক অনুপ সাদি

লেখক জীবনে আবদুল ওদুদ

আবদুল ওদুদ ছাত্র জীবন থেকেই পত্রিকা, ম্যাগাজিন, স্মরণিকা ও বার্ষিকীতে লিখেছেন। তিনি ১৯৭৮-৮৩ সালে দৈনিক করতোয়ার স্থানীয় সংবাদাতা হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, ইনকিলাব, আল আমিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় উপসম্পদকীয়, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি প্রকাশ করেন। তিনি সাপ্তাহিক দিজ উইক, প্রস্তাব, ইদানিং এবং গ্লিমস ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রাবন্ধিক ও সম্পদনা সহকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।

২০০৭ সালে প্রকাশিত তাঁর ধর্মদর্শন গ্রন্থটি পাঠক, ছাত্র ও শিক্ষক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমাজ ও রাষ্ট্রের দার্শনিক চিন্তা (২০০৮), রাষ্ট্রদর্শন (২০০৯), সমাজদর্শন (২০০৯), আধুনিক ও সমকালীন রাষ্ট্র চিন্তা (২০১০), সমকালীন সমাজ দর্শন (২০১০), প্রায়োগিক নীতিবিদ্যা (২০১১), সমকালীন মুসলিম চিন্তা (২০১২), পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ (২০১৩), সাধারণ নীতিবিদ্যা (২০১৩), রাজনৈতিক তত্ত্বের পরিচিতি (২০১৩) আলেয়া পারভীন সহযোগে, শিক্ষা দর্শন (২০১৪), ভারতীয় দর্শন (২০১৪), ইসলামে দার্শনিক চিন্তার উন্নয়ন (২০১৪), নন্দনতত্ত্ব (২০১৫), মনোদর্শন (২০১৬) ও ভাষা দর্শন (২০১৬)। তিনি এখনও নিয়মিত লিখে চলেছেন।

সাংগঠনিক কাজে আবদুল ওদুদ

আবদুল ওদুদ ১৯৮৭ – ৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে এরশাদ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি ১৯৯০ এর দশকে নকল বিরোধী আন্দোলনে, শূন্য দশকে অসম্পদায়িক শিক্ষানীতি প্রবর্তন ও সংযোজনে মতামত তৈরি প্রচার করে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একুশ শতকের প্রথম দশকজুড়ে তিনি সরকারি কলেজসমূহে গাইডবই বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেন ও কোচিং বিরোধী মনোভাব তৈরিতে কাজ করেছেন। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং সিলেবাসে প্রগতিশীল বিষয় সংযোজনে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

আবদুল ওদুদ আ ফ ম আজিজুল হকের সাথে ঢাকার লালবাগে মেট্রোপলিস কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং উক্ত কলেজে জুলাই, ১৯৯১ থেকে আগস্ট ১৯৯৬ পর্যন্ত দর্শন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকাস্থ ঢাকা স্টেট কলেজ এবং পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আগস্ট ১৯৯৬ সালে ১৬তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষায় যোগদান করে এ যাবত চাকুরীরত আছেন। তিনি কুমিল্লা, নরসিংদী, চাঁদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৯৭৯ সালে নিজ গ্রামে নবীন সংঘ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ঢাকাস্থ নব যুগ বয়েজ ক্লাব, দিনাজপুর জেলা সমিতি, রংপুর বিভাগ বাস্তবয়ন ও উন্নয়ন পরিষদ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পরিষদ, চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ এতিমখানা সমিতি, সার্ক ইউথ ফোরাম, ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংস্কৃতিক ও সমবায়মূলক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সম্পাদক ও সদস্য পদে থেকে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। তিনি নিজ জেলা ও দেশব্যাপী বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, সংগঠন, ক্লাব, এনজিও ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, এসবের অবকাঠামোগত উন্নয়নে, কর্মচারীদের জন্য অনুদান সংগ্রহে, খেলাধুলার সরঞ্জামাদি সংগ্রহে এবং এম্বুলেন্স সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।

তথ্যসূত্র:

১. অজয় কুমার রায় (আগস্ট ২০১৮)। “রাজনৈতিক ও গুণী ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি”। ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস (২ সংস্করণ)। ঢাকা: টাঙ্গন প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ২৩৮-২৩৯। আইএসবিএন 978-9843446497।

Leave a Comment

error: Content is protected !!