মতিকণ্ঠ১ আর আমিষুল লামা২র কল্যাণে প্রথমে মনে হয়েছিল মুসা ইব্রাহীম (জন্ম: ১৯৭৯) রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় ও মহান। কিন্তু দিন যাইতে থাকিল আর মশার বুজরুকি ধরা পড়তে থাকিল। আমরা যারা কোনোদিন পাহাড় দেখি নাই তাদেরকে ঘোলা ছবি দেখাইয়া ঘোলা পানিতে মুসা প্রচুর মাছ শিকার করিলেন। আর রানা প্লাজা ধ্বসের পর উদ্ধারকারীদের মাঝে খাড়াইয়া হাসি মুখে পোজ মারা একখানা ফটো দেখাইয়া আমাদের কৃপানুভুতি পাইতে তিনি ব্যর্থ হইলেন।
আর আমি ১৯ জুলাই ২০১১ সালে, প্রথম আলো পত্রিকার সপ্তম পৃষ্ঠায় এক ফটো দেখিলাম, শ্রদ্ধাস্পদ দ্বিজেন শর্মা৩ (জন্ম: ১৯২৯) গাছ লাগাইতেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আর মুসা গাছের গোড়ায় ঘোলা পানি ঢালিতেছে। পত্রিকা লিখা দিছে ১৬ কোটি মানুষের দেশে চার বছরে মুসা ১৬ কোটি গাছ লাগাইবেন। আমি আপ্লুত হইয়া মুসা ইব্রাহীমের সাথে জীবনে একবার কথা কহিয়াই বুঝিলাম তিনি এখন ধাপ্পাবাজি করিয়া চলিতেছেন। ১৬টি গাছকে তিনি ১৬ কোটি বলিয়া চালাইয়া দিয়াছেন। আজ প্রায় চার বছর হইয়া গেল মুসা গাছ লাগানোর কথা ভুলিয়া গিয়াছেন।
আর একদিন খবর বাহির হইল ‘সাগরতলের সাঁতারের পোশাক আর মাছের মতন কৃত্রিম পা পরে সাঁতারের প্রস্তুতি নিয়েও সাঁতার না দিয়ে ট্রলারে চড়ে গন্তব্যে পৌছালেন মুসা ইব্রাহীম। তার বিরুদ্ধে এভারেস্ট জালিয়াতির অভিযোগের ন্যায় বাংলা চ্যানেল জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে’।
জনগণের সাময়িক বেকুবিকে বাগে আনিয়া আপনি যাহা দেখাইলেন তাহা আমাদের স্মরণে থাকিবে বহুকাল। মীরজাফর হইতেও প্রচুর টাকা খরচ করিতে হয় তাহা ওইতিহাসিক মীরজাফর৪ (১৬৯১-১৭৬৫) ও আপনি_ দুজনেই আমাদেরকে শিখাইলেন।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: মিছা ইব্রাহীমের গাছ লাগানোর ভণ্ডামো, ১৯ জুলাই ২০১১, প্রথম আলো, পৃষ্ঠা ৭।
তথ্যসূত্র ও টিকা:
১. প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের (জন্ম: ১৯৪৬) নামানুসারে প্রথম আলোকে ব্যঙ্গ করে মতিকণ্ঠ বলা হয়। মতিউর রহমান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী এক প্রতিক্রিয়াশীল কর্পোরেটের সেবাদাস।
২. আনিসুল হক (জন্ম: ১৯৬৫) একজন প্রতিক্রিয়াশীল মতিউর রহমানপন্থী সেবাদাস এবং প্রথম আলোর সহসম্পাদক। লীগ-বিএনপির রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখার জনপ্রিয় দুই কাণ্ডারী মতিউর রহমান ও আনিসুল হক। শেষের জনকে ব্যঙ্গ করে আমিষুল লামা বলা হয়।
৩. দ্বিজেন শর্মা প্রকৃতিবিদ ও লেখক। মার্কসবাদী রাজনীতির প্রতি অনুরাগী এই মানুষটি বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ওপর বেশ কিছু বই লিখেছেন।
৪. মীরজাফর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ক্লাইভের সাথে ষড়যন্ত্র করে বাংলাকে পরাধীন করেন। মীরজাফর শব্দটি বাঙলায় এখন বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক ও ধাপ্পাবাজ অর্থে ব্যবহৃত।
রচনাকাল: ৩০ মার্চ ২০১৪, ময়মনসিংহ।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।