ভিলফ্রেডো পারেতো ছিলেন এলিট বা শ্রেষ্ঠবাদের প্রবক্তা

এলিট বা শ্রেষ্ঠবাদের প্রবক্তাদের অন্যতম হচ্ছেন ইতালির লেখক ভিলফ্রেডো পারেতো (ইংরেজি: Vilfredo Federico Damaso Pareto, ১৫ জুলাই ১৮৪৮ – ১৯ আগস্ট ১৯২৩ )। তাঁর পরিচিত একখানি গ্রন্থের নাম ‘দি মাইন্ড এন্ড সোসাইটি’। এলিটবাদের অপর এক প্রবক্তা ছিলেন ইতালিরই গায়তানো মসকা (১৮৫৮-১৯৪১)। তাঁর পরিচিত গ্রন্থের নাম ‘দি রুলিং ক্লাস’।

একথা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ইউরোপে পুঁজিবাদের পূর্ণতর বিকাশ একদিকে যেমন নানা আর্থিক ও সামাজিক সংকটের সৃষ্টি করেছিল তেমনি অপরদিকে শোষিত শ্রেণীসমূহের মধ্যে চেতনার বিস্তার ঘটছিল। এই সময় কলকারখানাগুলিতে শ্রমিক শ্রেণির জীবনধারণের সঙ্গে যুক্ত শ্রমের সময়, কাজের নিরাপত্তা, মজুরি বৃদ্ধি প্রভৃতি দাবির ভিত্তিতে জঙ্গি আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এসব আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক দর্শন ও সংগঠনের নেতৃত্বে সাধারণ অর্থনৈতিক চরিত্র অতিক্রম করে রাজনৈতিক চরিত্র ধারণ করতে থাকে। এরই একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রকাশ ঘটে ১৮৭১ সনে প্যারিসের শ্রমিক অভ্যুত্থানে এবং শ্রমিকদের কমিউন শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। তাঁদের এমন অভ্যুত্থান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার হাতে নির্মমভাবে দমিত হয়।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নির্মমতার ঘটনাসমূহতে পুঁজিবাদী চিন্তাবিদদের একাংশের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামী দর্শনের পাল্টা হতাশবাদী দর্শন তৈরির প্রয়োজন বোধ দেখা দেয়। ক্রমবর্ধমান সংকট থেকে পুঁজিবাদকে রক্ষার অন্যতম আদর্শগত উপায় হিসাবে সমাজ বিকাশের এবং সমাজ প্রগতির প্রশ্নে সচেতনভাবে হতাশা সৃষ্টির এরা চেষ্টা করে। সংখ্যার চেতনা বা শক্তির কোনো মূল্য নেই। সাধারণ তথা নিষ্পেশিত মানুষ সংখ্যায় যত অধিকই হোক না কেন এবং গণতন্ত্র বা সাম্যবাদের তারা যত আন্দোলনই করুক না কেন, তাদের নিয়তি হচ্ছে সংখ্যালঘু দ্বারা নির্যাতিত হওয়া।

মানব সমাজ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। একটা হচ্ছে সংখ্যালঘু অপরটি হচ্ছে সংখ্যাগুরু। সংখ্যাগুরুরা সাধারণ। তাঁরা সংখ্যালঘুদের কূটবুদ্ধিতে, দক্ষতায়, বাগ্মীতে, প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত এবং মোহিত হয় এবং সংখ্যালঘু দ্বারাই শাসিত হয়। রবার্ট মিশেল (১৮৭৬-১৯৩৫) তাঁর ‘পলিটিক্যাল পার্টিস’ গ্রন্থে ‘আয়রন ল অব অলিগারিকি’ বা ‘সংখ্যালঘুর শাসনের অনিবার্য বিধান’ বলে তত্ত্ব প্রচার করেন। উল্লেখিত লেখকদের রচনায় সমাজের আর্থিক অবস্থা এবং বিকাশের বিশ্লেষণ শূণ্য কিছু নতুন রাজনৈতিক পদ তৈরি করে রাজনৈতিক বিধি ব্যবস্থাকে রহস্যজনক এবং বাঞ্জনীয় কোনো পরিবর্তনের উর্ধ্বে, এরূপ দেখাবার প্রবণতাই অধিক। প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর ইউরোপে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভবে এই সমস্ত চিন্তাবিদদের চিন্তা উর্বর উৎসভূমি হিসাবে কাজ করেছে।

আরো পড়ুন:  জুলিও কুরী ছিলেন ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী এবং বামপন্থী প্রগতিশীল চিন্তাবিদ

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩০৩-৩০৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!