পর্দাটা উসখুস করছে হাওয়ায়
যেন কেউ
আসবে কি আসবে না ভাবছে।
নিচে কারো চেনে-বাঁধা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে।
মশারির দড়িতে কয়েকটা মাছি,
ইঁদুরগুলো আলমারির আড়ালে অদৃশ্য,
বারান্দায় সারবন্দী টবে
ফুলের গাছ।
ইলেকট্রিক পাম্পে ঝিঁঝি-লাগা ফ্ল্যাটবাড়িটা
যেন মহাশূন্যে ঝুলছে।
দেয়ালে
ঘড়ির কাঁটায় বিদ্ধ সময়;
সমস্ত ভার হারিয়ে ফেলে আমি যেন ভাসছি।
পাম্পের শব্দ হঠাৎ থেমে গেলে
বাইরে এসে দাঁড়ালাম।
আমাদের এই শুকনো খটখটে রাস্তায়
কয়েকটা গাড়ি
ভিজে পায়ে
জলের দাগ বুলিয়ে চলে গেল।
জামাটা গায়ে গলিয়ে
ছুটে গিয়ে একবার দেখে এলে হত—
ঠিক কত দূরে
আশ্বিনের কানা মেঘ
এই পৃথিবী ছেড়ে আর কোথাও
যাবে কি যাবে না এই দ্বিধায়
রোদ আর বৃষ্টি দিয়ে
নিজেকে দু-ভাগ করছে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।