সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি
১৬. শিক্ষা ও ট্রেনিং
*** আমাদের শিক্ষানীতি এমন হওয়া উচিত, যারা শিক্ষালাভ করেন, তাঁরা যাতে নৈতিকভাবে, বুদ্ধিগতভাবে এবং শারীরিকভাবে বিকাশলাভ করতে পারেন এবং সমাজতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ও সংস্কৃতিসম্পন্ন শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)
*** কর্মরত বা কেডার স্কুলের শিক্ষারত কেডারদের শিক্ষা সম্পর্কে এমন একটা নীতি প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যাতে উক্ত শিক্ষা চীনা বিপ্লবের বাস্তব সমস্যার গবেষণাকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মৌলিক নীতিকে পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্যবহার করে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে নিশ্চল ও বিচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করার পদ্ধতি ত্যাগ করে। “আমাদের শিক্ষা সংস্কার করুন” (মে, ১৯৪১)
*** একটা সামরিক স্কুলের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষক বাছাই করা এবং একটা শিক্ষা নীতি নির্ধারণ করা। “চীনের বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতি সমস্যা” (ডিসেম্বর, ১৯৩৬)
*** কয়েকজন অথবা দশ-বিশজন লোক নিয়ে গঠিত নেতৃত্ব-মেরুদণ্ড না থাকলে, একশ’ লোকের স্কুল নিশ্চয়ই ভালভাবে চালানো যায় না; এই নেতৃত্ব-মেরুদণ্ড গড়ে উঠে বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে (কৃত্রিমভাবে একত্র করে নয়), শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রদের মধ্যে যারা সবচেয়ে সক্রিয়, সৎ ও সুচতুর তাঁদের নিয়ে। “নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কতিপয় সমস্যা” (১ জুন, ১৯৪৩)
*** আমাদের গোটা সৈন্যবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের অবশ্যই তাদের সামরিক কৌশলের উন্নতি করতে হবে, যুদ্ধে অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের উদ্দেশ্যে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে এবং সমস্ত শত্রুকে দৃঢ়ভাবে, নিঃশেষে, সাফ করে, সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। “চীনা গণমুক্তি ফৌজের ঘোষণা” (অক্টোবর, ১৯৪৭)
*** শুদ্ধিকরণ ও ট্রেনিংয়ের এক বছরের পরিকল্পনা বর্তমানে শুরু হয়েছে, এর মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক দুটি দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিতে হবে, আর এ দুটিকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। শুরুতে গুরুত্ব দিতে হবে রাজনৈতিক দিকে, অফিসার ও সৈনিকদের সম্পর্কের উন্নতির দিকে, অভ্যন্তরীণ ঐক্য দৃঢ় করার দিকে, আর কেডার ও সৈনিক সাধারণের সক্রিয়তাকে উচ্চমাত্রায় সঞ্চার করার দিকে, শুধুমাত্র এভাবেই সামরিক শুদ্ধিকরণ ও ট্রেনিং স্বচ্ছন্দে এগুতে পারে এবং আরও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। “১৯৪৫ সালের কর্তব্য” (১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
*** সৈন্যদের ট্রেনিংয়ের পদ্ধতির ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক ট্রেনিং আন্দোলন চালানো উচিত, এ ট্রেনিংয়ে অফিসাররা সৈনিকদের শেখান, সৈনিকরা অফিসারদের শেখান এবং সৈনিকরা পরস্পরকে শেখান। “মুক্ত এলাকায় ১৯৪৬ সালের জন্য কাজের নীতি” (১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৫)
*** সৈন্যদের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে আমাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘অফিসাররা সৈনিকদের শেখান, সৈনিকরা অফিসারদের শেখান এবং সৈনিকরা পরস্পরকে শেখান। যোদ্ধাদের অনেক বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে। যোদ্ধাদের কাছ থেকে অফিসারদের শিখতে হবে, অন্যদের অভিজ্ঞতাকে নিজেদের করে নিলে তারা আরও বেশি দক্ষ হবেন। “শানসী-সুইউয়ান দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা” (২ এপ্রিল, ১৯৪৮)
*** সৈন্যদের ট্রেনিংয়ের কার্যক্রমের ব্যাপারে, এখনও প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গুলিবর্ষণ, সংগীন চালনা, হাতবোমা নিক্ষেপ প্রভৃতি টেকনিকের মান উন্নত করা, গৌণ উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধকৌশলের মান উন্নত করা, আর নৈশযুদ্ধের অনুশীলনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া। “মুক্ত এলাকায় ১৯৪৬ সালের জন্য কাজের নীতি” (১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৫)
মাও সেতুং বা মাও সে তুং বা মাও জেদং (ইংরেজি: Mao Tse-Tung; ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ – ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ খ্রি.) মার্কসবাদী বিপ্লবী তাত্ত্বিক, সাম্যবাদী রাজনৈতিক নেতা, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং চীন ভূখন্ডের প্রায় শতাব্দীকালের সামাজিক রাজনীতিক মুক্তি ও বিপ্লবের নায়ক। জাপানি দখলদার শক্তি এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার কুওমিনটাং নেতা চিয়াং কাইশেকের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক বিপ্লবের জন্য চীনের অগণিত এবং অনুন্নত কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার কৌশলী হিসেবে মাও সেতুং এক সময় সমগ্র পৃথিবীতে সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণাদায়ক উপকথায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনি অনেক জটিল কথাকে জনগণের সামনে অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করতেন। জনগণের সেবায় মানবেতিহাসের সমস্ত জ্ঞানকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন।