এক পা বাইরে।
এক পা
মনের ভেতরে।
ডালে দোল খায়
আকাশকুসুম,
শৃঙ্খলে বাঁধা
স্মৃতি যায় ঘুম
শেকড়ে।
এক পা ওঠালে
এক পা
পেছনে ঠেলে।
এ যখন ছাড়ে
লাগে ওর টান
থেকে থেকে হলে
ওর উত্থান
এ পড়ে।
এক পা বাইরে।
এক পা
মনের ভেতরে।
এক পা বাড়ালে
এক পা
থাকবে আড়ালে।
ও যখন ভয়ে
নিজেকে গোটাবে
এ তখন রাগ
ফোটাবে ফোলানো
কেশরে।
এক পা বাইরে
এক পা।
মনের ভেতরে ।।
আরে ছো
কেটা এক চণ্ডীদাস ব’লে
কোথাকার কোন এক বোষ্টম
কবে কোন্ মান্ধাতা আমলে
বলেছে লাগিয়ে দম—
শুনহ, মানুষ সত্য
সবার উপরে।
তুমি তাই বিশ্বাস করেছ।
আরে ছো!
এখানে আমার সঙ্গে
তুমি এসো এই মোড়ে
চেয়ে থাকো।
দাঁড়াও, এখুনি পড়বে
এ রাস্তায় আরও একটা লাশ।
ফেটে পড়বে জয়গর্বে
উন্মত্ত উল্লাস।
শুনতে পাবে প্রাতঃস্মরণীয়
সকলের কণ্ঠস্বর –
জয়হিন্দ, জিন্দাবাদ যুগযুগজীও
বন্দেমাতরম্ আর
আল্লা হো আকবর।
শুনহ, মানুষ সত্য –
বলেছিল কোন এক হরিদাস
তুমিও তো বিশ্বাস করেছ।
আরে ছো!
তবু যদি হত কোনো মাংসাশী ও মেছে
বেদব্যাস—
বোঝা যেত
ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ-টুদ্ধ !
তা নয়, কে এক বুদ্ধু…
আরে ছো!
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।