ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস রচিত জ্ঞানগর্ভ পুস্তিকা কমিউনিজমের নীতিমালা

প্রশ্ন-১৮. এই [প্রলেতারিয়] বিপ্লবের কার্যক্রম কি হবে?

উত্তর: সর্বোপরি এই বিপ্লব একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করবে, এবং তা দ্বারা প্রলেতারিয়েতের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ রাজনৈতিক শাসন। ইংল্যান্ডে তা হবে সরাসরি, কারণ জনগণের অধিকাংশ সেখানে ইতিমধ্যেই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রলেতারিয়ান; জার্মানি ও ফ্রান্সে তা হবে পরোক্ষভাবে, কারণ সেখানে জনগণের অধিকাংশ শুধু প্রলেতারিইয়ান নিয়ে গঠিত নয়, জনগণের অধিকাংশের মধ্যে প্রলেতারিয়ান ছাড়াও রয়েছে ক্ষুদ্র কৃষকেরা ও পাতি-বুর্জোয়ারা— যারা এখন প্রলেতারিয়ানে পরিণত হবার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যারা তাদের সকল রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ক্রমবর্ধমানহারে প্রলেতারিয়েতের উপর নির্ভরশীল, যারা প্রলেতারিয়েতের দাবিগুলির মধ্যে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এজন্য দ্বিতীয় একটি সংগ্রামের প্রয়োজন হবে, কিন্তু তারও অনিবার্য ফল হবে প্রলেতারিয়েতের বিজয়।

গণতন্ত্র প্রলেতারিয়েতের জন্য সম্পূর্ণ মূল্যহীন হয়ে পড়বে যদি তাকে সংগে সংগে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরুদ্ধে এবং প্রলেতারিয়েতের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের অনুকূলে পরিকল্পনা গ্রহণের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। বর্তমান সম্পর্কসমূহের অনিবার্য ফল হিসেবে উদ্ভূত প্রধান পরিকল্পনাগুলো হবে নিম্নরূপ:

১. ক্রমবর্ধমান কর আরোপ, অত্যুচ্চহারে উত্তরাধিকার কর আরোপ, ভাই-ভাতিজা ইত্যাদি জ্ঞাতিত্বের উত্তরাধিকার বিলোপ, বাধ্যতামূলক ঋণ ব্যবস্থা প্রচলন ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পত্তির সীমা নির্ধারণ।

২. আংশিকভাবে রাষ্ট্রীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা দ্বারা এবং অংশত লিখিত অঙ্গীকারপত্রের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষতিপূরণের দ্বারা ভূস্বামীদের, কারখানা মালিকদের এবং রেলওয়ে ও শিপিং-এর ধনশালী লোকদের স্বত্বচ্যুত করা।

৩. সকল দেশত্যাগীর এবং জনগণের অধিকাংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

৪. জনতার মালিকানাধীন জমিতে, কর্মশালায় ও কারখানায় শ্রম সংগঠন অথবা প্রলেতারিয়ানদের নিয়োগ করা এবং তার দ্বারা শ্রমিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানো, এবং কারখানা মালিকেরা যতক্ষণ টিকে থাকছে ততক্ষণ রাষ্ট্র যেমন উচ্চ মজুরি দিচ্ছে তেমন উচ্চ মজুরি দিতে তাদেরকে বাধ্য করা।

৫. ব্যক্তিগত সম্পত্তি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সমাজের সকল সদস্যের কাজের সমান দায়িত্ব পালন। শিল্পকর্মী দল গঠন, বিশেষ করে কৃষির জন্য।

৬. রাষ্ট্রীয় পুঁজির দ্বারা পরিচালিত একটি জাতীয় ব্যাংকের রাষ্ট্রের হাতে ঋণের ও অর্থ-ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যাংক ও ব্যাংক-মালিকদের মাথা তুলতে না দেয়া।

৭. জাতীয় কলকারখানা, কর্মশালা, রেলপথ এবং জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি; নতুন জমি চাষের আওতায় আনা এবং বর্তমানে যেসব জমি আবাদি রয়েছে সেগুলোর উন্নয়ন_ এসবই করতে হবে পুঁজি এবং শ্রমশক্তি বৃদ্ধির অনুপাতে সম্পূর্ণ জাতীয় পরিচালনা।

৮. মায়ের কোল ছাড়ার পর থেকে সকল শিশুর জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় খরচে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। শিক্ষা এবং উৎপাদন এক সাথে চলবে।

৯. কৃষি এবং শিল্পে নিয়োজিত বিভিন্ন দলভুক্ত নাগরিকদের জন্য তাদের জীবনযাত্রার সংগে সংগতিপূর্ণ, শহর এবং গ্রামের সুবিধা বিবেচনা করে এবং এ দুয়ের একমাত্রিকতা ও সীমাবদ্ধতা পরিহার করে, রাষ্ট্রীয় জমিতে বিরাট বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ।

১০. শহরের জেলাগুলোতে তাড়াহুড়া করে বানানো নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর সকল বাসস্থানের উচ্ছেদ সাধন।

আরো পড়ুন:  আমাদের তলোয়ার দু’টি, লেনিন ও স্তালিন

১১. বিবাহ-বন্ধনের আগে এবং পরে জন্ম নেয়া শিশুদের উত্তরাধিকার দান।

১২. সকল যানবাহন রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত করা।

‘যখন সমস্ত পুঁজি জাতির হাতে একত্রিত হবে, টাকা হয়ে দাঁড়াবে অপ্রয়োজনীয়।’ –এঙ্গেলস

অবশ্য এই সমস্ত পরিকল্পনা হটাত বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। কিন্তু এর একটা সব সময় অন্যটাকে সহযোগিতা করবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর একবার আমূল আক্রমণ পরিচালিত হলে প্রলেতারিয়েত নিজেই আরো এগিয়ে যাওয়ার গতি লাভ করবে, তখন প্রলেতারিয়েত রাষ্ট্রের হাতে বর্ধিষ্ণু হারে সমস্ত পুঁজি, সমস্ত কৃষি, সকল শিল্প, সকল যানবাহন, সমস্ত বাণিজ্য কেন্দ্রীভূত করার কাজে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে। পূর্বোক্ত প্রতিটি পরিকল্পনাই এই লক্ষ্য সামনে রেখে করা হয়েছে। প্রলেতারিয়েতের শ্রমশক্তি দ্বারা কোনো দেশের উৎপাদনী শক্তি যে অনুপাতে বিকশিত হবে সেই অনুপাতেই ঐ পরিকল্পনাগুলির বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখা দেবে, কেন্দ্রীকরণের শক্তি বিকশিত হবে। শেষ পর্যন্ত যখন সমস্ত পুঁজি, সমস্ত উৎপাদন, সমস্ত বিনিময় জাতির হাতে একত্রিত হবে, তখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি আপনা থেকেই নিশ্চিহ্ন হবে, টাকা হয়ে দাঁড়াবে অপ্রয়োজনীয়, আর উৎপাদন এত বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ এতো পরিবর্তিত হয়ে যাবে যে, পুরাতন সামাজিক সম্পর্কগুলোর শেষ নিদর্শনগুলোও খোলস ত্যাগ করে নতুন হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন-১৯. এই বিপ্লব কি কোনো একটি দেশে এককভাবে সংঘটিত হতে পারবে?

উত্তর: না। বিশ্ববাজার সৃষ্টি করে বৃহদায়তন শিল্প পৃথিবীর সকল জাতিকে, বিশেষ করে সভ্য জাতিগুলোকে, পরস্পরের সংগে এমন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করে দিয়েছে যে, অন্যদের কি ঘটছে তা থেকে কেউই মুক্ত নয়। অধিকন্তু বৃহদায়তন শিল্প সকল সভ্যদেশের সমাজ উন্নয়নকে এতোই সম্পর্কিত করেছে যে তাদের সকলের মধ্যে বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েত_ এই দুটি শ্রেণি নির্ধারক শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে, এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বই আজকের সময়ের প্রধান দ্বন্দ্ব। সুতরাং কমিউনিস্ট বিপ্লব নিতান্তই জাতীয় বিপ্লব হবে না; সকল সভ্য দেশে_ অন্তত ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে_ একই সময়ে এই বিপ্লব ঘটবে। এইসব দেশের প্রত্যেকটির অভ্যন্তরীণ অবস্থার মধ্যে আরো উন্নত শিল্প, অধিকতর সম্পদ এবং উৎপাদনী শক্তিসমূহের আরো গুরুত্ববহ জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে আরো দ্রুত কিংবা আরো ধীর গতিতে বিকশিত হবে বিপ্লব। সুতরাং জার্মানিতে বিপ্লব হবে সবচাইতে ধীর গতিতে এবং সেখানে বিপ্লব সব চাইতে বেশি বাধারও সম্মুখীন হবে, সব চাইতে দ্রুত এবং সব চাইতে সহজ হবে ইংল্যান্ডে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপর এর বিরাট ও গভীর প্রভাব পড়বে এবং তাদের এ যাবত কালের উন্নয়নের ধারাকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে_ ত্বরান্বিত করবে। এ হবে বিশ্বব্যাপী বিপ্লব; সুতরাং এর পরিধিও হবে বিশ্ববিস্তৃত।

প্রশ্ন-২০: ব্যক্তিগত মালিকানা লুপ্তির চূড়ান্ত পরিণতিগুলো কি হবে?

উত্তর: যেমন উৎপাদের বিনিময় আমার বন্টন থেকে, তেমনি সমস্ত উৎপাদনশক্তি আর যোগাযোগের উপায়-উপকরণ ব্যবহার করা থেকে, ব্যক্তিপুঁজিপতিদের বেদখল ক’রে সমাজ প্রাপ্তিসাধ্য উপায়-উপকরণ আর সমগ্রসমাজের প্রয়োজনের ভিত্তিতে রচিত পরিকল্পনা অনুসারে সেগুলোর ব্যবস্থাপন করতে থাকলে বৃহদায়তনের শিল্পের সঙ্গে বর্তমানে যেসব কুপরিণতি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেগুলো সর্বপ্রথমে দূর হবে। সংকটগুলো আর থাকবে না; সমাজের বর্তমান ব্যবস্থায় অত্যুৎপাদন হলো সম্প্রসারিত উৎপাদনের অনিবাৰ্য ফল, সম্প্রসারিত উৎপাদন দুর্দশা-দুর্গতির একটা প্রবল কারণ, সেটা তখন পর্যাপ্তও হবে না, সেটাকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। সমাজের সাক্ষাৎ চাহিদাগুলো ছাপিয়ে বাড়তি উৎপাদনের পায়ে-পায়ে আসবে না দুর্দশা-দুর্গতি, সেটা সবার চাহিদা মেটাবে, পয়দা করবে নতুন নতুন চাহিদা এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও মেটাবার উপায়। সেটা হয়ে উঠবে আরও অগ্রগতির জন্যে আবশ্যক অবস্থা এবং উদ্দীপক; এযাবত আসছে, আর তখন তা না করে সেটা হাসিল করবে অগ্ৰগতি। ব্যক্তিগত মালিকানার জোয়াল থেকে মুক্তি পেলেই বৃহদায়তনের শিল্পের প্রসারের পরিধিটার কাছে সেটার উন্নয়নের এখনকার মাত্ৰা তুচ্ছ মনে হবে—আমাদের একালের বৃহদায়তনের শিল্পের সঙ্গে তুলনায় ম্যানুফ্যাকচার প্রণালীটাকে ঠিক যেমনটা তুচ্ছ মনে হয়। শিল্পের এই উন্নয়নের ফলে সমাজ সবার চাহিদা মেটাবার পক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদের যোগান পাবে। ভূমিতে রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানা, ভূমি এখন টুকরো টুকরো, তার চাপে কৃষিও ব্যাহত, সেই কৃষিতে প্রাপ্তিসাধ্য উন্নতি আর বৈজ্ঞানিক সাধনসাফল্যগুলি চালু করা হলে সেটার নতুন অগ্রগতি ঘটবে, সমাজের হাতে আসবে অঢেল কৃষিজাত দ্রব্য। এইভাবে সমাজে এমন পর্যাপ্ত পরিমাণে জাতদ্রব্য উৎপন্ন হবে, যাতে সমাজের সবার প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী বন্টনের বন্দোবস্তু হতে পারবে। শত্রুভাবাপন্ন বিভিন্ন শ্রেণিতে সমাজের বিভাগটা তার ফলে হয়ে পড়বে অনাবশ্যক। সেটা অনাবশ্যক হয়ে যাবে শুধু, তাই নয়, অধিকন্তু নতুন সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সেটা মোটেই খাপ খাবে না। বিভিন্ন শ্রেণি পয়দা হয়েছে শ্রমবিভাগের দরুন, আর সেই শ্রমবিভাগ এযাবত যে আকারে রয়েছে সেটা একেবারেই লুপ্ত হয়ে যাবে। যেমনটা বলা হলো তেমনি উঁচু মাত্রায় শিল্প আর কৃষির উৎপাদন বাড়াবার জন্যে কেবল যান্ত্রিক আর রাসায়নিক সহায়গুলোই যথেষ্ট নয়, যারা সেইসব সহায়ক চালু করে সেইসব মানুষের সামর্থ্যও সেজন্যে তদনুসারে বিকশিত হওয়া চাই। কৃষক এবং ম্যান্যুফ্যাক্টরি শ্রমিকের গত শতকে বৃহদায়তনের শিল্পে শামিল হলে তাদের সমগ্র জীবনযাত্ৰাপ্ৰণালী যেমনটা বদলাতে হয়েছিলো, আর তারা নিজেরাই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো একেবারে ভিন্ন মানুষ, ঠিক তেমনি উৎপাদনে সমগ্র সমাজের যৌথ ব্যবস্থাপন চালু হলে এবং তার ফলে উৎপাদনের নতুন প্রসার ঘটলে সেজন্যে আবশ্যক হবে একেবারে ভিন্ন মানুষ, সেটা গড়েও তুলবে তেমনি মানুষ। মানুষ এখন যেমনটা রয়েছে, যাতে প্রত্যেকের জন্যে উৎপাদনের একটামাত্র শাখা নির্দিষ্ট, সে সেটার সঙ্গে বাঁধা, সেটার দ্বারা শোষিত, প্রত্যেকে অন্যান্য সমস্ত সামর্থ্য খুইয়ে গড়ে তুলেছে তার একটিমাত্র সমর্থ্য, সে জানে সমগ্র উৎপাদনের শুধু একটা শাখা কিংবা এই একটা শাখার শুধু একটা শাখা, এমন মানুষ দিয়ে উৎপাদনের যৌথ উৎপাদন চালান যায় না। এমনকি সমসাময়িক শিল্পেও এমন মানুষ ক্রমেই আরও কম কাজের হয়ে পড়ছে। যৌথভাবে এবং পরিকল্পনা অনুসারে সমগ্র সমাজের পরিচালিত শিল্পে এমন মানুষ অপরিহার্য যাদের সামর্থ্যগুলির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটেছে, যারা সমগ্র উৎপাদন-প্ৰণালীটাকে বিবেচনায় রাখতে সক্ষম। কাজেকাজেই, যে শ্রমবিভাগের অবস্থায় একজন হয়ে পড়ে কৃষক, আর একজন হয় চর্মকার, কারখানা শ্রমিক হয় অন্য কেউ, আবার কেউ হয় ফটকা-কারবারি, এই যে শ্রমবিভাগটাকে যন্ত্র-ব্যবস্থা ইতিমধ্যে ক্ষয়ে দিয়েছে, এটা ঐভাবে একেবারেই লুপ্ত হয়ে যাবে। শিক্ষা পেয়ে নওজোয়ানেরা সমগ্র উৎপাদন-প্ৰণালীটাকে চটপট রপ্ত করে নিতে পারবে, তারা সামাজিক চাহিদা কিংবা নিজেদের ঝোঁক অনুসারে শিল্পের একটা থেকে অন্য শাখায় চলে যেতে পারবে। কাজেই, এখনকার শ্রমবিভাগের দরুন সবার উপর বিকাশের যে একপেশেমিটা চেপে রয়েছে সেটা তার ফলে লোপ পাবে। এইভাবে, কমিউনিজমের ধারায় সংগঠিত সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীর অস্তিত্বের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না, তেমনি পক্ষান্তরে, এই সমাজ গড়ে উঠলে সেটা আপনিই যোগায় এইসব শ্রেণিগত প্রভেদ ঘুঁচিয়ে দেবার উপায়।

আরো পড়ুন:  স্বপ্নওয়ালা

এই সবকিছুর ফল হিসেবে শহর আর গ্রামাঞ্চলের মধ্যকার বৈসাদৃশ্যও লোপ পেয়ে যাবে। দুটো পৃথক শ্রেণীর বদলে একই সব লোকের কৃষি আর শিল্পের উৎপাদন করাটা এমনকি নিছক বৈষয়িক কারণেও কমিউনিজমের ধারায় সন্মিলনীর একটা অপরিহার্য অবস্থা। শিল্পক্ষেত্রের জনসমষ্টি বড় বড় শহরে ভিড় করে থাকার পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রের জনসমষ্টির সারা দেশে ছড়িয়ে থাকাটা কৃষি আর শিল্পের শুধু একটা অনুন্নত পর্বের পক্ষেই উপযোগী অবস্থা, সেটা সমস্ত পরবর্তী সম্প্রসারণের পথে একটা বাধা, যা এমনকি এখনও বোধ করা যাচ্ছে খুবই।

ব্যক্তিগত মালিকানা লোপ করার প্রধান প্রধান ফলগুলি নিম্নলিখিতরূপ হবে বলে ধরা যায়: উৎপাদন-শক্তিসমহের সাধারণী এবং পরিকল্পিত সদ্ব্যবহারের জন্য সমাজের সমস্ত মানুষের সর্বাত্মক সম্মিলনী; সবার চাহিদা মেটাবার পক্ষে পর্যাপ্ত মাত্রায় উৎপাদন সম্প্রসারণ; যাতে কারও কারও চাহিদা মেটে অন্যান্যের ঘাড় ভেঙে সেই অবস্থাটার অবসান; বিভিন্ন শ্রেণী এবং সেগুলোর মধ্যকার বিরোধগুলোর পূর্ণ লুপ্তি; এযাবত প্রাধান্যশালী শ্রমবিভাগ লোপ করার কল্যাণে, শিল্প-শিক্ষার সাহায্যে, কর্মবৃত্তি বদল করার ফলে, সবার দ্বারা উৎপন্ন ভোগসুখের বস্তুগুলিতে সবার অংশভাগীদারির ভিতর দিয়ে, শহর আর গ্রামাঞ্চলের মিলেমিশে যাবার কল্যাণে সমাজের সমস্ত মানুষের সামর্থ্যগুলির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!