মুখখানি যেন ভোরের শেফালি
নেমে গেল এক্ষুনি
দু-অধরে চেপে চাঁদ একফালি
নেমে গেল এক্ষুনি
তার দুটি আঁখি খঞ্জন পাখি
দূরে কাছে ঘুরে নাচে
এই আছে এই নেই আছে নেই
দূরে কাছে ঘুরে নাচে
নেমে গেল এক্ষুনি
হাওয়া বারে বারে আঁচল সরায়
হাত বারে বারে ঢাকে
হাত খালি হলে আঙুল জড়ায়
সময়কে পাকে পাকে
নেমে গেল এক্ষুনি
ঝুঁকে প’ড়ে চোখে চূর্ণ অলক
যেন চায় পড়ে নিতে
শ্বেতপাথরের স্মৃতির ফলক
মণি-জ্বলা চারিভিতে
নেমে গেল এক্ষুনি
পদচারণায় দূরে নিয়ে যায়
তার কায়া তার ছায়া
দু-চরণে বোনা যাব কি যাব না
ও-বনে ও-যৌবনে
নেমে গেল এক্ষুনি
থাকতে দেখি নি চেয়ে অকপটে
তার সে মুখচ্ছবি
দেখি আকাশের প্রচ্ছদপটে
ছাপা সে মুখচ্ছবি
নেমে গেল এক্ষুনি
ট্রেন খালি করে ভোরের শেফালি
নেমে গেল এক্ষুনি।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।