আকাশে তুলকালাম মেঘে
যেন বাজি ফোটানোর আওয়াজে
কাল
তোমার জন্মদিন গেল।
ঘরে বৃষ্টির ছাট এলেও
জানালাগুলো বন্ধ করি নি—
আলো-নেভানো অন্ধকারে
থেকে থেকে ঝিলিক-দেওয়া বিদ্যুতে
আমি দেখতে পাচ্ছিলাম তোমার মুখ।
আর মাঝে মাঝে
হাওয়া এসে নড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিল
তোমাকে ভালবেসে দেওয়া
টেবিলে রাখা
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।
কাল কেন আমি ঘুমোতে পারি নি
তোমাকে বলি নি—
আমার ফেলে-দেওয়া লেখার কাগজটা নিয়ে
শয়তান বেড়ালটা
কাল সারারাত খেলেছে।
তোমাকে বলি নি—
দজ্জাল ঘড়িটা
একদিন আমাকে বাজিয়ে দেখে নেবে ব’লে
টিকটিক শন্দে শাসিয়েছে।
তোমাকে বলি নি—
মাটিতে মিশে যাবার পর
আমরা দুজনে কেউই কাউকে চিনব না।
আর দেখ,
তোমাকে বলাই হয় নি
এবার রথের মেলায়
কী কী কিনব—
মেয়ের জন্যে তালপাতার ভেঁপু
তোমাত জন্যে ফ্লফুলের চারা
আর বাড়ির জন্যে
সুন্দর পেতলের খাঁচায়
দুটো বদরিকা পাখি।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।