পদাতিক

(সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে)

 

যেখানে আকাশ চিকন শাখায় চেরা

চলো না উধাও কালেরে সেখানে ডাকি,

হা ! হতোম্মি-সড়কে বেঁধেছি ডেরা

মরীচিকা চায় বালুচারী আত্মা কি?

 

লাল মেঘ গুহা পাবে না হয়তো খুঁজে

নিজেরে নিখিল মিছিলে মেলাও যদি,

চলো তার চেয়ে মরা খড়ে ঘাড় গুঁজে

হবো অপরূপ অপরাহ্নের নদী|

 

হরিণ সময় লাগমে বাঁধতে পারো?

বিশ শতকেও ফুলের বেসাতি করি,

অতল হ্রদের মিতালি হৃদয়ে গাঢ়

হিংসুক হাওয়া দেহে আঁকে চকখড়ি।

 

প্রতিবেশী চাঁদ নয় তো অনাত্মীয়

রামধনু-রং দেশেও জমাবাে পাড়ি,

মাঠের শিশির ঝরবে না একটিও

ক্রীতদাস ছায়া গােটাবে না পাততাড়ি।

 

২.

জানি: পলাতক পাখায় নভশ্চারী

খোঁজা নিস্ফল নক্ষত্রের ঘাঁটি,

ফাঁকা ভাঁড়ারের ওস্তাদ সংসারী—

আর কতদিন ঢাকবে ধোঁকার টাটি?

 

পিরামিডে থাক পিরীতি কফিন-ঢাকা,

অহল্যা হােক পিচ্ছিল হাতছানি,

প্রগলভ জুঁই মেলুক বন্ধ্যা শাখা,

চাদের চোখেতে পড়ুক অন্ধ ছানি।

 

উপবাসী রাত অক্ষম অভিনেতা।

হৃদয় হাঙর-যক্ষ্মাই ঠোকরাবে!

ফসলের দিন সামনে কঠিনচেতা—

অবৈতনিক বেডেই তা টের পাবে।

 

বুঝেছি: ব্যর্থ পৃথিবীর পাড় বােনা।

স্বপ্নেব ভাড় সামনেই ওলটানো।

তামাসা তো শেষ। পারের কড়িও গােনা—

কঙ্কালখানা কালের স্কন্ধে টানো।

 

৩.

শ্রীমতী, আমার অরণ্য-স্বাদ

মেটে এখানেই। লেকে সন্ধ্যায়

গােচারণ ঘাসে প্রার্থী যুবক।

কমণ্ডলুতে কারণ, তাই তাে

ওঁ তৎসৎ,—প্রলাপ মানেই।

ফরাসী রাজ্য ভালাে লাগে, তাই

সংসার-ত্যাগ। লাল ত্রাসে কাঁপে

গ্লেসিয়ার দিন। পেশােয়ারিদের

করকমলেই ভবলীলা শেষ।

 

৪.

(উঞ্ছজীবী ডাস্টবিন নির্জন বলেই)

অনেক আগ্নেয় রাত্রে নিষিদ্ধ আমরা

দেখেছি বৈষ্ণব বেনে অকৃপণ হাত দেয় পণ্য যুবতীকে।

অবশ্য নেপথ্যে চলে নিরামিষ নাচ আর গান।

কখনাে নিষ্ঠুর হাতে তারা কিন্তু মারেনাকো মশা একটিও।

 

( আমরা কয়েকটি প্রাণী,—দুচোখে ঘুমের হরতাল।)

মাঝে মাঝে শােনা যায় ভবঘুরে কুকুরের ঠোঁটে

নতুন শিশুর টাটকা রক্তিম খবর!

আরো পড়ুন:  এখানে

 

(তন্বী চাঁদ ক্রোড়পতি ছাদের সােফায় !)

 

চীনা লালসৈনিকের শরীরে এখন

নিবিড় নির্বাণ-বিদ্যা বীক্ষণ করে কি বেঅনেট?

বােমাত্মক এরােপ্লেন গান গায় দক্ষিণ সমীরে—

মরণ রে, তুহু মম শ্যাম সমান।

 

সুপুষ্ট ঈশ্বর শুনি উষ্ণীষ আকাশে

পুঁজি রাখে আমাদের অর্জনের রুটি—

(শাদা মেঘ তারি কি স্বাক্ষর!)

মৌমাছির মত বসে কতিপয় নক্ষত্র নাগর

নিশাচর ফুর্তির চূড়ায়।

 

উচ্চারিত ক্ষোভে তাই বিস্ফোরক দিন

ছাত্র আর মজুরের উজ্জল মিছিলে

বিপ্লব ঘােষণা করে গেছে।

 

তবুও আড্ডায় চলে মন-দেয়া-নেয়ার হেঁয়ালি।

 

প্রতিদ্বন্দ্বী সব্যসাচী ডবল-ডেকারে

(চাক্ষুষ আমার দেখা) ফাল্গুনী কবিরা

অর্ধেক চাঁদের মত কী করুণ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।

 

অহিংসা পরমো ধর্ম নীলবর্ণ শৃগালের দলে।

টাকার টঙ্কারে শুনি: মায়া এ-পৃথিবী।

জীবেব সুলভ মুক্তি একমাত্র স্বস্তিকার নিচে।

সংগ্রাম নিশ্চিত, তবু মাসতুতাে ভায়েরা।

বিষম সন্ধিতে আজ কী চক্রান্ত চৌদিকে ফেঁদেছে!

 

আজকে এপ্রিল মাস,— (চৈত্র না ফাল্গুন? )

ভ্রষ্ট নােগুচির নিন্দা চড়াইয়েরা ভনে।

 

৫.

অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়

এক দ্বিতীয় বসন্ত। আর

গলিতনখ পৃথিবীতে আমরা বেখে যাবো

সংক্রামক স্বাস্থ্যের উল্লাস।

ততদিন আত্মরক্ষাব প্রাচীর হােক

প্রত্যেক শরীরের ভগ্নাংশ।

 

জীবনকে পেয়েছি আমরা, বিদ্যুৎ জীবনকে।

উজ্জ্বল রৌদ্রের দিন কাটুক যৌথ কর্ষণায়

আর ক্ষুরধার প্রত্যঙ্গ তরঙ্গ তুলুক কারখানায়।

দুর্ঘটনাকে বেঁধে দেবে কর্মঠ যুবক

নিখুঁত যন্ত্রের মধ্যতায়।

 

অরণ্যকে ছেটে দেবার দিন এসেছে আজ।

 

তবে, যুদ্ধ আজ।

রাজন্যের অনুকম্পা নেই,

প্রজাপুঞ্জের স্বপ্নভঙ্গ।

বণিকপ্রভু চোখ রাঙায়,

কারখানায় বন্ধ কাজ।

 

( ইতিহাস আমাদের দিক নেয়।)

 

উদাসীন ঈশ্বর কেঁপে উঠবে না কি

আমাদেব পদাতিক পদক্ষেপে?

Leave a Comment

error: Content is protected !!