একা ছিলাম উচ্চ আশার কৈলাসে
ধুলিসাৎ বটে সে-বালখিল্য স্বপ্নরা;
আজো হাসি, তাও মুখভঙ্গির অভ্যাসে
দগ্ধ হৃদয় হাওয়ায় মেলতে পথে ঘােরা।
নখদর্পণে নিকটবর্তী অলিগলি;
প্রত্যাখ্যান জাগরূক রাখে প্রত্যাশা,
হৃদয়রাজ্যে অনাবশ্যক দলাদলি,
এ-অভাজনের ভবঘুরে তাই ভালােবাসা।
হায়, ইতিহাস অর্থনীতির হাতে বাঁধা।
ভুলি বিপ্লব কু প্রভুর রাঙা চোখে;
মন যদি চায়, শীর্ণ শরীর দেয় বাধা
দ্বিধা বিলম্বে হারাই লগ্ন ইহলােকে।
কৃষক, মজুর! আজকে তােমার পাশাপাশি
অভিন্ন দল আমরা। বন্ধু, আগে চলাে
সবাই আমরা নিজবাসভূমে পরবাসী;
এই দোলাচল দলকে কেবল পথ বলল।।
২.
একদা আষাঢ়ে এসেছি এখানে
মিলের ধোঁয়ায় পড়লাে মনে।
গলিতে কি মাঠে কখনাে কচিৎ
দেখা দিয়ে যায় দখিন হাওয়া।
দৈবপ্রসাদে কবে সংসার
কচি জনতায় গিয়েছে ভরে
সকলে পারি না বাঁচতে, কাজেই
আপন বাঁচার পন্থা নেওয়া।
তাই দৈনিক নিজের কিংবা
পরের দায়েই শ্মশান চষি;
মাটিতে নামিয়ে রঙিন গেলাশ
খুঁজি সফলতা তনুর শাখে।
মন থেকে আজ মিতালি উধাও
শরীর সে উপনিবেশ নিলাে,
জটিল স্মৃতির পায়ে পায়ে তবু
হারানাে প্রেমের ছায়ার ঘােরে।
আমি ত্রিশঙ্কু, পথ খুজে ফিরি—
গােলকধাঁধায় বৃথাই ঘােরা,
জানি, বাণিজ্যে লক্ষ্মী। যদিও
ছিদ্রিত থলি ও-পথে বাধা।
কৃষক, মজুর! তােমরা শরণ—
জানি, আজ নেই অন্য গতি;
যে-পথে আসবে লাল প্রত্যুষ।
সেই পথে নাও আমাকে টেনে।
এখানে এসেছি আষাঢ়ে একদা
মিলের ধোঁয়ায় পড়লে মনে;
কালবৈশাখী নামবে যে কবে
আমাদের হাত-মিলানো গানে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।