কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার, পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র

— কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস

সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট সাহিত্য
১. প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতন্ত্র
খ. পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র

বুর্জোয়াদের হাতে একমাত্র সামন্ত অভিজাত শ্রেণিরই সর্বনাশ হয় নি, তারাই একমাত্র শ্রেণি নয় আধুনিক বুর্জোয়া সমাজের আবহাওয়ায় যাদের অস্তিত্ব-শর্ত শুকিয়ে গিয়ে মরতে বসেছে। আধুনিক বুর্জোয়াদের অগ্রদূত ছিল মধ্যযুগের নাগরিক দল এবং ছোটো ছোটো খোদকস্ত চাষী। শিল্প বাণিজ্যে যে সব দেশের বিকাশ অতি সামান্য, সেখানে উঠন্ত বুর্জোয়াদের পাশাপাশি এখনো এই দুই শ্রেণি দিনগত পাপক্ষয় করে চলেছে।

আধুনিক সভ্যতা যে সব দেশে সম্পূর্ণ বিকশিত সেখানে আবার পেটি বুর্জোয়ার নূতন এক শ্রেণি উদ্ভব হয়েছে, প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়ার মাঝখানে এরা দোলায়িত, বুর্জোয়া সমাজের আনুষঙ্গিক একটা অংশ হিসাবে বারবার নূতন হয়ে উঠছে এরা। এই শ্রেণির অন্তর্গত বিভিন্ন লোক কিন্তু প্রতিযোগিতার চাপে ক্রমাগতই প্রলেতারিয়েতের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে থাকে, বর্তমান যন্ত্রশিল্পের পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে এরা এমন কি এও দেখে যে সময় এগিয়ে আসছে। যখন আধুনিক সমাজের স্বাধীন স্তর হিসাবে এদের অস্তিত্ব একেবারে লোপ পাবে; শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যে এদের স্থান দখল করবে তদারককারী কর্মচারী, গোমস্তা, অথবা দোকান কর্মচারী।

ফ্রান্সের মতো দেশে, যেখানে চাষীরা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের অনেক বেশি, সেখানে যে লেখকেরা বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে মজুরের দলে যোগ দিয়েছে তারা যে বুর্জোয়া রাজত্বের সমালোচনায় কৃষক ও পেটি বুর্জোয়া মানদণ্ডের আশ্রয় নেবে, এই মধ্যবর্তী শ্রেণিদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে অস্ত্র ধারণ করবে তা স্বাভাবিক। পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্রের উদয় হয় এইভাবে। এ দলের নেতা হলেন সিসমন্দি, শুধু ফ্রান্সে নয়, ইংল্যান্ডেও।

আধুনিক উৎপাদন পরিস্থিতির অভ্যন্তরস্থ স্ববিরোধগুলিকে সমাজতন্ত্রের এই দলটি অতি তীক্ষ্ণভাবে উদঘাটন করে দেখিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ভণ্ড কৈফিয়তের স্বরূপ ফাঁস করেছে এরা। তারা অবিসংবাদিত রূপে প্রমাণ করেছে যন্ত্র ও শ্রমবিভাগের মারাত্মক ফলাফল, অল্প কয়েকজনের হাতে পুঁজি ও জমির কেন্দ্রীভবন, অতি উৎপাদন ও সংকট, পেটি বুর্জোয়া ও চাষীর অনিবাৰ্য সর্বনাশ, প্রলেতারিয়েতের দুর্দশা ও উৎপাদনে অরাজকতা, ধন বণ্টনের তীব্র অসমতা, বিভিন্ন জাতির মধ্যে পরস্পরের ধ্বংসাত্মক শিল্প লড়াই, সাবেকী নৈতিক বন্ধন, পুরানো পারিবারিক সম্বন্ধ এবং পুরাতন জাতিসত্তার ভাঙনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছে তারা ।

আরো পড়ুন:  কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার, জার্মান অথবা 'খাঁটি' সমাজতন্ত্র

ইতিবাচক লক্ষ্যের ক্ষেত্রে কিন্তু সমাজতন্ত্রের এই রূপটি হয় উৎপাদন ও বিনিময়ের পুরানো উপায় ও সেই সঙ্গে সাবেকী সম্পত্তি-সম্পর্ক ও পুরাতন সমাজ ফিরিয়ে আনতে, নয় উৎপাদন ও বিনিময়ের নূতন উপায়কে সম্পত্তি-সম্পর্কের সেই পুরানো কাঠামোর মধ্যেই আড়ষ্ট করে আটকে রাখতে সচেষ্ট, যা এই সব নূতন উপায়ের চাপে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, হওয়া অনিবার্য। উভয় ক্ষেত্রেই তা প্রতিক্রিয়াশীল ও কল্পলৌকিক।

এর শেষ কথা হল: শিল্পোৎপাদনের জন্য সংঘবদ্ধ গিল্ড প্রতিষ্ঠান, কৃষিকার্যে পিতৃতান্ত্রিক সম্পর্ক।

শেষ পর্যন্ত যখন ইতিহাসের কঠোর সত্যে আত্মবিভ্রান্তির সমস্ত নেশা কেটে যায় তখন সমাজতন্ত্রের এ রূপটার অবসান হয় একটা শোচনীয় নাকিকান্নায়।

কমিউনিস্ট ইশতেহারের সূচিপত্র
১৮৭২ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮২ সালের রুশ সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮৮ সালের ইংরেজি সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯২ সালের পোলীয় সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯৩ সালের ইতালীয় সংস্করণের ভূমিকা
কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার
১. বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত
২. প্রলেতারিয়েত ও কমিউনিস্টগণ
৩. সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট সাহিত্য
(১) প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতন্ত্র
ক. সামন্ত সমাজতন্ত্র
খ. পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র
গ. জার্মান অথবা “খাঁটি” সমাজতন্ত্র
(২) রক্ষণশীল অথবা বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র
(৩) সমালোচনী — কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম
৪. বর্তমান নানা সরকার-বিরোধী পার্টির সঙ্গে কমিউনিস্টদের সম্বন্ধ
টীকা

Leave a Comment

error: Content is protected !!