বাঁচার গর্বে
মাটিতে তার পা পড়ছিল না ব’লে
গান গাইতে গাইতে
আমরা তাকে সপাটে তুলে দিয়ে এলাম
আগুনের দোরগোড়ায়
লোকটার জানা ছিল কায়কল্পের জাদু
ধুলোকে সোনা করার
ছুঁ-মন্তর
তাঁর ঝুলিতে থাকত
যত রাজ্যের ফেলে-দেওয়া
রকমারি পুরনো জিনিস
যখন হাত ঢুকিয়ে বার করত
কী আশ্চর্য
একেবারে ঝকঝকে নতুন
লোকটা ছিল নিদারুণ রসিক
পাড়-ভাঙ্গা নদীর মতন রাস্তায়
বরবেশে যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল
ফুলশয্যার গাড়িতে
তখনও ঠোটের কোনে লাগিয়ে রেখেছিল
জীবনের সুখটান
যাবার সময় আমরা ঢেকে দিয়েছিলাম
তাঁর সুখটান হাতের শেকল-ভাঙ্গার দাগ
সারা গায়ের হাজারটা কালশিটে
মালায় টান পড়ায়
ঢাকা যায়নি শুধু
ক’দিন আগে মার খাওয়ার
একটা দগদগে চিহ্ন
সেটা ঢাকবার জন্য মালা একটা এসেছিল বটে
কিন্তু আগুনের আবার ফুল সয় না ব’লে
সব মালাই তখন খুলে ফেলা হয়েছিল
মালা একটা এসেছিল বটে
কিন্তু
খুব দেরিতে
মালা এসেছিল
কিন্তু
মানুষ আসেনি
মানুষটা নাকি অন্ধকারে কলম ডুবিয়ে
‘বাঙালীর ইতিহাসঃ অন্তিমপর্ব’
লেখায় অসম্ভব ব্যস্ত ছিল।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।