কাণ্ড
মহকুমার সদরে ভাই
দেখে এলাম কাণ্ড
একজন ডালে একজন পাতায়
খোঁজে গাছের কাণ্ড
দেখতে তালপাতার সেপাই
মাথাগুলো প্রকাণ্ড
তাকায় না ফলফুলে
লক্ষ্য একদম মূলে
বলে না অবিশ্যি খুলে
তারা ছাড়া বাকি সবাই
কেন অকালকুষ্মাণ্ড
এ কয় ওরে, শিখো রে
পৌঁছুতে হয় কী ক’রে
সোজা সটান শিকড়ে—
ব’লে যেই না হাত দেয় ছেড়ে
চিৎ ক’রে দেয় ব্রহ্মাণ্ড।।
বাঘে
চরাতে নিয়ে গেছিলম গো মালিক
তিন শো শব্দ গো মালিক
তিন শো শব্দ
ফিরে এলম গো মালিক
তিনটে কম গো মালিক
তিনটে কম
একটি ছিল আগে
সেটিকে পেয়ে বাঘে
খেয়ে নিল হালম গো মালিক
খেয়ে নিলে হালম
দুটিকে দিল খোঁয়াড়ে
ও পাড়ার সেই চোয়াড়ে
একটি ভুত আর একটি
ভগবানের পুত—
ভালবাসা ছিল সবার আগে গো মালিক
ছিল গো মালিক আগে—
তাকেই খেলে বাঘে।।
তিন্তিড়ি
তেঁতুলতলায় শব্দ কিসের
বিশ্রী বিদিকিচ্ছিরি—
কে ওখানে? কে হে?
এজ্ঞে আমি হেঁ-হেঁ—
অন্ধকারে চোখটা জ্বেলে
খুঁজে বেড়াচ্ছি তিন্তিড়ি।
ঢুকব কি না ঢুকব দেহে—
মুখপুড়িটা আমায় ফেলে
দিয়েছে দেখুন, কী বিষম সন্দেহে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।