১.
এখন একটু চোখে চোখে রাখো—
দিনগুলো ভারি দামালো;
দেখো,
যেন আমাদের অসাবধানে
এই দামালো দিনগুলো
গড়াতে গড়াতে
গড়াতে গড়াতে
আগুনের মধ্যে না পড়ে।
আমার ভালোবাসাগুলোকে নিয়েই
আমার ভাবনা।
এখন সেই বয়স, যখন
দূরেরটা বিলক্ষণ স্পষ্ট—
শুধু কাছেরটাই ঝাপসা দেখায়।
এখন সেই বয়েস, যখন
আচমকা মাটিতে
প’ড়ে যেতে যেতে মনে হয়
হাতে একটা শক্ত লাঠি থাকলে ভালো হত।
২.
পিছনে তাকালে আজও দেখতে পাই—
সিংহের কালো কেশর ফুলিয়ে
গর্জমান সমুদ্র;
দেয়ালে গুলির দাগ,
ভাঙা শ্লেট, ছেঁড়া জুতোয়
ছত্রাকার রাস্তা,
পায়ে পায়ে ছিটিয়ে যাওয়া রক্ত।
মুক্তির বহুবর্ণ বাসনার নিচে
যৌবনকে পণ ধরেছিল জীবন।
ঠিক তেমনি দূরে,
কত দূরে ঠিক জানি না,
আজও দেখতে পাচ্ছি—
হিরণ্যগর্ভ দিন
হাতে লক্ষ্মীর ঝাঁপি নিয়ে আসছে।
গান গেয়ে
আমাকে বলছে দাঁড়াতে।
গুচ্ছ গুচ্ছ ধানের মধ্যে দাঁড়িয়ে
তার বলিষ্ঠ হাত দুটো আমি দেখতে পাচ্ছি—
আমি শেষ বারের মত
মাটিতে প’ড়ে যাবার আগে
আমার ভালোবাসাগুলোকে
নিরাপদে তার হাতে
পৌঁছে দিতে চাই।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।