স্বাগত

গ্রাম উঠে গিয়েছে শহরে—
শূন্য ঘর, শূন্য গোলা,
ধান-বোনা জমি আছে পড়ে।
শুকনো তুলসীর মঞ্চে
নিষ্প্রদীপ অন্ধকার নামে,
আগাছায় ভরেছে উঠোন।
সূর্য পাটে বসেছে কখন।
রাখালের দেখা নেই –
কোথাও গরুর পাল ওড়ায় না ধুলো;
ঢেঁকিতে ওঠে না পাড়,
একটি কলসীও জল ওঠায় না ঘাটে।
বুনো ঘাসে পথ ঢাকে,
বিনা শাঁখে সন্ধ্যা হয়,
সূর্য বসে পাটে।
তাঁতি বোনে না কো তাঁত,
কলু আর ঘোরায় না ঘানি;
কুমোরের ঘরে চাবি,
ঝাঁপ বন্ধ নিরূদ্দেশ হয়েছে দোকানি,
হাতুড়ি বিকিয়ে হাটে
ভস্ম মেখে পড়ে থাকে বেকার হাপর।
যে পথে কামার গেছে
কে জানে সে পথের খবর?
শীতের আমেজ আসে;
জ্বলে না আগুন চণ্ডীমণ্ডপের কোলে।
হাতে হাতে ঘোরে নাকো হুঁকো
চুলোচুলি হয় নাকো মোড়োলে মোড়োলে।
নিশুতি রাত্রিতে কারো
চৌকি শুনে কুকুর ডাকে না,
দিগন্তের বনস্পতি হাত নাড়ে,
মাঠের সোনালি ধান গুচ্ছ গুচ্ছ বাড়ে।
দুচোখে প্রতীক্ষা তার
স্বপ্ন তাকে করাঘাত করে।
ডাক ওঠে শহরে শহরে।
রাস্তার শ্মশানে থেকে মৃতপ্রায় জনস্রোত শোনে,
মাঠের ফসল দিন গোণে।

প্রতিজ্ঞা কঠিন হাতে
একে একে তারা সব
চোখজের শোকাশ্রু মুছে ভাবে—
ঘরে ঘরে নবান্ন পাঠাবে।
পথে পথে পদশব্দ ওঠে,
আকাশে নক্ষত্র ফোটে;
নদী করে সম্ভাষণ, পাখি করে গান—

মাঠের সম্রাট দেখে মুগ্ধ নেত্রে
ধান আর ধান।।

আরো পড়ুন:  সজল করুণা ধারা

Leave a Comment

error: Content is protected !!