অর্থনীতি (ইংরেজি: Economy) হচ্ছে নির্দিষ্ট সামাজিক-অর্থনৈতিক গঠনরূপের উৎপাদন-সম্পর্কের সমষ্টি। অর্থনীতি হচ্ছে সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ বা কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতি বা তার অংশ এবং কতিপয় ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শাস্ত্রকেও যেমন শিল্প-অর্থশাস্ত্র, কৃষি-অর্থশাস্ত্রইত্যাদিকেও অর্থনীতি বলা হয়। অর্থাৎ অর্থনীতি হচ্ছে বিভিন্ন কার্যকর্তার (ইংরেজি: Agents) দ্বারা উৎপাদন, বিতরণ, বা বাণিজ্য, এবং পণ্যদ্রব্য ও সেবার ভোগের ক্ষেত্র। এর বিস্তৃত অর্থে বোঝা যায়, ‘অর্থনীতিকে এমন একটি সামাজিক এখতিয়ার হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা উৎপাদন, ব্যবহার, এবং সম্পদসমূহের ব্যবস্থাপনার সাথে সংযুক্ত থেকে জোর দেয় অনুশীলন, আলোচন, এবং উপাদানগত প্রকাশের উপর।
পরিকল্পিত অর্থনীতি হচ্ছে উচ্চ সংগঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, একক সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার ভিত্তিতে উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানার দৌলতে কার্যকর। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সকল দিকই এই পরিকল্পিত অর্থনীতির আওতাভুক্ত।
একটি বাজার-ভিত্তিক অর্থনীতি হচ্ছে যেখানে পণ্যদ্রব্য এবং সেবাসমূহ অংশগ্রহণকারীদের (অর্থনৈতিক কার্যকর্তার) মধ্যে উৎপাদন এবং বিনিময় করা হয় চাহিদা ও যোগানের অনুসারে; অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই বিনিময় ঘটে বদলাবদলির দ্বারা বা জালবিন্যাসটির (ইংরেজি: network) মধ্যে জমা ও খরচের গ্রহণযোগ্য মূল্যমান বিনিময়ের একক মাধ্যম, যেমন মুদ্রার একক, দ্বারা।
একটি সবুজ অর্থনীতি হলো কম-কার্বন, সম্পদ কার্যকর এবং সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্ত। সবুজ অর্থনীতিতে, আয় এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ দ্বারা চালিত হয় যা কার্বন নিঃসরণ এবং দূষণ হ্রাস করে, শক্তি এবং ব্যবহারযোগ্য সম্পদের কার্য-দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলির ক্ষতি রোধ করে।
অর্থনীতির মন্দাবস্থা
অর্থনীতির মন্দাবস্থা বা অর্থনৈতিক সংকট হচ্ছে অতি উৎপাদনের সংকটের পর আবির্ভূত পুঁজিবাদী চক্রের একটি পর্যায়। অর্থনীতির মন্দাবস্থা ঘটে যখন উৎপাদন-হ্রাস বন্ধ এবং ক্রমশ ‘অতিরিক্ত’ পণ্য বিক্রয় হলেও বাজারের পরিস্থিতি নেতিয়ে পড়া ভাব কাটিয়ে ওঠে না, প্রচুর সংখ্যক বেকার থেকে যায়।
অর্থনৈতিক সংকট হচ্ছে পুঁজিবাদী চক্রের প্রধান পর্যায়। উৎপাদনের পরিমাণের চরম হ্রাস, উৎপাদন ক্ষমতার অপূর্ণ ব্যবহার, বেকারত্ব বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা-অর্থ হিসাবের বিশৃঙ্খলা ইত্যাদিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রকটিত হয়। অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে উৎপাদনের সামাজিক চরিত্র ও তার আত্তীকরণের ব্যক্তিগত রূপের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে। অর্থনৈতিক সংকটের এই কারণকে ‘পুঁজিবাদের প্রধান বিরোধ’ বলা হয়। উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের মাত্রা ও উৎপাদন সম্পর্কের চরিত্রের মধ্যে বিরোধ, শ্রম ও পুঁজির মধ্যকার বিরোধের প্রকাশ হলো সকল অর্থনৈতিক সংকটের কারণ।
পুঁজিবাদের প্রধান বিরোধের অবসান ঘটে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে, সামাজিক মালিকানা দ্বারা ব্যক্তি-পুঁজিবাদী মালিকানা বদলের মাধ্যমে।
চিত্রের ইতিহাস: ষোড়শ শতকে জার্মান ফাগারদের তৈরিকৃত মুদ্রা, National Museum of American History থেকে,
তথ্যসূত্র:
১. সোফিয়া খোলদ, সমাজবিদ্যার সংক্ষিপ্ত শব্দকোষ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৯০, পৃষ্ঠা ১০-১১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।