পরমাণু চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য (ইংরেজি: Radioactive waste) উৎপাদিত হয়। এই তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলা এক ভয়াবহ সংকট। কোথায় কিভাবে ফেলা হবে এই নিয়ে বিজ্ঞানিদের মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে শুরু থেকেই। এবং ইউরোপীয়রা পারমাণবিক সমস্ত ক্রিয়াকলাপ থেকে নিজেদেরকে বাদ দিচ্ছে। এরকম মুহূর্তে বাংলাদেশকে নিয়ে রাশিয়া পারমাণবিক সংকটে ফেলার ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে।
তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো পাত্রই নিরাপদ নয়। কারণ তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে অন্য পদার্থও তেজস্ক্রিয় হয়ে ওঠে। অতীতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মোটা ধাতুর পাত্রে রেখে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হতো। যুক্তি হিসেবে বলা হতো সমুদ্রের পানি পাত্রটিগুলোকে ঠান্ডা রাখবে। বাস্তবতা হলও ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা বললেন এর ফলে পানির তাপমাত্রা বাড়বে এবং অচিরেই বিপর্যয় দেখা দেবে।
ফলে বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থায় বিপদজনক তেজস্ক্রিয় বর্জ্যকে মোটা ধাতুর পাত্রে ভরে মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও পাত্রটি গরম হয়ে গলে যাবে বিধায় বর্জ্য ভরা পাত্রটির বাইরে চারদিক থকে পাইপ দিয়ে জড়িয়ে সর্বদা ঠাণ্ডা পানি চালিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আটকে রাখা হয়। এই কাজ যে বিরাট ব্যয়সাপেক্ষ তা বলাই বাহুল্য।
তাছাড়া বর্জ্য ভরা এই পাত্রগুলো উত্তপ্ত হলে ছোট ছোট পরমাণু বোমার মতো হয়ে দাঁড়ায়। তাই দেখা যায় যেখানে বর্জ্যের পাত্রগুলো ফেলা হয় সেখানে মাঝে মাঝে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। কাজেই অতীব সতর্কতার সাথে বর্জ্য সংরক্ষণের ব্যয়বহুল ব্যবস্থা চালু রাখতে হয়। হাজার বছর ধরে এই ব্যয়বহুল ব্যবস্থা চালু রাখা বাধ্যতামূলক।
পারমাণবিক বর্জ্যের মধ্যে যা থাকে তার মধ্যে দুটি পদার্থ খুবই বিপদজনক। একটি হলো রেডন গ্যাস যা বাতাসে মিশে যায় এবং সেই বাতাস মানুষ ও অন্যান্য প্রানির শ্বাস- প্রশ্বাসের মাধ্যমে তাদের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। অপরটি হলো প্লুটোনিয়াম। প্লুটোনিয়ামের অর্ধজীবন যেহেতু ২৪,৩৬০ বছর, অর্থাৎ এই সময়ে ১ কেজি প্লুটোনিয়মের অর্ধেক বা ৫০০ গ্রাম প্লুটোনিয়াম তার তেজস্ক্রিয়তা হারায়। বাকি থাকা ৫০০ গ্রাম প্লুটোনিয়ামের অর্ধেক ২৫০ গ্রাম প্লুটোনিয়মের তেজস্ক্রিয়তা শেষ হতে আবার লাগবে ২৪,৩৬০ বছর। অবশিষ্ট ২৫০ গ্রামের অর্ধেক ১২৫ গ্রাম প্লুটোনিয়মের তেজস্ক্রিয়তা শেষ হবে আরও ২৪,৩৬০ বছরে। আরও থাকলো ১২৫ গ্রাম এবং লাগবে আরো ২৪,৩৬০ বছর। সে হিসেবে চার বা পাঁচ অর্ধজীবন প্রক্রিয়াটি চালু রাখতে হবে।
একটি পারমাণবিক রিএক্টরে কয়েক টন বর্জ্য প্লুটোনিয়াম উতপাদিত হয়। এখন পাঁচ বছর মেয়াদি একটা সরকার এক লক্ষ বা সোয়া লক্ষ বছরের কয়েক টন পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিপুল দায়ভার কোন অধিকারে বা কোন ক্ষমতাবলে মানবজাতির উপর চাপাবে। পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের দায়ভার কোনো মানুষই নিতে পারে না। মানবসহ সমস্ত প্রাণি ও উদ্ভিদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কোনো বীর পাহলোয়ান, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রীপরিষদ, সংসদ কেউই এই পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে পারে না।[২]
কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের কমিশনভোগি বাংলাদেশের মুৎসুদ্দি শ্রেণিটি মুনাফার জন্য শুধু মানুষ কেন যে কোনো প্রাণিকে হত্যা বা বিলুপ্ত করতে পারে।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত একটি কনটেইনার স্থানান্তর করা হচ্ছে। আলোকচিত্রটি Bill Ebbesen তুলেছেন ৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে লাসভেগাসের নেভাদা থেকে।
তথ্যসূত্র ও টীকাঃ
১. লেখাটির তথ্যসমুহ সোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া-এর পুস্তিকা ‘পরমাণু চুক্তি কার স্বার্থে’ পুস্তিকা থেকে নেয়া হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।