বিশ্বে ক্রমাগত বায়ুচালিত টারবাইন দ্বারা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে

বিশ্বে ক্রমাগত বায়ুচালিত টারবাইন দ্বারা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে নতুন বায়ুশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ গোটা দুনিয়ায় যুক্ত হয় ৫০ গিগাওয়াট।[১] ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাতাসের টারবাইনগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা মোট ৬ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস ছিল।[২] ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা বিশ ভাগ বিদ্যুৎ বায়ুশক্তি থেকে উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইইআরই (Energy’s Office of Energy Efficiency and Renewable Energy)।[৩]

এর আগে ২০১২ সালে বিশ্বের বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে রেকর্ড ৪৪ দশমিক ৭ গিগাওয়াট প্রায়। এতে ২০১২ সাল পর্যন্ত বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ফলে তা হয়েছে ২৮২ গিগাওয়াটের কিছু বেশি। ২০১২ সালে সেই তথ্য জানিয়েছিল গ্লোবাল ওয়াইন্ড এনার্জি কাউন্সিল বা জিডব্লিউইসি।

সংস্থাটি জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কর সুবিধা দেয়ায় বায়ু বিদ্যুতে সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ১৩ গিগাওয়াটের বেশি। দেশটি উল্লিখিত বছরে পার করেছে রেকর্ড বছর। তবে ২০১২ সালে চীনে প্রায় শ্লথ ছিল ওয়াইন্ড টারবাইন নির্মাণ। জিডব্লিউইসির সেক্রেটারি জেনারেল স্টিভ সোয়ার জানান, চীন এক্ষেত্রে কিছুটা শ্লথ হলেও ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজার। তিনি আরও বলেন, এশিয়া এখনও নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্ববাজারে। আর উত্তর আমেরিকা রয়েছে এর কাছাকাছি। খুব বেশি দূরে বা ফারাকে নয় ইউরোপও।

২০১২ সালে চীনের প্রায় ১৩ দশমিক ২ গিগাওয়াট বাড়ে বায়ুশক্তির সক্ষমতা। সেখানে বৃহৎ দেশ ভারতের যোগ হয় প্রায় ২ দশমিক ৩ গিগাওয়াট। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৮৩ দশমিক ৫ গিগাওয়াটের মধ্েয স্থাপন সক্ষমতার দিক বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও শীর্ষে আছে প্রায় ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ে। চীন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ স্থাপন সক্ষমতা নিয়ে। ২১ দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। অবশ্য উপকূলীয় বায়ু বিদ্যুতের দিক থেকে ইউরোপ শীর্ষে রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ে।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের বন্যপ্রাণ বা জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতা

এদিকে সেই সময়ের অন্যান্য গবেষণা এবং প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বায়ু বিদ্যুতেই চলতে পারে সারাবিশ্ব। অর্থাৎ সারাবিশ্বের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বায়ুশক্তি বা ওয়াইন্ড পাওয়ারই যথেষ্ট। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, এজন্য অবকাঠামো খাতে যে বিপুল বিনিয়োগের দরকার হবে, তা বাস্তবসম্মত নয় মোটেই। এদিকে সারাবিশ্বে চলছে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিকল্প জ্বালানির ভালো উৎস হল সৌর ও বায়ুশক্তি। এসবের ব্যবহার বাড়াতে গবেষণা ও অবকাঠামো খাতে করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ।

একটি সূত্রে বলা হয়েছে, বায়ুশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব শত শত টেরাওয়াট। যা দিয়ে সহজে মেটানো সম্ভব সারাবিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদা। যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মার্ক জ্যাকবসন (নতুন গবেষণার লেখক) জানিয়েছেন, সারাবিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন হবে বড় আকারের প্রায় দেড়শ’ কোটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে মাত্র প্রায় ২৫০ গিগাওয়াট। অতএব মোটেই বাস্তবসম্মত নয় বায়ুশক্তির মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের বিষয়টি। তবে তা পূরণ করতে পারে মোট চাহিদার একটা বড় অংশ। বায়ু বিদ্যুতেই চলতে গেলে এ খাতে যে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন তা অনেক দেশেরই নেই। অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলো এ সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে পারে। তাহলেও বিদ্যুতের ওপর চাপ কমবে। এর প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

জ্যাকবসন অবশ্য বলেছেন, পাঁচ মেগাওয়াটের ৪০ লাখ টারবাইন স্থাপন করা সম্ভব হলে তা থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, তাতে ২০৩০ সালে পূরণ হবে সারাবিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় অধর্কে বা ৫০ শতাংশ। পাঁচ মেগাওয়াটের টারবাইন বেশ ক্ষমতাসম্পন্নও, যা সচরাচর স্থাপন করা হয় না। বিশ্লেষকরা অসম্ভব বললেও জ্যাকবসন বলেছেন, এটা অসম্ভব নয় মোটেই। এ প্রসঙ্গে জ্যাকবসনের যুক্তি হল, প্রতিবছর বিশ্বে গাড়ি তৈরি হচ্ছে প্রায় আট কোটি। সেখানে বায়ুশক্তির সাহায্যে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বা পূরণে আমাদের স্থাপন করতে হবে ৪০ লাখ টারবাইন। তা হতে হবে ৩০ বছর অন্তর। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকলে তা আরও অল্প সময়ে স্থাপন করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:  তেজস্ক্রিয় বা পরমাণু বর্জ্য মানবসহ সকল প্রাণ বৈচিত্র্যের জন্য অভিশাপ

ক্রমেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে চলেছে নানা উৎস থেকে নির্গত কার্বন গ্যাস। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী গাড়ির ধোঁয়া ও কলকারখানা। অথচ কলকারখানা ও গাড়ি ছাড়া আধুনিক নাগরিক জীবনের কথা ভাবাই যায় না। তাই প্রকৌশলীরা অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরিতে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তারা গাড়ির জ্বালানিরূপে ব্যবহার করতে চান বায়ুকে। তবে তা হল তরল বায়ু। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাতাসকে (স্বাভাবিক) মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরল করে সেটাকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা আরও বলেছেন, এখানে কাজে লাগানো যেতে পারে মূলত তরলীকৃত নাইট্রোজেনের ধারণাটিকেই। আমরা যে বাতাসে নিঃশ্বাস নিই বা গ্রহণ করি, তার প্রায় ৭৮ শতাংশই হচ্ছে নাইট্রোজেন গ্যাস। একটা ফ্লাস্ক (ভ্যাকুয়াম) এক লিটার তরল নাইট্রোজেন (আঠালো ও নীল রঙের) মানে হচ্ছে প্রায় ৭০০ লিটার স্বাভাবিক বায়ু। অর্থাৎ ফ্লাস্ক থেকে এটিকে বের করে দিলে খুব অল্প সময়েই প্রায় ৭০০ গুণ ছড়িয়ে গিয়ে মিশে যাবে পৃথিবীর বাতাসে। তাতে কোনো রকম বায়ু দূষণও ঘটবে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং তরল বায়ুকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সেই গাড়ির ধোঁয়া দূষিত করবে না বাতাসকে। নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল করে তা গাড়ির জ্বালানি হিসেবে পোড়ানোর ঘটনাটি ঘটেছে গত শতাব্দীর প্রায় শুরুতে। ওই সময়ে তৈরি করা গাড়িটি মোট ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল প্রায় ১৫ গ্যালন তরল বায়ু ব্যবহারের মাধ্যমে। তবে তখন সেই গাড়ির বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেনি। কারণ তরল বায়ু উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা, এটিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ইঞ্জিন তৈরি ইত্যাদি ছিল খুবই জটিলতার। তারপরও মানুষের প্রচেষ্টার কমতি নেই। এ নিয়ে আরও গবেষণা চালাতে থাকেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে গত ২০১৩ সালের মে মাসে বিশেষজ্ঞরা তরল বায়ুর ব্যবহার সম্পকর্তি তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং সম্মেলনে।

আরো পড়ুন:  বাংলাদেশের মহাবিপন্ন কচ্ছপ, কাইট্টা ও কাছিম এবং বন বিভাগের উদ্ধার কার্যক্রম

তথ্যসূত্র:

১. গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি, কাউন্সিল, “Market Forecast for 2017-2021″. report. GWEC. Retrieved 27 May 2016.]  

২. ১৬ মে, ২০১৭, ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, https://www.eia.gov, লিংক, https://www.eia.gov/energyexplained/index.cfm?page=wind_electricity_generation]

৩. সংগ্রহ, ২ জানুয়ারি, ২০১৮, সংস্থা https://energy.gov/, লিংক https://energy.gov/eere/about-office-energy-efficiency-and-renewable-energy]

৪. মো. আবদুস সালিম, দৈনিক যুগান্তর, ১৪ জুলাই, ২০১৩, পৃষ্ঠা নং ১৩। খবরটির লিংক হচ্ছে http://jugantor.us/details_news.php?id=94513&&%20page_id=%20114

Leave a Comment

error: Content is protected !!