শিক্ষা হচ্ছে শেখার সুবিধার্থে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং অভ্যাস অর্জনের প্রক্রিয়া

শিক্ষা (ইংরেজি: Education) হচ্ছে শেখার সুবিধার্থে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং অভ্যাস অর্জনের প্রক্রিয়া। শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলির মধ্যে গল্প বলা, আলোচনা, শেখানো, প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশিত গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষা প্রায়শই প্রশিক্ষকদের সহায়তায় পরিচালিত হয়, তবে শিক্ষার্থীরাও নিজেরাই শিক্ষিত হতে পারে। ব্যক্তির স্বকীয়তার সর্বতােমুখী বিকাশ হচ্ছে শিক্ষা।

শিক্ষা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এমন যে কোনও অভিজ্ঞতা যার দ্বারা চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, বা ক্রিয়াকলাপের উপর গাঠনিক প্রভাব পড়ে এমন কিছুকে শিক্ষাগত হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। শিক্ষাদানের পদ্ধতিটিকে বলা হয় শিক্ষাবিজ্ঞান। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত প্রাক-স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তারপরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষানবিশকাল হিসাবে এই ধরণের আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়।

শিক্ষার অধিকারকে কিছু সরকার এবং জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। বেশিরভাগ অঞ্চলে, নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা বাধ্যতামূলক। শিক্ষার সংস্কারের জন্য এবং বিশেষত প্রমাণ-ভিত্তিক শিক্ষার জন্য একটি আন্দোলন রয়েছে।

সােভিয়েত সরকারের শিক্ষাব্যবস্থা

সােভিয়েত সরকার প্রতিষ্ঠার গােড়ার দিকের সেই দুঃসময়ের অতি কঠিন পরিস্থিতিতে একটি নতুন শিক্ষাপ্রণালীর ভিত্তিস্থাপন সহ সােভিয়েত স্কুল গঠনের তত্ত্বীয় ও প্রায়ােগিক মূলনীতি উদ্ভাবন করা হয় এবং সেই কাজের নেতৃত্ব দেন আনাতোলি লুনাচারস্কি। লেনিনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লুনাচারস্কি সমন্বিত, পলিটেকনিকাল শ্রম-স্কুলের নীতিগুলি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন এবং তাঁরই উদ্যোগে প্রাক স্কুল শিক্ষার এক ব্যাপক প্রণালী, পেশাভিত্তিক ও উচ্চতর শিক্ষা এবং সাধারণ সংস্কৃতি ও শিক্ষালগ্ন নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। 

মার্কসবাদ-লেনিনবাদে মূলীভূত থাকা এবং শিক্ষা-সমস্যাকে সামাজিক, রাজনৈতিকঅর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট করার মধ্যেই লুনাচারস্কির শিক্ষানীতিগুলির শক্তি ও প্রত্যয়ের উৎস নিহিত ছিল। তাঁর প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী স্কুলব্যবস্থা সংগঠনের নিবিড় বৈজ্ঞানিক, মার্কসীয় ধরনকে প্রয়োগ ও সত্যায়ন করে, শিক্ষার লক্ষ্যকে, শিক্ষণের আধেয় ও প্রণালীর চাহিদাকে চিহ্নিত করে। স্কুল ও জীবনের সম্পর্ক, ব্যষ্টি ও সমষ্টির সম্পর্ক, ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক ইত্যাকার গুরুত্বপর্ণ শিক্ষাসমস্যা সমাধানে লুনাচারস্কির অবদান উল্লেখযােগ্য। ব্যক্তির স্বকীয়তার সর্বতােমুখী বিকাশকেই লুনাচারস্কি শিক্ষার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত এবং শিক্ষার মূল লক্ষ্য ভাবতেন।

আরো পড়ুন:  জীবন জীবিত বস্তুগুলোর ভেতরে প্রতিক্রিয়া, বৃদ্ধি, বিপাক, শক্তির রূপান্তর এবং প্রজনন

লুনাচারস্কি মনে করতেন যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিই চরম মূল্যবান সত্তা। তাঁর ভাষায় ‘আমরা চাই একজন মানুষকে এই শিক্ষা দিতে, যে মানসিক ও আত্মিক দিক থেকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম সমন্বয়ে উত্তীর্ণ হবে, সে যথাসম্ভব পূর্ণ শিক্ষা পাবে; যে কোন একটি ক্ষেত্রে সহজেই অত্যুচ্চি দক্ষতা লাভ করতে পারবে। এমন এক ধরনের মানুষ তৈরিও আমাদের লক্ষ্য, যে হবে সহনাগরিকদের সত্যিকার সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, অন্য সকল মানুষের জন্য একজন কমরেড আর সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শের জন্য সংগ্রাম চলাকালে একজন যােদ্ধা তৈরিই আমাদের উদ্দিষ্ট।'[১]

তথ্যসূত্র:

১. মিখাইল প্রকোফিয়েভ, আনাতোলি লুনাচারস্কি নির্বাচিত প্রবন্ধ ও বক্তৃতা সংকলন, প্রগতি প্রকাশন মস্কো, ১৯৮৬ পৃষ্ঠা ৫-৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!