বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণ (ইংরেজি: Analysis and Synthesis) উভয় শব্দ মানুষের মানসিক কিংবা দৈহিক একটি বিশেষ ক্রিয়ার কথা বুঝায়। বিশ্লেষণ বলতে একটি সমগ্রকে তার অন্তর্ভুক্ত অংশসমূহে বিভক্তকরণ এবং সংশ্লেষণ বলতে অংশসমূহের সম্মেলনের মাধ্যমে সমগ্র পুনর্গঠনকে বুঝায়। জ্ঞানের ক্ষেত্রে আদিকাল থেকে মানুষ এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে এসেছে। উভয় পদ্ধতি কোনো বিষয়ের যথার্থ জ্ঞান লাভের জন্য অপরিহার্য।
বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমেই মানুষ এই সত্যে উপনীত হয়েছে যে,বস্তুজগতের কোনো বস্তুই একক নয়। এর প্রত্যকেটি এক একটি জটিল সত্তা। এ কারণে কোনো বস্তু বা সমস্যার যথার্থ জ্ঞান বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে যথাযথভাবে লাভ করা চলে না। পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য বিশ্লেষণের পরিপূরক পদ্ধতি হচ্ছে সংশ্লেষণ। বিবেচ্য বিষয় বা বস্তুকে বিশ্লেষণ করে যেমন তার অন্তর্ভূক্ত অংশসমূহকে স্পষ্টতররূপে বুঝতে হবে, তেমনি অংশসমূহকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের পারস্পারিক নির্ভরতার এ সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল বস্তুটির সামগ্রিক রূপটিও উপলব্ধি করতে হবে। বিশ্লেষণ ব্যতীত সংশ্লেষণ সম্ভব নয়। আবার সংশ্লেষণ ব্যতীত বিশ্লেষণ সামগ্রিক জ্ঞানদানে অক্ষম।
বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণ উভয় পদ্ধতি দ্বান্দ্বিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ উক্ত পদ্ধতি দুইটির পারস্পারিক নির্ভরতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এই দর্শনের মতে ভাববাদী দর্শনে বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের পারস্পারিক নির্ভরতাকে উপেক্ষা করা হয়। ভাববাদী দর্শনের বিশ্লেষণকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ্ধতি বলে মনে করা হয়।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাষা, যুক্তি, রসায়ন বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানে বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি প্রযুক্তি হচ্ছে। ইংরেজ দার্শনিক জি.ই. মূর এবং বার্ট্রাণ্ড রাসেল তাঁদের রচনাবলীতে বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতির লজিকাল এ্যাটোমিজম বা ‘যৌক্তিক অণুবাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে কেবল পদার্থ নয়, বিশ্বের সামাজিক, মানবিক, রাষ্ট্রনৈতিক যে-কোনো অস্তিত্বই মৌলিক এবং জটিলতাহীন কতকগুলি সত্তা দ্বারা গঠিত। তাঁর মতে দার্শনিকের কর্তব্য হচ্ছে যা-কিছু জটিল তাকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার অন্তর্ভূক্ত সহজ সত্তা প্রকাশ করা।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।