জনতা (ইংরেজি: Masses বা Crowd) হচ্ছে জনগণের একটি বড় গোষ্ঠী যারা একত্রিত হয় বা একত্রে বিবেচিত হয়। জনতা হতে পারে কতিপয় আবেগ বা একটি সাধারণ উদ্দেশ্যের মধ্য দিয়ে সংজ্ঞায়িত, যেমন কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ, কোনও ক্রীড়া অনুষ্ঠান, বা লুটপাটের সময়, বা কেবল ব্যস্ত অঞ্চলে অনেক মানুষের তৈরিকৃত রূপ যারা তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে যাচ্ছে। “জনতা” শব্দটি কখনও কখনও সাধারণভাবে লোকেদের নিম্নমানের শৃঙ্খলাকে বোঝায়।
জনগণ শব্দটির সমার্থক জনতা শব্দটিকে অনেক সময় ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি mob (বাংলা: উন্মত্ত জনসাধারণ) কথাটির প্রতিশব্দ হিসেবে জনতা শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। সেই নিরিখে জনতা হলো এমন এক জনসমষ্টি যারা চিন্তাভাবনার পরিবর্তে, সাময়িক উত্তেজনার বশে উচ্ছৃঙ্খল এবং অনেক সময় হিংসাত্মক আচরণে লিপ্ত হয়।
স্পেনীয় দার্শনিক জে অরটেগা গ্যাসেট প্রত্যক্ষ করেন যে নবােদ্ভূত এই জনসমষ্টির প্রবণতা হলো অসংযত ও নাশকতাপূর্ণ এবং মনােভাবে তারা সনাতন মূল্যবােধ ও সামাজিক সুস্থিতির প্রতি উদাসীন। তাঁর মতে এই হাবভাব ও আচরণের পিছনে রাজনৈতিক সংগঠনের প্রশ্রয় থাকে। বিশ্লেষণসূত্রে একথাও তিনি বলেন যে এটা হলো আধুনিক এক গণতন্ত্র যেখানে সবাই চায় মেধা ও যোগ্যতা নির্বিশেষে সমান পদমর্যাদা। ফরাসি বিপ্লবে জনতাই ছিল প্রাধিকারের একমাত্র উৎস। মার্কসীয় দৃষ্টিতেও প্রগতি ও ঐতিহাসিক শক্তি সমুচ্চয়ের চালিকা শক্তি হলো জনতা। কার্যক্ষেত্রে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে জনতার এই ভূমিকা স্বীকৃতি না পেলেও মাও সেতুং যাবতীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিবর্তনের সময়ে জনতাকে যুক্ত করার পক্ষপাতী ছিলেন।
দ্রষ্টব্য: ছন্নছাড়া সর্বহারা
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১০-১১১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।