জাতিদম্ভবাদ অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক জাত্যাভিমানী প্রতিক্রিয়াশীল মতধারা

জাতিদম্ভবাদ (ইংরেজি: National Chauvinism) হচ্ছে এমন একটি মতধারা যা অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক, জাত্যাভিমানী এবং অন্য জাতি, অন্য দেশ ও অন্য দলের প্রতি চরম অসহিষ্ণু। দাম্ভিকতাবাদ (ইংরেজি: Chauvinism) হচ্ছে বুর্জোয়া চিন্তাধারা। এর দুটি রূপ হচ্ছে জাতিদম্ভবাদ ও লিঙ্গদম্ভবাদ। জাতিদম্ভবাদ হচ্ছে জাতীয়তাবাদের চরম প্রতিক্রিয়াশীল রূপ। জাতিদম্ভের রাজনীতির লক্ষ্য অন্য জাতি ও জনগণের প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা সৃষ্টি। জাতিদম্ভবাদ একটি জাতির জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে, যেন সেই জাতিটি অন্যান্য ‘নিকৃষ্ট’ জাতি ও বর্ণের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।[১] এটি এক ফরাসি শব্দ যা নেপোলিয়নের যুদ্ধে অনেক অতিমানবিক কৃতিত্বের স্বীকৃতিরূপে সেনা নিকোলাস শভিনের (Nicolas Chauvin) নাম থেকে নামাঙ্কিত (eponym) ও আরোপিত।[২]

জাতিদম্ভকে অন্যভাবে বলা যেতে পারে জাতীয়তাবাদের একটি রূপ এবং বৃহতশক্তিসুলভ অভিব্যক্তি। সমাজে যাদের কর্তৃত্বশীল বা ক্ষমতাশীল ভূমিকা ও অবস্থান থাকে সেই প্রধান শোষক শ্রেণিসমূহ নিজ জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে ঘোষণা করে নিজেদের জাতিদাম্ভিকতাবাদি হিসেবে প্রকাশ ঘটায়।[৩]

অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে ব্যুৎপত্তিগত ও প্রাথমিক অর্থে জাতিদম্ভবাদ বলতে বলা হয়েছে অতিরঞ্জিত, যুদ্ধপ্রিয় দেশপ্রেমবাদ এবং এমন একটি যুদ্ধরত বিশ্বাস যা জাতীয় শ্রেষ্ঠত্ব ও জাতীয় মহিমায় আস্থাশীল।[৪]   কেম্ব্রিজ  অভিধানে বলা হয়েছে জাতিদম্ভবাদ এমন এক শক্তিশালী ও অযৌক্তিক বিশ্বাস যা নিজ দেশ বা গোষ্ঠিকে মহত্তম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে।[৫]

রাজনৈতিক তাত্ত্বিক হান্না আরেন্ড (১৪ অক্টোবর ১৯০৬ – ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৫) ১৯৪৫ সালে বর্ণনা করেন,    

“জাতিদম্ভবাদ হচ্ছে জাতীয় চিন্তাধারার প্রায় স্বাভাবিক উৎপাদন। যতদূর বলা যায় এটি পুরনো ধারনা ‘জাতীয় লক্ষ্য’ (national mission) থেকে প্রত্যক্ষভাবে উৎসারিত। … [একটি] জাতির লক্ষ্য যথার্থভাবে হতে পারে তার আলোকে অন্যের কাছে ব্যাখ্যা করা; কম ভাগ্যবান জনগণ, যে কারণেই হোক, একটি জাতীয় লক্ষ্য ব্যতিরেকে ইতিহাসে অলৌকিকভাবে পরিত্যক্ত হতে পারে। যদি না এই ধারণা জাতিদম্ভবাদ মতাদর্শে বিকাশ লাভ করে এবং জাতীয় বা এমনকি জাতীয়তাবাদী গর্বের ভেতরের অস্পষ্ট রাজ্যে না থাকে, এটি পশ্চাৎপদ জনগণের মঙ্গলের জন্য দায়িত্বশীলতার উন্নত বোধে পৌনঃপুনিকভাবে ফল দেয়।”[৬]

বিস্তৃত অর্থে, জাতিদম্ভবাদ অন্তর্ভুক্ত করেছে কোনো এক পক্ষের ভেতর অবস্থানকারী ব্যক্তির এক উগ্র ও অযৌক্তিক অন্ধদলবাজিতা বা partisanship, বিশেষভাবে অন্ধদলবাজিতা যখন শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণাকে আঁকড়ে ধরে। অতিস্বদেশিকতাবাদ বা Jingoism হচ্ছে জাতিদম্ভবাদের সমান্তরাল ব্রিটিশ শব্দ।[৭] 

আরো পড়ুন:  আত্ম-নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে

তথ্যসূত্র ও টীকাঃ

১. দেখুন, সোফিয়া খোলোদ; হোয়াট ইজ হোয়াট, এ কনসাইজ ডিকশনারি অফ সোশ্যাল এন্ড পলিটিক্যাল টার্মস
২. “Chauvinism”, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, url: https://www.britannica.com/topic/chauvinism.
৩. দেখুন, সোফিয়া খোলোদ; পূর্বোক্ত।
৪. “Chauvinism”. The Oxford English Dictionary.
৫. “Chauvinism”. The Cambridge English Dictionary. url: https://dictionary.cambridge.org/dictionary/english/chauvinism
৬.  Arendt, Hannah (October 1945). “Imperialism, Nationalism, Chauvinism”. The Review of Politics 7 (4): 457.
৭. Mignon Fogarty, “15 Words You Didn’t Realize Were Named After People”. September 11, 2014, url: https://www.quickanddirtytips.com/education/grammar/15-words-you-didnt-realize-were-named-after-people.

ছবির ইতিহাস: ইউক্রেনের ওদেসায় রুশ ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে প্রচারিত একটি পোস্টার।

রচনাকাল: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

Leave a Comment

error: Content is protected !!