গোষ্ঠীতন্ত্র (ইংরেজি: Oligarchy) হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক লোকের ক্ষমতা বা মুষ্টিমেয় ব্যক্তির দ্বারা শাসন।[১] গোষ্ঠীতন্ত্র হচ্ছে শোষণমূলক রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম রূপ। গোষ্ঠিতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে মুষ্টিমেয় ধনিদের হাতে কেন্দ্রিভুত থাকে। ধনকুবের গোষ্ঠীতন্ত্র সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্র যন্ত্রকে বশ করে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করে, দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করে।[২]
উৎপত্তির দিক দিয়ে গোষ্ঠিতন্ত্র গ্রিক শব্দ ὀλιγαρχία (অলিগারখিয়া/ oligarkhía) থেকে এসেছে যেটি ὀλίγος (অলিগস/olígos) থেকে জাত এবং এর অর্থ কতিপয়/”few” এবং ἄρχω (আর্কো/archo) শব্দের অর্থ শাসন করা বা নির্দেশ করা। এরিস্টটল অভিজাততন্ত্রের সঙ্গে গোষ্ঠীতন্ত্র প্রত্যয়টির পার্থক্য নিরূপণ করেছেন যে সর্বোত্তম দ্বারা শাসিত অভিজাততন্ত্র সবাইকার স্বার্থ রক্ষা করে, সেদিক থেকে গােষ্ঠীতন্ত্রের মুষ্টিমেয় ব্যক্তির কাছে নিজেদের স্বার্থই বড়।
গোষ্ঠিতন্ত্র এমন ধরণের ক্ষমতা কাঠামোকে বোঝায় যাতে ক্ষমতা মাত্র কতিপয় ব্যক্তির হাতে অল্পবিস্তর আবদ্ধ থাকে, তাতে অন্য কারও স্বার্থ রক্ষিত হয়, কারও হয় না। এই ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে পারে রাজকীয়তা, সম্পত্তি, পারিবারিক বন্ধন, শিক্ষা, কর্পোরেট বা সামরিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে। সাধারণভাবে ক্ষমতা গােষ্ঠীতন্ত্রে আইন ও কর্তৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও গােষ্ঠীভুক্ত লােকেরা যােগসাজস করে ক্ষমতাকে নিজেদের মধ্যে ইচ্ছামত ব্যবহার করে। গোষ্ঠিতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রায়ই শাসিত হয় কতিপয় বিশিষ্ট পরিবারের দ্বারা যারা তাদের প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম রেখে যায়।
কাজেই একথা বলা যায় যে রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র নির্বিশেষে সরকারের উপর গােষ্ঠীতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সেজন্য যাচাই করে দেখা ভাল যে কী রীতিনীতির ভিত্তিতে গােষ্ঠীতন্ত্রভুক্ত ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছে এবং তাদের ক্ষমতার পরিধি কতটা। নির্বাচনে হটিয়ে দেওয়া ছাড়া গােষ্ঠীতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা সাধারণ লােকের পক্ষে কতদূর সম্ভব তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সেটা গণতন্ত্রে কষ্টসাধ্য নয়। তবে প্রভাব খাটিয়েও লােকে গােষ্ঠীতন্ত্রের মতিগতি বদলাতে পারে বলে কোনও কোনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন।[১]
ঐতিহাসিক কাল থেকেই গোষ্ঠিতন্ত্রসমূহ হয়ে এসেছে স্বৈরাচারী এবং এটি নির্ভর করে জনতার দাসত্বের বা নম্রতার উপরে। এরিস্টটল প্রথম এই শব্দটিকে ব্যবহার করেছিলেন ধনিদের শাসনের অর্থে। আধুনিককালে গোষ্ঠিতন্ত্র বলতে সামরিক, সাম্রাজ্যবাদি, বা পরিবারতান্ত্রিক শাসনকে বোঝানো হয়।
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১০২।
২. সোফিয়া খোলদ, সমাজবিদ্যার সংক্ষিপ্ত শব্দকোষ, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৯০, পৃষ্ঠা ৪৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।